আলোর মনি রিপোর্ট: প্রতেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পৃথক পৃথক কোড নম্বর থাকলেও লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলায় একই কোডে ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বৈধতা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মদনপুর দোলাপাড়া গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ১৯৭৪ সালে স্থানীয়রা জমিদান করে মদনপুর দোলাপাড়া মসজিদ সংলগ্ন এবতেদায়ী স্বতন্ত্র মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ওই গ্রামের মৃত ফজর উদ্দিনের সভাপতিত্বে পরিচালিত মাদরাসাটি ১৯৭৯ সালে ৫১৭৪৭ কোডে পাঠাদানের অনুমতি দেয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। শিক্ষার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় এ মাদরাসার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ব্যবস্থাও করেছে সরকার। যা সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০০৮ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। পরবর্তীতে সরকারি সহায়তার অভাবে পাঠাদানে ঝিমিয়ে পড়ে উক্ত মাদরাসা। গত ২০১৫ সালে গণপ্রজন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র মাদরাসা এমপিও ভুক্ত করার আশ্বাস দিলে পুনরায় সগৌরবে উজ্জিবিত হয়ে উঠে পাঠদান শুরু করে শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি।
এই সব প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্ত হবে শুনে স্থানীয় লিয়াকত আলী পাশের বনচৌকী গ্রামের কোচিং সেন্টারকে সাম্প্রতি সময় ‘মদনপুর দোলাপাড়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসা’ উল্লেখ করে সাইনবোর্ড সাটান এবং কোড নম্বর উল্লেখ করেন ৫১৭৪৭। স্থানীয়রা নাম দিয়েছেন নতুন মাদরাসা। ফলে নতুন ও পুরাতনের মাঝে দ্বন্ধ তৈরী হয়। লিয়াকত আলী নিজে সভাপতি হয়ে নিজের পুত্র আব্দুল লতিবকে প্রধান শিক্ষক ও বাকী পদে অন্যান্য পুত্র ও পুত্রবধুদের নিয়োগ দেখিয়েছেন।
অতি সম্প্রতি প্রতিষ্ঠা হলেও কাগজে উল্লেখ করেছেন ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। যার জমি রেজিস্ট্রি দেখানো হয়েছে ২০১৭ সালে। প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক দাবি করা শিক্ষকদের জন্ম প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পরে। মাদরাসা বাচাই কমিটি তদন্তে এলে বেড়িয়ে আসে এমন গড়মিল তথ্য। যা প্রথম দিকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন বাচাই কমিটি। কিন্তু পরবর্তীতে বাচাই কমিটি অদৃশ্য কারণে রাতারাতি তৈরি করা ভুয়া প্রতিষ্ঠানটিকেও বৈধ্যতা দেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ওই গ্রামের রবিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বনচৌকী গ্রামের কোচিং সেন্টারটি রাতারাতি মদনপুর দোলাপাড়া মাদরাসায় পরিণত হয়েছে। এ মাদরাসায় এখনো পাঠদান শুরু হয়নি। পুরাতন মাদরাসায় লেখাপড়া অনেক আগে থেকে হয়। সরকার এমপিও ভুক্ত করবে বলে এসব মাদরাসা গড়ে উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আদিতমারী উপজেলা ছাত্রলীগের একজন নেতা সাংবাদিকদের বলেন, জমি রেজিস্ট্রি করে প্রতিষ্ঠান গড়াতে হয়। ঘর করে সাইনবোর্ড দিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয় না। ত্রুটিপুর্ন কাগজ তৈরি করা এবং তাকে সমর্থন করাও অপরাধ। একই নামে ২টি প্রতিষ্ঠানের বৈধ্যতা দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন বাচাই কমিটি। মোটা অংকে টাকার বিনিময়ে বাচাই কমিটি এমনটি করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
নতুন মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিব সাংবাদিকদের বলেন, আমার বয়স যাই হোক, আমি প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। জমিদাতা প্রথমে মৌখিক ভাবে জমি দান করেছেন। পরবর্তিতে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। তবে জমির দলিল ছাড়া সরকারি অনুমোদন ও কোড নম্বর কি ভাবে পেয়েছেন? এমন প্রশ্নে তিনি কোন উত্তর দেননি।
পুরাতন মাদরাসাটির সভাপতি শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ দিনের এই প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করতে একটি মহল ভুয়া কাগজ তৈরী করে আমাদের মাদরাসার কোড ব্যবহার করে দ্বন্ধ তৈরি করছে। যা গ্রামে কোন মাদরাসা গড়ে না উঠে। বাচাই কমিটি প্রথম দিকে ভুয়া কাগজপত্রের জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু পরে একই কোডে ২টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি। তবে উচ্চতর তদন্তের জোর দাবি জানান তিনি।
মাদরাসা বাচাই কমিটির সদস্য সচিব আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফ মাহফুজ সাংবাদিকদের বলেন, একই কোডে ২টি প্রতিষ্ঠান হওয়ার নিয়ম নেই। জমির দলিল ও অবকাঠামো ছাড়া কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোড নম্বর বা পাঠদানের অনুমতি হয় না। তবে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি এড়াতে ২টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য একই কোডে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিবেন।
মাদরাসা বাচাই কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনসুর উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, জমি রেজিস্ট্রি আগে বা পরে হলেও ২টি প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো রয়েছে। তাই একই কোডে ২টি প্রতিষ্ঠানের কাগজ পাঠানো হয়েছে। একটিকে অনুমোদন দিয়ে অপরটিকে নতুন কোড দিতে মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।