আলোর মনি রিপোর্ট: লালমনিরহাটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাসের আগেই সামান্য কাল বৈশাখী ঝড়ে ভেঙে পড়েছে ভবন, উড়ে গেছে টিনের চালা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের সিমেন্ট দিয়ে ওয়াল নির্মাণ ও নিম্নমানের কাঠ দিয়ে ঘর তৈরি করার কারণে সামন্য কাল বৈশাখী ঝড়ে ওয়াল ভেঙে পড়া এবং টিনের চালা উড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব বাড়ী নির্মাণ করা হলেও সেখানে বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুতের ও অধিবাসীদের চলাচলের জন্য কোন রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। নির্মানকাজ শেষ হলেও ভুঁতড়ে এসব ঘরে কেউই থাকছেন না।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) দিনগত মধ্যরাতে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত আধাপাকা ঘর ভেঙে পড়েছে এবং টিনের চালা উড়ে গেছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে ভূমিহীনদের আধাপাকা বাড়ি উপহার দিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ গ্রহণ করে সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ভূমিহীন পরিবারের জন্য দুই শতাংশ জমি ওপর দুই কক্ষের একটি আধাপাকা ঘর, রান্না ঘর ও টয়লেটেসহ একটি বাড়ির মালিকানা উপহার প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লালমনিরহাট সদর উপজেলার ১শত ৫০টি পরিবারের আবাসনের জন্য অর্থ বরাদ্ধ দেওয়া হয়। প্রতিটি বাড়ির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১লক্ষ ৭৫হাজার টাকা। প্রথম দিকে খাস জমি শনাক্ত করে ভূমি অফিস। পরে ওসই খাস জমিতে আধাপাকা বাড়ি তৈরির কাজ বাস্তবায়ন করেন লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়। লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ এলাকায় ১০টি ভূমিহীন পরিবারের জন্য ১০টি আধা পাকা বাড়ি নির্মাণ করা হয়। দুই মাস আগে এসব বাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ হলে সুফলভোগীদের হাতে জমির দলিল ও বাড়ির চাবি হস্তান্তর করে লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রশাসন। বাড়ির চাবি হস্তান্তরের ২ মাস পার হলেও যোগাযোগের রাস্তা, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় কোন সুফলভোগি বসবাস শুরু করেনি। ফলে ফসলের ক্ষেতের মাঝে এসব ভুঁতড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এরই মাঝে গত শুক্রবার দিনগত মধ্যরাতে সামান্য ঝড়ে ঘরের বারান্দার পিলার ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে। উড়ে গেছে বারান্দাসহ ঘরের ছাউনির টিন। বসবাস শুরুর আগেই ভেঙে পড়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে সকলের মাঝে।
সুফলভোগি ও স্থানীয়রা জানান, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে দায়সারা ভাবে কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে।
টয়লেটে সিরামিকের প্যান বসানোর কথা থাকলেও বসানো হয়েছে প্লাস্টিকের প্যান। ব্যবহারের আগেই ফেঁটে চৌচির টয়লেট। নেই পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা। চলাচলের মতো রাস্তাও নেই। শুরু থেকে ভাল মানের কাজের দাবি করে আসলেও সুফলভোগিদের সেই দাবি কেউ রাখেনি।
হালিমা বেগম নামে একজন জানান, গত ১০বছর আগে স্বামী তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে। সেই থেকে বাবার বাড়িতে ঝুপড়ি ঘরে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভূমিহীন হওয়ায় জমিসহ পাকা ঘর উপহার পাওয়ার খবরে বেশ আনন্দই পান তিনি। জমির দলিল ও বাড়ির চাবি পেলেও থাকার পরিবেশ নেই নবনির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে। তাই বসবাস শুরু করেনি কেউ। এরই মধ্যে সামান্য ঝড়ে ভেঙে গেছে তার উপহারের ঘর। ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে বলেও কোন কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ভেঙে যাওয়া ইট ও টিনগুলো সরিয়ে নিচ্ছেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় সাংবাদিকদের বলেন, স্ট্রিমেট অনুযায়ী সব কাজ করা হয়েছে। যা বরাদ্ধ তাই ব্যয় করা হয়েছে। ঝড় হলে তো ঘরে ভেঙে যেতেই পারে। তবে ভেঙে যাওয়া ঘর মেরামত করে দেওয়া হবে। একই সাথে পানি, বিদ্যুৎ ও চলাচলের রাস্তা শিগগিরই করে দেওয়া হবে বলেও জানান এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.