আলোর মনি রিপোর্ট: লালমনিরহাট জেলার সতী, রত্নাই, সিঙ্গীমারী ও ভ্যাটেশ্বর নদীতে চলছে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহের কাজ। প্রতিবছর লালমনিরহাটের বিভিন্ন নদী থেকে ব্যাপক হারে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করা হয়।
স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবী অসাধু একটি চক্রের মাধ্যমে বাড়তি অর্থের লোভে প্রতিদিন নদী থেকে শামুক সংগ্রহ করে বিক্রি করছে। আর এই কারণে উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছ, মাটি ও পানিতে বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে।
অবাধে শামুক-ঝিনুক নিধনের কারণে জলজ প্রাণীসহ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। উন্মুক্ত জলাশয়ে প্রাকৃতিক ফিল্টার হিসেবে পরিচিত ধীরগতির এই প্রাণী নির্বিচারে সংগ্রহ ও নিধনের কারণে প্রকৃতির ওপর দারুণ প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন প্রকৃতি প্রেমীরা।
জানা যায়, এই সময়ে দেশের প্রতিটি উন্মুক্ত জলাশয়ের বিশেষ করে খাল, বিল, হাওর, বাওড়ের বংশ বিস্তার করে শামুক ও ঝিনুক। প্রকৃতিকভাবে উন্মুক্ত জলাশয়ের পানি বিশুদ্ধ করণের কাজ করে থাকে ধীরগতির শান্ত স্বভাবের প্রাণী শামুক-ঝিনুক।
উন্মুক্ত জলাশয়ের পোকা-মাকড় খেয়ে জীবন ধারণ করে থাকে এই প্রাণীরা। শামুক শুধু পানি বিশুদ্ধ করণের কাজই করে না মিঠা পানির মাছের খাবার ও কৃষি জমির মাটির উর্বরতা শক্তির গুনাগুন ঠিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২০১২ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে শামুককে বন্যপ্রাণী হিসেবে গণ্য করা হলেও এই আইন অমান্য করে চলছে শামুক সংগ্রহকারীরা। শামুক সংগ্রহের অপরাধে জেলসহ অর্থদণ্ডের বিধান থাকলেও আইন প্রয়োগ না হওয়ার কারণে থামছে না শামুক সংগ্রহের কাজ। প্রতিদিন একজন শামুক সংগ্রহকারী সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ১মণ থেকে ২মণ শামুক সংগ্রহ করে থাকে। প্রতি মণ শামুক বিক্রি হচ্ছে ৩শত ২৫টাকায়। এই শামুক স্থানীয় ব্যাপারীরা সংগ্রহ করে রাখছেন। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এই শামুক মাছের খাদ্য হিসেবে বিক্রি করছে। লালমনিরহাট জেলা থেকে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টাকার শামুক বিক্রি হয়ে থাকে বলে জানা যায়।
স্থানীয় শামুক সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই সময়ে তাদের কাজ থাকে না। চাষাবাদ বন্ধ থাকে। পেটের দায়ে স্থানীয় শামুক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা নিয়ে এই শামুক ধরেন তারা।
শামুক নিধন বিষয়ে পাখি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ পরিষদ লালমনিরহাটের প্রতিষ্ঠাতা সাদিক ইসলাম বলেন, শামুক এবং ঝিনুক আমাদের নিরব বন্ধু। এই শান্ত ধীরগতি স্বভাবের প্রাণী নিরবে আমাদের উপকার করছে। উন্মুক্ত জলাশয়ের পানি বিশুদ্ধ করণসহ স্থানীয় মিঠা পানির মাছের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করছে শামুক। তাই নির্বিচারে এই শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ বন্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে প্রয়োগের দাবি জানান।
লালমনিরহাট জেলার সতী, রত্নাই, সিঙ্গীমারী ও ভ্যাটেশ্বর নদী তীরবর্তী গ্রামের কিছু কিছু পরিবার শামুক-ঝিনুক সংগ্রহ করে থাকে।
শামুক-ঝিনুকের সফলতা: চূর্ণ মুক্তা আয়ুবের্দিক ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুকের খোলস অলংকার ও সৌখিন দ্রব্যাদির পাশাপাশি হাঁস-মুরগি, মাছ ও চিংড়ির খাদ্যের প্রয়োজনীয় উপাদান ক্যালসিয়ামের একটি প্রধান উৎস। উন্নত বিশ্বে ঝিনুকের মাংস মানুষের খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) দেশে প্রথমবারের মত ইমেজ (প্রতিচ্ছবি) মুক্তা চাষে সফলতা পেয়েছেন। মিঠাপানির ঝিনুক থেকে পাখি, মাছ, নৌকাসহ বিভিন্ন বস্তুর নকশার দৃষ্টিনন্দন ইমেজ মুক্তা উৎপাদনে তারা এই সফলতা পান। উদ্যোক্তা ও গ্রামীণ পর্যায়ে এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রপ্তানি খাতেও ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.