বিজ্ঞান সম্মত কোন ধরনের প্রক্রিয়া ছাড়াই মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দিয়ে আলোচিত ও সমালোচিত ছিলেন লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনার পল্লী চিকিৎসক আলতাবুর রহমান বাদশা। সেই বাদশা ডাক্তারের চেম্বার ও গবেষণা কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে লালমনিরহাট স্বাস্থ্য বিভাগ। আর ভুল স্বীকার করে অঙ্গিকার নামা দিয়ে রেহাই পেয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে পল্লী চিকিৎসক আলতাবুর রহমান বাদশার বাড়িতে গড়ে ওঠা চেম্বার ও গবেষণা কার্যালয় পরিদর্শন শেষে তা বন্ধ করে দেন লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মলেন্দু রায়। এ সময় কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার রায় অজয় উপস্থিত ছিলেন। বাদশা ডাক্তারকে গ্রেফতার না করে শুধু মুচলেকায় ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
২০২১ সালের ৪ নভেম্বর কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদের পাশে বাদশার বাড়িতে গড়ে ওঠা চেম্বার ও গবেষণা কার্যালয় পরিদর্শন করে তার চিকিৎসা দেওয়া ওষুধসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। পরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে চিকিৎসা দেয়ার নমুনা নিয়ে ঢাকায় ল্যাবে পাঠানো হয়। তদন্ত শেষে বছর খানেক পর কর্তৃপক্ষ জানায় সম্পূর্ণ ভুল উপায়ে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন হেমিও চিকিৎসক বাদশা। তার কাছে ২০০৯ সালের পল্লী চিকিৎসকের একটি কাগজ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তিনি স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে ক্যানসার চিকিৎসা দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদের পাশে পল্লী চিকিৎসক আলতাবুর রহমান বাদশা গড়ে তোলেন চেম্বার ও গবেষণা কার্যালয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কিছু ভিডিও দেখে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শুরু করে। রোগীদের মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের ভুল চিকিৎসা দিয়ে তিনি জন প্রতি ফি ৫হাজার টাকার ও বেশী নিতেন আর ওষুধ হিসেবে ৩টি ফাইল দিতেন। সম্প্রতি কাকিনা বাজারের ডক্টর সাহেদ আলী ক্যান্সারে মারা যান। সেই রোগী পল্লী চিকিৎসক আলতাবুর রহমান বাদশার কাছে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। টাকা দিয়ে মাত্র তিন বোতল পানি দিয়েছিলেন বাদশা। এদিকে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে ভুয়া চিকিৎসক আলতাবুর রহমান বাদশার চেম্বার ও গবেষণা কার্যালয়ে যান লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মলেন্দু রায়। বাড়িতে চিকিৎসা দেওয়ার কারণে তার প্রতিষ্ঠান সিলগালা না করে বন্ধ করে দেন।
ক্যান্সারের চিকিৎসা নিয়ে কথা বলতে চাইলে পল্লী চিকিৎসক বাদশা মিয়া প্রশাসনের অজুহাত দিয়ে সাংবাদিকের সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না জানিয়ে বলেন, চিকিৎসা দিয়েছি, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
কালীগঞ্জ উপজেলার ৮নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাহির তাহু সাংবাদিকদের বলেন, আমি নিজেও জানতাম তিনি পল্লী চিকিৎসক। লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মলেন্দু রায়ের সঙ্গে গিয়ে জানতে পেরেছি, তিনি ক্যান্সারের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। তাই প্রসাশন বন্ধ করে দিয়েছেন।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মলেন্দু রায় সাংবাদিকদের বলেন, শুধুমাত্র পানি দিয়েই চিকিৎসা করে আসছিলেন তিনি। বিষয়টি জানার পরই আমরা তদন্ত করি। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার কাছে অঙ্গীকার নামা নেয়া হয়েছে। তিনি যদি আবার চিকিৎসা চালু করেন, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.