প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ৫:৩৬ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১৪, ২০২১, ৫:২০ পি.এম
লালমনিরহাটে এলজিইডি কাজ শুরু না করে জামানত তুলে নিলেন ঠিকাদার
আলোর মনি রিপোর্টঃ কাজের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। ব্যাংক গ্যারান্টিসহ জামানতের টাকাও জমা দিয়ে কাজ শেষ করা কথা ছিল গত মাসের ১২ তারিখে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন। কিন্তু কাজ শুরু না করেই পারফরমেন্স সিকিউরিটির ৪৬লাখ ২৭হাজার টাকার সমুদয় তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। এ ঘটনায় লালমনিরহাট এলজিইডিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। আর এ জন্য একে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ৩টি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলাতে। এ ঘটনায় আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা কোনভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। এ জন্য তাকে লালমনিরহাট নির্বাহী প্রকৌশলী শোকজ করেন। সে অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)র আওতায় আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের চন্দনপাঠ বুড়িরদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুর্গাপুর ইউনিয়নের ছাবেরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুরাকুটি কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সরকারি ভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়। এর আগে গত বছরে লটারির মাধ্যমে ওই ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণের কাজ পান রংপুরের মিলন কনস্ট্রাকশন। কাজ পাওয়ার পরপরই মিলন কনস্ট্রাকশনের কাছ থেকে কাজটি কিনে নেন স্থানীয় ঠিকাদার ইকবাল হোসেন দাউদ। বরাদ্দ অনুযায়ী চন্দনপাঠ বুড়িরদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চুক্তিমূল্য ৬৭লাখ ৬২হাজার ৪শত ৮৯টাকা, ছাবেরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চুক্তিমূল্য ৫৮লাখ ৮হাজার ২শত ৩টাকা ও দুরাকুটি কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চুক্তিমূল্য ধরা হয় ৫৯লাখ ৪৪হাজার ৭শত ৫৩টাকা।
স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর চুক্তি স্বাক্ষর করে। আর চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। এ সব কাজের জন্য ঠিকাদারকে শতকরা ২৫ টাকা হারে প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে পারফরমেন্স সিকিউরিটি জমা রাখতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী কাজ শেষে ভবন হস্তান্তর করে এ সব পারফরমেন্স সিকিউরিটির টাকা উত্তোলন করতে পারেন ঠিকাদার। তবে নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে এই ৩টি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ শুরুর আগেই। কাজ শুরুর আগেই মিলন কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানাকে ম্যানেজ করে তিনটি বিদ্যালয়ের বিপরীতে পারফরমেন্স সিকিউরিটি ৪৬লাখ ২৭হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। ফলে বিদ্যালয় তিনটির নতুন ভবণ নির্মাণকাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
মিলন কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী মিলন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীর অনুমতি ছাড়া কোনভাবেই পারফরমেন্স সিকিউরিটির টাকা উত্তোলন করা সম্ভব নয় বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরও সাংবাদিকদের বলেন, আদিতমারী এলাকার স্থানীয় ঠিকাদার ইকবাল হোসেন দাউদ এসব কাজ করে থাকেন। এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
জেলার একাধিক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে সাংবাদিকদের বলেন, আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলীকে প্রতিটি কাজের জন্য কমিশন দিতে হয়। আবার কাজ শেষ পর্যায় হলেও পারফরমেন্স সিকিউরিটি টাকা ফেরত দেন না তিনি। কিন্তু ইকবাল হোসেন দাউদের ক্ষেত্রে তিনি সব সময় নীরব থাকেন। তারা দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ হয়েই কাজটি সুকৌশলে করেছেন।
স্থানীয় ঠিকাদার ইকবাল হোসেন দাউদ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করে পারফরমেন্স সিকিউরিটির পুরো টাকা উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করেন। এর বাইরে আর কোন কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফজলুল হক সাংবাদিকদের বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কাজ শেষ করা পর পারফরমেন্স সিকিউরিটি ফেরত পেয়ে থাকেন ঠিকাদাররা। কি কারণে কাজ শুরুর আগেই দেয়া হয়েছে সেটি তিনি বলতে পারবেন না বলে জানান।
যোগাযোগ করা হলে আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা ৩টি বিদ্যালয়ের পারফরমেন্স সিকিউরিটির টাকা উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার তার আইডির পাসওয়ার্ড হ্যাক করে জামানতের টাকা উত্তোলন করেছেন। আইডি পাসওয়ার্ড হ্যাক করে ঠিকাদার বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে গেলে অফিসিয়াল কী ব্যবস্থা নিয়েছেন এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন।
লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খান সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী শোকজের জবাব দিয়েছেন। সম্পূর্ণ বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
সাপ্তাহিক আলোর মনি- সাহেব পাড়া (বড় মসজিদ) সংলগ্ন, রেলওয়ে কোয়ার্টার নং- এল/১৫০-৩ স্টেশন রোড, লালমনিরহাট-৫৫০০ হতে প্রকাশিত ও প্রচারিত এবং অংকিতা প্রিন্টিং প্রেস, নিউক্রস রোড/প্রেস ক্লাব মার্কেট, রংপুর হতে মুদ্রিত।
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.