হেলাল হোসেন কবির: '৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় টগবগে তরুণ ছিলেন তৈয়বুর আলী ওরফে তৈয়বুর রহমান। যার টমটম গাড়িতে বঙ্গবন্ধু চড়েছিলেন। দেশের হয়ে কাজ করেছেন যুদ্ধের সময়। নিজের শ্রমে আয় করা টাকাও ব্যয় করেছেন সেই সময়। আজও সেই স্মৃতি নিয়ে তাড়া করে মনের ভিতর। এখনও মেলেনি বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি।
জানা যায়, তৈয়বুর রহমান কুড়িগ্রাম জেলার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক ও কুড়িগ্রাম আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি অ্যাডভোকেট আহাম্মদ হোসেন সরকারের অভিনব টমটম গাড়ির চালক ছিলেন। খুব দম নিয়ে কাজে লেগে যেতেন তিনি। গাড়িটি হরিয়ানা জাতের দুটি বড় বড় গরু দ্বারা চালিত হতো। নীল রঙের কাঠের ফ্রেমে বানানো টমটমটির দুপাশে দুটি লম্বা গদিওয়ালা আসন ছিলো। ওই টমটম গাড়ি করে বঙ্গবন্ধু কুড়িগ্রাম রেস্ট হাউস থেকে ধরলা ঘাট পর্যন্ত গিয়েছিলেন বলে তৈয়বুর রহমান দাবি করে থাকেন। এ নিয়ে বিভিন্ন টিভিতে ও পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশিক হয়েছে।
একাত্তরের যুদ্ধে কুড়িগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আহাম্মদ হোসেন সরকার দিনহাটার শুকারুরকুটির অঞ্চল প্রধান হাজী শহর উল্ল্যা ব্যাপারীর ধাপরাহাটের বাড়িতে তার জামাই আব্দুল হাই মাস্টারের ঘরে স্বপরিবারে আশ্রয় নেন। সেখানে আহাম্মদ সরকার ছয় মাসের মতো ছিলেন। ওই বিশাল ঝাঁকের বাড়িতে যে মসজিদ ও মক্তব ছিলো, তাতে আহাম্মদ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে যাওয়া-আসার পথে একটি বিশ্রাম ও কৌশলগত যোগাযোগ কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ওই বিশ্রামকেন্দ্রের কিছুটা খরচ তৈয়বুর চালিত টমটম গাড়ির ভাড়া-খাটা টাকা থেকে আসতো, আর বাকি টাকাটা খরচ হতো আহাম্মদ হোসেন সরকারের উদ্বাস্তু সংসারটি চালাতে। খাতেমন শুকারুরকুটির ধাপরাহাটের মুক্তিযোদ্ধা বিশ্রামকেন্দ্রটির রান্নাবান্নার দায়িত্বে ছিলেন। ছয়মাস পরে আহাম্মদ সরকার ফুলবাড়ির দিকে এগিয়ে গিয়ে বর্ডার সংলগ্ন "ক্যাম্পের ছড়া" নামক একটি স্থানে কৌশলগত গোপন আস্তানা গড়ে তোলেন। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে দায়িত্ব পালন করতেন আহাম্মদ সরকারের বড় জামাতা জাহাঙ্গীর আলম, তার বড় ভাই জয়নাল আবেদীন এবং এই তৈয়বুর রহমান।
পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ত্রিগুণা সেন, ফরোয়ার্ড ব্লক নেতা কমল গুহ, শেখ কামাল প্রমুখ সেখানে গিয়েছিলেন।
তৈয়বুর ভারতের গীতালদহ থেকে ওই টমটম গাড়িতে করে গোপনে ফুলবাড়ির গাগলাহাট, গঙ্গারহাটসহ বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গুলির বাক্স, অস্ত্রাদি আনা-নেয়া করতেন, যা ছিলো খু্বই ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। তাছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে আহাম্মদ হোসেন সরকারের বাড়িতে যে হেডকোয়ার্টার গঠিত হয়, যেখান থেকে পরিচালিত হয়েছিল তিস্তা সেতুর প্রতিরোধ যুদ্ধ-সেখানেও এই তৈয়বুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। আর আহাম্মদ হোসেন সরকারের একান্ত বিশ্বস্ত হিসেবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তৈয়বুর রহমান বিশেষ গোপন দায়িত্ব পালন করতেন।
এই যোদ্ধার বর্তমান লালমনিরহাট জেলা সদরের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড কিশামত নগর বন্দ গ্রামে বসবাস করেন। প্রাণের আকুতি এই যে- জীবন সায়াহ্নে এসে মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিটুকু যেনো দেয়া হয়।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.