লালমনিরহাটে লুটেরা-অর্থ আত্মসাৎকারী-ঘুষখোর-ঔষধখোর-গাছ খেকো-আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তৌফিকের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (২৪ জুলাই) সকাল ১০টা ৩০মিনিটে লালমনিরহাটের ৫০শয্যা বিশিষ্ট আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেট চত্ত্বরে হাসপাতাল সেবা থেকে বঞ্চিত আদিতমারী উপজেলার সাধারণ জনগণের উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে আদিতমারী উপজেলার সাধারণ জনগণ লিখিত বক্তব্যে বলেন, আদিতমারী উপজেলা’র স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তৌফিক আহমেদ, কোড নং-১৩৩৬১২। উক্ত কর্মকর্তার সীমাহীন দূর্নীতি ও কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার গালাগালি ও অসৌজন্যমূলক আচরণ এমন এক পর্যায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, যেকোন সময় আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে। তার দূর্নীতি এবং অশোভন আচরনের কারণে এলাকাবাসী, সাধারন জনগণ ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ডাক্তার সাহেব তার অফিসকে নিজের প্রাইভেট ফার্ম মনে করে অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। ফলে অফিস স্টাফদের মাঝেও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে থাকে। আমরা প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে প্রায়ই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে উক্ত ডাক্তারের হট্টগোল বেধেই থাকে।
সমগ্র বাংলাদেশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর অফিস শনিবার হতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত খোলা থাকলেও তিনি তা মানেন না । তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে প্রতি শনিবার অফিস বন্ধ রাখেন।
সিবিএইচসি হতে ২০২১-২০২২ আর্থিক বৎসরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ৭লক্ষ ৫৪হাজার টাকা পিট নির্মাণের জন্য বরাদ্দ প্রদান করে স্থানীয় কোটেশনের মাধ্যমে তাহা নির্মাণের আদেশ প্রদান করেন। উক্ত আদেশ অমান্য করে তিনি বিনা কোটেশনে তার বাল্য বন্ধু যার বাড়ী রংপুর জেলার গংগাচড়ায় তার মাধ্যমে নামমাত্র কোটেশনে পিট নির্মাণের কাজ করেন এবং কাজ শেষ হওয়ার অনেক আগেই উক্ত কোটেশনের বিল উত্তোলন করেন। যা তদন্ত করলে সত্যতা বেড়িয়ে আসবে।
করোনা টিকা প্রদানে টিকাদান কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের সম্মানী ভাতায় কোন ধরনের ভ্যাট ট্যাক্স না থাকলেও তিনি ১৫% টাকা কর্তন করে আত্মসাত করেন। তদন্তকালে তাহাও বেড়িয়ে আসবে।
জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল সপ্তাহে স্বেচ্ছাকর্মীদের ভ্যাট ট্যাক্স না থাকলেও তিনি ভ্যাট ট্যাক্সের কথা বলে ১৫% টাকা কর্তন করে আত্মসাত করেন।
জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের সরকারের একটি নির্দিষ্ট সময় দিয়ে সারা বাংলাদেশে তা একযোগে পালন করার নির্দেশ থাকলেও উনি তা না করে পরবর্তীতে উক্ত টাকা আত্মসাতের কৌশলে ইউএনও সাহেবের নিকট নামমাত্র রেজুলেশন করে পুষ্টি সপ্তাহের অর্থ উত্তোলন করে সাত দিনের কার্যক্রম একদিনে শেষ করেন এবং উক্ত টাকা দিয়ে নামমাত্র ত্রাণ বিতরণ করে অর্থ আত্মসাত করেন যা তদন্তকালে বেড়িয়ে আসবে।
তিনি গ্যারেজ নির্মানের কথা বলে, আদিতমারী হাসপাতালের ৩০টি বড় বড় মেহগনী গাছ বন বিভাগের অনুমতি ব্যতিরেকে কর্তন করেন। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।
ইতিপূর্বে তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন গাছের ডাল কর্তন করে আমাদের এলাকার লোকের কাছে নিলাম ছাড়াই বিক্রি করেন। যাহা সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিপন্থি।
২০২১-২০২২ আর্থিক বৎসরের করোনার অর্থ ৯লক্ষ টাকা গত ৩০ জুন ২০২২ উত্তোলন করেন। ভাউচার ব্যতিরেকে নিজে বিল প্রস্তুত করে বিল উত্তোলন করেন।
চলতি বছরে তিনি সিজি গ্রুপের বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত প্রশিক্ষণে প্রতি প্রশিক্ষণার্থীর জন্য স্টেশনারি বরাদ্দ ছিল। তিনি তা কখনোই প্রদান করেননি এমনকি প্রতি প্রশিক্ষনার্থী বাবদ বরাদ্দকৃত ১শত ৫০টাকার স্থলে মাত্র ৩০টাকা আপ্যায়ন বিল বাবদ প্রদান করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
তিনি ফিল্ড ভিজিট না করে লক্ষ লক্ষ টাকা ভ্রমন বিল উত্তোলন করেন। এবং জীপ গাড়ীর পেট্টোল বিল উত্তোলন করে অর্থ আত্মসাত করেন। উক্ত জীপ গাড়ীটি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। তিনি প্রতি বৃহস্পতিবার উক্ত গাড়ীটি করে রংপুরে যান এবং প্রতি রবিবার রংপুর হতে অফিস আসেন। এমনকি তাহার শশুর বাড়ী কুড়িগ্রামেও তার পরিবারকে উক্ত গাড়ী করে লিভ দেয়ার নজির আছে। এতে করে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। হাস,পাতালের বিভিন্ন খাতের প্রায় ১লক্ষ টাকা দিয়ে মেরামত করেন।
তিনি একটি জিপ গাড়ী করে প্রমোদ ভ্রমনে ঠাকুরগাঁও যাওয়ার কালে একজন পথচারী কে দূর্ঘটনার কবলে ফেলেন এবং পরবর্তীতে উক্ত পথচারী মৃত্যুবরণ করেন। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া গাড়ীটি হাসপাতালের বিভিন্ন খাতের প্রায় ১৪লক্ষ টাকা দিয়ে উক্ত গাড়ীটি মেরামত করেন।
তিনি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে সর্বদাই রুঢ় আচরণ করেন। তিনি হাসপাতালের অফিসকে একটা প্রাইভেট অফিস মনে করে কর্মচারীগনকে রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কর্মস্থলে থাকতে বাধ্য করেন। তিনি সর্বদাই সবাইকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন এবং চাকরী খেয়ে ফেলবেন এবং বদলির হুমকি প্রদান করেন। যাহা চাকরী বিধির পরিপন্থি। তার এই অসদাচরনের কারণে ৩৯তম বিসিএস এর প্রায় সকল চিকিৎসকগন বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে দেখেছি। যাহা তদন্তকালে সত্যতা বেড়িয়ে আসবে।
তিনি মূলত অত্র হাসপাতালটিকে উন্নতির কথা বলে এমন ভাবে দূর্নীতি করেন যাহা সাধারণ মানুষ বুঝতেও পারেন না। আমরা দেখেছি যে, বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকার ঘোষিত একটি ভেষজ বাগান থাকার কথা। আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও তা ছিল। তিনি যোগদানের পর উক্ত ভেষজ বাগানটি কি কারনে ভেঙ্গে ফেলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। অথচ সরকার উক্ত বাগানটি লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে নির্মাণ করেন।
রাষ্ট্রের সম্পদ এবং রাষ্ট্রের অর্থ রক্ষা করা আপনার আমার সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আসুন আমরা সকলে মিলে একযোগে এই লুটেরা, আত্মসাৎকারী, গাছখোর, ঘুষখোর, ঔষধখোর ডাক্তার তৌফিকের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই। তার অপসারণের দাবিতে আজকে আমরা আমাদের মূল্যবান সময় ও নিজ অর্থ অপচয় করে মানববন্ধনে রাস্তায় নেমেছি।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চিকিৎসা নিতে আসা কাজলী, বেলাল, বাইজিদুর রহমান আকাশ প্রমুখ। অলিউজ্জামান ওলি লিখিত বক্তব্য পাঠ করে মানববন্ধনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এ সময় আদিতমারী উপজেলার শত শত সাধারণ জনগণ মানবন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।