সাকি: এই নিঃসঙ্গ নারকেল গাছটির কথা জীবনে অনেকের সাথে আমি মাঝে মধ্যে বলেছি।
বয়স চল্লিশ বছর তো হবেই।
বগুড়ায় সুলতানগঞ্জ পাড়ায় আমার নানীবাড়ীর গেটটার পাশে যে নারকেল গাছটা, তা আমি আশৈশব দেখে আসছি।
একবার প্রায় ছত্রিশ বছরে সেই বাড়ীটা ভাগাভাগি করতে যেয়ে, গাছটার সাথে কথা বললাম।
ভালোই তো লম্বা হয়ে গেছো?
বললো, সার দেওনা। ডাব নারকেল দুটোই তেমন আবাদ করতে পারিনা।
একটা দুষ্ট কাঠঠোকরা পাখি আবার বাসা বেঁধেছে।
ওকে নিয়েই বেঁচে আছি।
সারা রাত পাখিটা বউটার সাথে খুনসুটি করে।
ভালোই লাগে।
জীবনে আর একাকীত্ব ভালো লাগে না।
মালদ্বীপের সেই নারকেল গাছ একটা ছোট্ট দ্বীপে একা দাঁড়িয়ে, কম করে চল্লিশ বছর।
ঝড়, সাইক্লোন, জোয়ার ভাটা, চাঁদনী রাত, প্রখর রোদে তেতে আমাদের জীবনের মতো করে বেচে আছে। এতোটা নিঃসঙ্গ নারকেল গাছটা।
খেয়াল করিনি কোন পাখির বাসা আছে কিনা।থাকলে ভালো হতো। আমার নানীবাড়ীর গাছটার মতো সুখী থাকতো।
৬৬বছর পার হয়ে গেলাম, কোথায় যেনো বিশ্রাম না নেবার অপারগতা আমাদের সবার জীবনে । মুগডালের খিচুড়ী আর ডিম ভাজা খেয়ে, কেন পনেরোটা দিন পার করতে পারিনা।
বাইরে যেতেই হবে এমন কেন?
চরম একটা মহামারীর ঘুর্ণিঝড় মাথার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
আমরা পারিনা কেন?
সমস্ত জীবন কৃচ্ছতা না করলাম, এখনকার কটা দিন একটু বুঝে শুনে দেখে চললে, জীবনটাকে আর একটু বাঁচিয়ে রাখলে ক্ষতি কি?
কই আর পারলাম বিশ্রামে যেতে। কাজ করতে করতে, যা হবার হবে।
হাত তো ধুই, মাস্ক তো পড়ি, দুরত্ব যতদুর সম্ভব বজায় রাখি, তারপর হলে কি আর করবো।
এই অযুহাতের কারনে অসংখ্য প্রাণ ঝরে যাচ্ছে আমাদের কি কিছুই করার নাই?
নিঃসঙ্গতা নিয়ে কথা বলতে যেয়ে, নিজেই কেমন একা হয়ে গেলাম। কিছু করার আছে কি?
কাজ করতেই হবে?
এতো রিস্ক নিয়ে।
এ তো জলন্ত আগুনের ঘরে প্রবেশ করার মতো।
১৭/৪/২০২১
নিউজার্সি।