প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৭, ২০২৪, ৮:২৩ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ৬, ২০২২, ১১:০৪ এ.এম
আলোর মনি রিপোর্ট: প্রকৃতি আর পরিবেশ সংরক্ষনের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকার নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, সংরক্ষণ ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার ইতিমধ্যেই ব্লু-ইকোনমি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করলেও অসচেতনতা আর সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতাসহ নানাবিধ কারণে লালমনিরহাট জেলায় নেই তার সফল বাস্তবায়নের উদ্যোগ।
সরকারের বাস্তবায়ন পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে পরিবেশ দুষন মোকাবেলা করার উদ্যোগটিও অন্যতম। যা ব্যাহত হবার কারনগুলোর মধ্যে তামাক, তামাকের ডাটা ও এসব তামাক জাত দ্রব্য ক্রাসিং থেকে ছড়িয়ে ধুলি ঝরের মতোই বয়ে যাওয়া তামাক, তামাক ডাটা থেকে ছড়িয়ে মিহি গুড়া।
নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই স্থানীয় একশ্রেণির অসাধু অর্থলিপ্সু ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি মূলত তামাক ও তামাক ডাটা ক্রাসিং মিল স্থাপন করে নির্বঘ্নে চালিয়ে আসছে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য।
লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় গড়ে উঠা এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৫টি বলে জানা গেছে।
এসব বিভিন্ন স্থান থেকে তামাক, তামাকের ডাটা পরিবহন, লোড-আনলোড, গুদাম জাত করা, শুকানোও ক্রাসিং এর কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা সহস্রাধিক হবে এমনটি মনে করেন ভুক্তভোগী শ্রমিকেরা।
এদিকে তামাক ও তামাক ডাটার ক্রাস করা মিহি পাউডারের মতই গুড়া করে নেয়া উপাদনের সাথে অনেক সময় চুন ও ক্যামিক্যাল মিশিয়ে তা ভরাট করা হয় ছোট ছোট দুধরনের কৌটায়। এরপর ওই সব কৌটায় গুলের নাম ঠিকানা রেজিমেন্টের নম্বর লাগানো হয়।
পরে তা বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজার, গ্রামীণ জনপদের মুল সড়কের পার্শে চলমান বিভিন্ন দোকান ও মুদী দোকানগুলোতে বিক্রি করা হয়।পাইকারী দামে মূল্য কিছুটা কম হলেও দোকানীরা খুচরা বড় সাইজের এক কৌটা ১০টাকা আর ছোট কৌটা ৫টাকায় বিক্রি করেন।
এসব কাজের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন বয়সী শ্রমিকেরা বিশেষ করে তামাক ও তামাক ডাটা ক্রাসিং এর কাজ যারা করে তাদের নেই স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোন ব্যবস্থা। কাজ করার সময় ব্যবহার করেন না মুখ নাশিকা বন্ধনী কিংবা মাস্ক। ফলে তারা থাকেন শতভাগ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের মিয়া টারী বাজার সংলগ্ন রাস্তার পার্শে মানিক নামের ওই এলাকার প্রভাবশালী এক ব্যক্তি গড়ে তুলেছেন ক্রাসিং মিল। তামাক ও তামাক ডাটা ক্রাসিং এর কাজ চলে গোডাউন ও মিলের মুল ফটক বন্ধ করে। অনুমতি মিললে সেখানে অনুপ্রবেশের সৌভাগ্য জোটে কপালে।
মিলের শ্রমিক হোসেন আলী জানান, কি ক্ষতি হয় হামরা মুর্খ মানুষ জানিনা। আর জানিয়া লাভ কি? পেটে খায় কাম করি খাই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মোড় দাত বেদনা করে ওই তগুন (সে কারনে) গুল লাগাউ, নাহলে ওই বেদনা বাড়তে থাকে।
ওই মিলটির দু'দিকেই যাতায়াতের মুল সড়ক।ইউনিয়নের পাচ গ্রামের মানুষ, দুরাগতরাসহ শিক্ষার্থীরাও ওই সড়কের পথচারি। এমনকি মিয়া বাজারে সকাল বিকেল বিভিন্ন পণ্য বিক্রি ক্রয় করতে আসা মানুষ ও বাজারের দোকানীরা। এরা সকলেই স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই চলেই ওই পথ ধরেই আর ক্রয়-বিক্রয় যারা করছেন নিয়মিত ওই মিয়া বাজারে।
এ বিষয়ে ক্রাসিং মিলটির মালিক মানিক মিয়ার সাথে একাধিকবার সাক্ষাতে কথা বলার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে তিনি বলেন, ক্রাসিং মিল পরিচালনায় আমাদের সব ধরনের অনুমোদন সংশ্লিষ্ট কাগজ পত্র রয়েছে।
এদিকে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের মহিষখেচা একটি বড় বাজার। সপ্তাহে দুদিন হাট বসে।প্রত্যাহিক চলে সকাল-বিকেল থেকে শুরু করে বাজার। সেই বাজারের মুল সড়কে গড়ে উঠেছে টিপু সুলতানগুলের ফ্যাক্টরী ও তামাক ও ক্রাসিং মিল ও রয়েছে এসব রাখার বিশাল গোডাউন।এসবের মালিক রহমত আলী নামের ওই ইউনিয়নের এক সাবেক ইউপি সদস্য। তিনি সাংবাদিক দেখে মারাত্মকভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে কোন কি জানাবেন না ও ছবি তুলতে বারন করেন।পরে তাকে বুঝিয়ে কৌশলে ছবি নেয়া হয়। তিনি অনুমোদন সংক্রান্ত কাজগপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে অপরগতা প্রকাশ করেন।সেখানে ১৫/২০জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। তারাসহ বাজারে আসা হাজার হাজার মানুষ ও বাজার সংলগ্ন একটি কলেজসহ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারাও রয়েছেন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। গুলের কারখানা সংলগ্ন মহিষখোচা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সারওয়ার আলম বলেন, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী শিক্ষক ও হাট-বাজারে আসা মানুষেরজন মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই প্রয়োজীয় কাজ সাড়ছেন ঝুঁকি নিয়েই। তিনি দাবী করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুলের কারখানা ও ক্রাসিং মিল জনবহুল এলাকা থেকে অন্যত্র সড়িয়ে নেয়ার ব্যবস্থা নিবেন কর্তৃপক্ষ।
লালমনিরহাট ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডাঃ মোঃ আব্দুল বাসেত জানান, গুল ব্যবহার ও কারখানায় কর্মরতদের অধিকাংশই মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকেন। নিয়মিত গুল ব্যবহারের কারনে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে যা হৃদ রোগের অন্যতম কারন। এছাড়াও সর্দি-কাশি, হাপানি-এ্যাজমা, দাঁতের ক্ষত থেকে মরন ব্যাধি ক্যান্সার আক্রান্ত হবার আশংকা বেশী। তিনি বলেন, এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন অনেকেই। বিশেষ করে দাঁতে ঘা হয়ে পচন ধরে ক্রমেই তা গলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে ক্যান্সারের রুপ নেয়। যা পরিবেশ এর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। তিনি এ থেকে পরিত্রানে সকলকে তামাক, গুল ও তামাকজাত দ্রব্য পরিহারে সচেতনতা বৃদ্ধি ও কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
লালমনিরহাটে সিভিল সার্জন (অবঃ) আফম আহসান হাবিব বাবু জানান, লালমনিরহাটের মেগলহাট এলাকার ইউপি সদস্য পিয়ার আলী ও সদর হাসপাতাল রোডের প্রতিষ্ঠিত ঔষুধ ব্যবসায়ী হাফিজুল ইসলাম দাঁতের ক্ষত থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ভারতে চিকিৎসা নিয়েও মৃত্যুবরন করেছেন। তিনি আরও বলেন, এ থেকে পরিত্রানে সচেতনতা বাড়ানো ও নিয়ে সচেতন হওয়ার বিকল্প কিছুই নেই।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর জানান, অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা ডাটা তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য ক্রাসিং মিল ও গুলের কারখানাগুলো জনবহুল এলাকা থেকে সড়িয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া ও অবৈধভাবে গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠান বন্ধে দ্রুত কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।