আলোর মনি রিপোর্ট: লালমনিরহাটে ই-জিপির (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) পরিবর্তে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে দরপত্র আহবানের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)র বিরুদ্ধে।
জানা যায়, সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দূর্নীতিমুক্ত রাখতে ২০১১ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুভ উদ্বোধন করেন ই-জিপি (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট)।
কিন্তু লালমনিরহাট এলজিইডি প্রায় সাড়ে ১৩কোটি টাকার ১টি কাজের দরপত্র আহবান করেছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। যার অর্থায়ন করছে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি)।
আর ম্যানুয়াল পদ্ধতির এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সমঝোতা, পেশিশক্তি বা টাকার বিনিময়ে কাজটি বাগিয়ে নিতে লালমনিরহাটে শুরু হয়েছে প্রভাবশালীদের দৌঁড়ঝাপ। এ দরপত্রকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
লালমনিরহাট এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে “রংপুর বিভাগ কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের” আওতায় লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী চলতি বছরের গত ২৫ মার্চ দরপত্রটি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আহবান করেন। এতে লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার ১টি ও কালীগঞ্জ উপজেলার ৭টি নিয়ে মোট ৮টি গ্রামীণ রাস্তার উন্নয়ন কাজ ১টি প্যাকেজেই রাখা হয়।
যার দরপত্র মূল্য প্রায় সাড়ে ১৩কোটি টাকা। দরপত্র ক্রয়ের শেষ দিন বুধবার (১৯ মে)। আর একমাত্র এলজিইডি ভবনেই দরপত্র জমাদানের শেষ সময় বৃহস্পতিবার (২০ মে) বেলা সাড়ে ১১টা। ওই প্রকল্পের আওতায় কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এলজিইডিকে।
ঠিকাদারদের অনেকের অভিযোগ, মোটা অংকের কমিশনে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে এলজিইডি দরপত্রটি ই-জিপিতে আহবান না করে ম্যানুয়াল পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছে এবং দরপত্র জমাদানের সুযোগ রাখা হয়েছে শুধুমাত্র একটি জায়গায়। যদিও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে দোহাই দিচ্ছে অর্থদাতা প্রতিষ্ঠানের “গাইডলাইনের”। এমন একটি লোভনীয় কাজের দরপত্র ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে আহ্বান অনেকটাই অস্বাভাবিক। আবার শুধু এক জায়গায় দরপত্র জমাদানের সুযোগ রাখাকেও তারা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না। কারণ এর আগে বিভিন্ন ম্যানুয়াল পদ্ধতির দরপত্রেও একাধিক স্থানে দরপত্র জমাদানের সুযোগ ছিল।
তারা বলছেন, এ দরপত্রে আগের কাজের যে “অভিজ্ঞতা” চাওয়া হয়েছে তাতে লালমনিরহাট জেলার ১টি লাইসেন্সেরও বিপরীতে দরপত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। ফলে এতে অংশ নিতে লালমনিরহাট জেলার বাইরের “ভারী” লাইসেন্স সংগ্রহ করেছেন কেউ কেউ কিংবা দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট ভেঞ্চারের (যৌথ উদ্যোগ) মাধ্যমে সিডিউল সংগ্রহ করেছেন। এতে বেশিরভাগ ঠিকাদার বঞ্চিত হচ্ছেন।
দরপত্রে অংশ নিতে যাওয়া সাধারণ ঠিকাদাররা আশঙ্কা করছেন, ম্যানুয়াল পদ্ধতির কারণে “সমঝোতার” মাধ্যমে প্রভাবশালীরা কাজটি বাগিয়ে নিতে পারেন। অথবা বাক্সে দরপত্র জমা দিতে বাধার সম্মুখীনও হতে পারেন। কোনোভাবে জমা দিতে পারলেও সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও কৌশলে যাচাই বাছাইয়ে বাদ পড়ারও আশঙ্কা করছেন তারা।
উল্লেখ্য যে, কাজটি বাগিয়ে নিতে জনপ্রতিনিধি, কালো তালিকাভুক্ত ব্যবসায়ী, সরকারি ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। দরপত্র জমাদানে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খান সাংবাদিকদের বলেন, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিটিই ছিল ম্যানুয়েল পদ্ধতির মাধ্যমে টেন্ডার আহ্বানের। এলজিইডির সব দরপত্র ই-জিপিতেই হয় কিন্তু এটা ব্যতিক্রম উল্লেখ করে দরপত্র বাক্স শুধুমাত্র এক জায়গায় রাখা প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, যারা কাজটির জন্য টাকা দিয়েছে তারাই এটা চুক্তিতে মেনশন করে দিয়েছে। স্বচ্ছ দরপত্রের বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে তিনি কোনো কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।