আলোর মনি রিপোর্ট: আজ শনিবার (২৬ জুন) বহুল আলোচিত দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা তিনবিঘা করিডোর মুক্ত দিবস।
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান নামক দুটি দেশ ভাগের পর ভারতের অভ্যন্তরে ২২.৬৮বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দহগ্রাম ও আঙ্গোরপোতা পাকিস্তানের অংশে পড়ে। পরে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সময় দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা বাংলাদেশ হিসেবে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে।
কিন্তু সেই থেকে ভারতের কাছে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতার পুরো জনপদ।
পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে এ দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতাকে ৯৯বছরের জন্য বাংলাদেশকে লিজ দেয় ভারত।
যার ফলশ্রুতিতে ১৯৯২ সালের ২৬ জুন রেশনিং পদ্ধতিতে "তিনবিঘা করিডোর" এক ঘণ্টা পর পর দিনে ৬ঘণ্টা খোলা রাখা শুরু করে। তখন কিছুটা হলেও মুক্তির স্বাদ পায় দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা দুটি ছিটমহলের ১৭হাজার মানুষ।
২০০১ সালের ২১ এপ্রিল আরও ৬ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করিডোর গেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরে এলে গেটটি ২৪ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সালের ১৯ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা "দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা" সফরের মধ্য দিয়ে এ গেট ২৪ঘণ্টা ব্যবহারের আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করেন।
ওই দিন থেকে বন্ধ হয়নি তিনবিঘা করিডোরের গেট। সেই থেকে উন্নয়নের ছোয়া লাগে অবহেলিত দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতায়। তৈরী হয় নতুন নতুন ভবন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দহগ্রামবাসীর ছেলে-মেয়েদের জন্য দহগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০শয্যার হাসপাতাল, দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স বিভিন্ন স্থাপনার শুভ উদ্বোধন করেন।
দীর্ঘ বন্দি জীবনের মুক্তির আনন্দের সাথে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের সুদৃষ্টি পেয়ে প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে অবহেলিত দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা। বর্তমানে যাতায়াত থেকে শুরু করে সকল নাগরিক সুবিধা পেয়ে বেশ আনন্দিত এখানকার সাধারণ মানুষ।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের জরিপ মতে, বর্তমানে ১হাজার ৮শত ৬৮হেক্টর জমির দহগ্রাম-আঙ্গোরপোয় ৩হাজার পরিবারে বসবাস করে ২০হাজার মানুষ। ফাঁড়ি থানা ১টি, বিওপি ক্যাম্প ২টি, ইউনিয়ন পরিষদ ১টি, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ১টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬টি, বে-সরকারি রেজিঃ প্রাঃ বিদ্যালয় ০৪টি, দাখিল মাদরাসা ১টি, ফোরকানিয়া মাদরাসা ১টি, এবতেদায়ী মাদরাসা ১টি, ১০শয্যার হাসপাতাল ১টি, কমিউনিটি ক্লিনিক ২টি, মসজিদ ৩৫টি, মন্দির ১টি, তিস্তা ও সাঁকোয়া নামে ২টি নদী ও একটি জলমহলসহ অনেক কিছুর সমাবেশ ঘটেছে দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতায়। বর্তমানে দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতায় শিক্ষিতের হার ৪০%।
এতো কিছুতে এগিয়ে গেলেও লিজ দেয়া ৯৯বছর অতিক্রম হলে ভারত সরকার পুনঃরায় তাদের করিডোর গেট বন্ধ করে পুনঃরায় অবরুদ্ধ করবে কি না এ আশঙ্কায় দিন কাটছে দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা করিডোরবাসীর।
দৈর্ঘ্যে ১শত ৭৮মিটার ও প্রস্থে ৮৫মিটার তিনবিঘার জমিটুকু জন্য ভারতের কাছ থেকে আমরা করিডোরটি ৯৯বছরের জন্য লিজ নিয়েছি। এর মধ্যে ২৯বছর চলে গেছে। লিজের সময় শেষ হলে কি হবে? আমরা কি আবার যাতায়াতের সুযোগ হারাব? এমন নানান প্রশ্ন তাদেরকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। এবং এখনও হতাশায় ভুগছেন দহগ্রামের মানুষ।
১৯৯২ সাল থেকে ২৬ জুনকে করিডোর মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করছে এখানকার মানুষ।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.