এক সময়ের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। লালমনিরহাট জেলায় আজ তা বিলুপ্তির পথে। নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটছে। পক্ষান্তরে হারিয়ে যাচ্ছে অতীতের এই সব চির চেনা ঐতিহ্য।
গরুর গাড়ির ইতিহাস সু-প্রাচীন। খ্রিষ্টজন্মের ১৫ থেকে ১৬শত বছর আগে সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল। যা সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। গ্রাম বাংলায় এ ঐতিহ্য আজ তা বিলুপ্তির পথে।
এক সময় দেশের উত্তরাঞ্চলের পল্লী এলাকার বাহন ছিল গরুর গাড়ি। বিশেষ করে এই রংপুর জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ পরিবহনের বাহন ছিল গরুর গাড়ি। যুগের পরিবর্তনে এই বাহনটি হারিয়ে যাচ্ছে।
মাঝে মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরুর গাড়ি চোঁখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। সে কারণে শহরের ছেলে-মেয়েরা তো দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও গরুর গাড়ি শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়। তাই তো লালমনিরহাটে শেখ রাসেল শিশু পার্কে গরুর গাড়ি ভাস্কর্য হয়ে ঐতিহ্যকে জানান দিচ্ছে।
প্রায় দুই যুগ আগেও গরুর গাড়িতে চড়ে বর-বধূ যেত। গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ের কল্পনাও করা যেত না। বিয়ে বাড়ি বা মালামাল পরিবহনে গরুর গাড়ি ছিল একমাত্র পরিবহন। গরুর গাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। আর সেই চালককে উদ্দেশ্য করে রচিত হয়েছে- ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ কিংবা ‘আস্তে বোলাও গাড়ি, আরেক নজর দেখিয়া ন্যাং মুই দয়ার বাপের বাড়িরে গাড়িয়াল’ এ রকম যুগান্তকারী সেই সব ভাওয়াইয়া গান।
তবে বর্তমানে নানা ধরনের মোটরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যানটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। তাই এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এখন মানুষ বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি ব্যবহার করছে। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটর গাড়ি, রেল গাড়ি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, রিক্সা, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন।
ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না গরুর গাড়ি। অথচ গরুর গাড়ির একটি সুবিধা হলো, এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। এটি পরিবেশ বান্ধব একটি যানবাহন। আবার ধীর গতির কারণে এতে তেমন কোনো দুর্ঘটনারও আশংকা থাকে না। অথচ যুগের পরিবর্তনে আমাদের প্রিয় এই গরুর গাড়ি প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গর্ভে।
কবি ও সাহিত্যিক হেলাল হোসেন কবির ও মাসুদ রানা রাশেদ বলেন, আমাদের অতীত ঐতিহ্যের অংশ গরুর গাড়ি। যা আজ বিলুপ্তির পথে। এ ঐতিহ্য কিছুটা গ্রামাঞ্চলের মানুষ ধরে রেখেছে।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2025 আলোর মনি. All rights reserved.