সুলতানা শিরীন সাজি:
শোন, আমি চলে যাচ্ছি।
আমি থাকতে এসেছিলাম
পথহারা পথিকের মত একদিন, তোমার আঙিনায়!
একগোছা চাবির মধ্যে থেকে, একটা সোনালী চাবি হাতে দিয়ে বলেছিলে, ‘এই ঘর, এই জানালা, জানালার বাইরের আদিগন্ত আকাশ, ছাদ জুড়ে ফুল বাগান আর সেই সিঁড়িঘরটা, সব তোমার!’
আমি প্রিয় গল্পের ললিতা হয়ে আঁচলে সেই মস্ত চাবি ঝুলিয়ে কত রাতদিন সেখানেই।
কবে কোনো এক সাজি তার কবিতায় বলেছিল, ’তুমি দিনমান কবিতা লিখবে আর আমি মেঘের ভেলায় সাজাবো আমার স্বপ্নলোকের ডিঙা!’
আমি আমার ঘর সাজিয়েছিলাম সেই কবির ক্যালিগ্র্যাফী কবিতায়!
আমি একজীবনে একটা হলদে ঝুটি পাখি ছিলাম। আমার মানুষ জন্মে আমার প্রত্যাশা জুড়ে তাই শুধু পাখিদের কোলাহল!
বৃষ্টি নামলে ছাদ বাগানের সেই টিনের ঘরটায় বসে বৃষ্টি শুনতে শুনতে আমি তোমাকে ডাকতাম। তুমি দূরের কোন বনভূম থেকে ভিজতে ভিজতে আসতে!
তোমার পুরো গায়ে সবুজ পাতার গন্ধ। মানুষ কখনো এমন অবুঝ সবুজ হতে পারে, আগে জানিনি!
তোমার চুল বেয়ে পড়া পানি পড়ে আমার চোখের কাজল ধুয়ে যেতো! তুমি আমার কান্না সহ্য করতে পারতেনা আমি তাই বৃষ্টির কান্নায় মিশে যেতাম!
আমাদের দেখা হওয়ায় মাঝে মাঝে নদী জুড়ে যেতো। সেই নদীর নাম তুমি দিয়েছিলে, নীল।মিশরের নীল নদের কথা মনে করেই কি! একটা কাঠের ডিঙিতে ভেসে বেড়াতাম আমরা। তুমি তোমার প্রিয় কবির কবিতা শোনাতে। রাতভর আমরা সেই নদীতে কবিতার মূর্ছনায় ভাসতাম! মনে হতো একশো বছর শুধু এখানেই কেটে গেলো!
শোন, আমি চলে যাচ্ছি আজ।
কবিতার ঘর বাহির ছেড়ে দূরে কোন বিষন্ন আকাশে!
আমার দু’হাতে এত সবুজ কেনো? তুমি মিশে আছো?
মানুষের জীবনে খুব বেশি কিছু লাগেনা। কেউ স্বপ্ন দেখে নদীর ধারে, ছোট্ট এক দোতলা বাড়ি। ছাদ জুড়ে চিলেকোঠার বিশাল ঘরটার দেয়াল জুড়ে কবিতা!
হাতলওয়ালা কাঠের চেয়ারে দুলতে দুলতে কত অজস্র স্বপ্নের ভিতর ঢুকে যায় তারা!
শোন, আজ আমি চলে যাচ্ছি।
কথাটা শেষ হয়না। অদেখা একটা মানুষের হাতের দখলে আমি ছোট্ট পাখি হয়ে যাই! একটা মানুষের চোখ এত সবুজ হয়? একটা মানুষ এত সুন্দর করে ময়ূর বলতে জানে!
যদি অপেক্ষার নাম হয় আকাশ। যদি দেখা হওয়ার নাম হয় নদী! যদি কাছে আসার নাম যদি হয় আগুন!
তাহলে চোখের সাথে চোখের কাঁপনের নাম হোক ময়ূর!
আর হ্যা, শোন আমি আজ যাচ্ছিনা।
আমি রাতভর বৃষ্টি হয়ে থাকছি, তোমার স্বপ্নের বাড়িতে!
শুনছো, আমি আর কোনদিন যাচ্ছিনা।
কি আশ্চর্য!
আমার চোখের ছলছল জল আজ তোমার চোখে!
(স্বপ্নের জীবন যখন যেমন)
জুলাই ১৮/২০২১
অটোয়া