আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: বেড়াতে এসে রংপুর জেলার তারাগঞ্জের এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের হাতুরির আঘাতে গুরুতর জখম হয়ে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন কুমিল্লার ২জন যুবক।
গতকাল শনিবার ২০ জুন রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য আহত ২জন যুবককে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে রেফার করেছেন চিকিৎসকরা।
আহত যুবকরা হলেন- কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার চরনল গ্রামের সুলতান খাঁনের ছেলে ইমন খাঁন (২৮) ও তার চাচাতো ভাই মনু খাঁনের ছেলে সাগর খাঁন (২৫)।
হাসপাতাল সূত্র ও আহতরা জানান, রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার হারিয়ারকুটি ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মশিউর রহমান কাজের সন্ধানে কুমিল্লার চরনল গ্রামের ইমনের বাড়িতে যান। দীর্ঘদিন কাজ করায় তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর সুবাদে গত বুধবার ১৭ জুন মশিউর রহমানের সঙ্গে তার বাড়িতে বেড়াতে আসেন ইমন ও তার চাচাত ভাই সাগর। খবর পেয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার ১৮ জুন বাড়ি থেকে মশিউর, ইমন ও সাগরকে দলবল নিয়ে জোর করে নিজ বাড়িতে তুলে নিয়ে যান হারিয়ারকুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ বাবুল। সেখানে তাদের একটি কক্ষে আটকে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করে ১০লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাদের মাদকবিক্রেতা বলে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এর এক পর্যায়ে তাদের ৩জনকে মেঝেতে ফেলে বুকের উপর বসে হাতুরি দিয়ে হাত ও পায়ের জয়েন্টে পেটাতে থাকেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল। এভাবে থেমে থেমে দিনভর হাতুরি দিয়ে তাদের পেটানো হয়। অবশেষে বাড়িতে ফোন করে ৫০হাজার টাকা জোগার করে ইমন। সেই টাকা চেয়ারম্যান বাবুলের দেওয়া ৩টি নম্বরে বিকাশ করে পাঠালে তাদের মুক্তি মেলে। অবশেষে মশিউরকে তার নিজ বাড়িতে এবং একটি অপরিচিত ভ্যানে করে ওই রাতে ইমন ও সাগরকে রংপুর বাস টার্মিনাল পাঠিয়ে দেয়।
পথ খুঁজে না পেয়ে গুরত্বর জখম শরীরে বাস টার্মিনালের পাশে রাস্তায় পড়ে থাকেন তারা। লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ছোট কমলাবাড়ি গ্রামের বন্ধু সাদ্দামকে ফোনে অবগত করে তাদের উদ্ধারের অনুরোধ করে ইমন। সাদ্দাম রংপুর বাস টার্মিনাল থেকে গুরত্বর জখম ইমন ও সাগরকে উদ্ধার করে গতকাল শনিবার ১৮ জুন আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি হলে রাতে সাগর খাঁনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসকরা।
আহত ইমন খাঁন সাংবাদিকদের বলেন, রংপুর অঞ্চলের অনেক মানুষ আমাদের এলাকায় থেকে কাজ করেন। সেই সুবাদে রংপুরে বেড়াতে আসার খুব ইচ্ছা জাগে। তাই চাচাতো ভাইসহ বেড়াতে এলে হারিয়াকুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ বাবুল আমাদের জোর করে তুলে নিয়ে বাড়িত আটকে রেখে ১০লাখ টাকা দাবি করেন। না দিলে মেঝেতে ফেলে বুকের উপর বসে শরীরের জয়েন্টে হাতুরি দিয়ে পেটান। চেয়ারম্যানকে বাবা ডেকে জীবন ভিক্ষা চেয়েও রক্ষা পাইনি। পানি পর্যন্ত পান করতে দেয়নি। বিকাশে ৫০হাজার টাকা নেওয়ার পরে আমাদের ছেড়ে দিয়েছে। সুস্থ্য হলে তারাগঞ্জ থানায় মামলা দেওয়া হবে। আমি চেয়ারম্যানের শাস্তি চাই।
তাদের উদ্ধারকারী সাদ্দাম সাংবাদিকদের বলেন, কুমিল্লায় কাজে যাওয়ার সুবাদে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুর বিপদের খবরে ছুটে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। আমি দিনমজুর হলেও গরীবিহালে চিকিৎসার খরচ বহন করছি। তাদের সুস্থ্য না করে বাড়িতেও পাঠাতে পারছি না।
তিনিও নির্যাতনকারী চেয়ারম্যান বাবুলের শাস্তি দাবি করেন।
আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার আব্দুস সালাম শেখ সাংবাদিকদের বলেন, দুই যুবকের শরীরে হাড়ের জয়েন্টে গুরত্বর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাড়ের জয়েন্ট ভেঙে বা চিড়ে যেতে পারে। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।