শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
পাটগ্রাম প্রেসক্লাবে চুরি! লালমনিরহাটে স্থানীয় রাজনীতি ও ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভা/ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা ২০২৪ এর ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে সহিংসতা অবসানের দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত ঢাকাস্থ লালমনিরহাট জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদ এর আংশিক কমিটির অনুমোদন লালমনিরহাটে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) শামীম কামাল-এঁর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে যুব অধিকার পরিষদের ৭ দফা প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটের হরিণচড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটের খোড়াগাছ দারুস সুন্নাত দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষকের বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে নব যোগদানকৃত জেলা প্রশাসকের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
আজ শহীদ এম এ হাফিজ ও বেলাল সুজা-এঁর ৫০তম শাহাদত বার্ষিকী

আজ শহীদ এম এ হাফিজ ও বেলাল সুজা-এঁর ৫০তম শাহাদত বার্ষিকী

আলোর মনি রিপোর্ট: আজ সেই ভয়াল ১৮ এপ্রিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর বিহারীরা শহীদ এম এ হাফিজ ও শহীদ বেলাল সুজাকে নির্মমভাবে নির্যাতনের এক পর্যায়ে জীবন্ত মাটি চাপা দিয়ে হত্যা করে। এখানেই শেষ নয় বেগম হালিমা হাফিজ তাঁর স্বামী সন্তানদের রক্ষার জন্য এগিয়ে গেলে ঘাতকরা তাঁর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে তিনি গুরত্বর রক্তাক্ত যখমপ্রাপ্ত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। একই সময় ঘাতকরা বীর মুক্তিযোদ্ধা জিলাল সফি-এঁর উপর হামলা করলে তিনি অলৌকিকভাবে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হন। তবে আড়ালে থেকে যায় সেই রাতের বিভৎস ঘটনাটি।

 

বর্তমান লালমনিরহাট একটি জেলা শহর হলেও মহান স্বাধীনতার আগে ছিলো একটি থানা শহর। অর্থাৎ তৎকালীন রাজশাহী বিভাগের অন্তরগত রংপুর জেলাধীন কুড়িগ্রাম মহুকুমার অধীনে একটি থানা শহর। তবে থানা শহর হলেও উত্তরের সীমান্তবর্তী এলাকা, বৃটিশ আমলের পরিত্যাক্ত এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তর বিমান বন্দর, রেলওয়ে জংশন, রেলওয়ের বিভাগীয় কার্যালয় থাকার কারনে দেশী-বিদেশী-বিহারী ইত্যাদি সব মিলিয়ে একটা জমজমাট শহর ছিলো লালমনিরহাট। বলাই বাহুল্য দেশ-বিদেশের নানা জাতীয় মানুষের পদচারনায় শহর মূখরিত হয়ে থাকতো। যে কারনে সে সময়ের লালমনিরহাট অনেক বিভাগীয় শহরের চেয়েও কৃষ্টি-কালচারের দিক থেকে অনেক এগিয়ে ছিলো। বেশীর ভাগ এলাকা ছিল ভারতের কুচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আসামের সীমান্ত সংলগ্ন। বিশেষত তিস্তা নদী, লালমনিরহাট বিমান বন্দর, রেলওয়ে জংশন ইত্যাদির কারনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী লালমনিরহাটকে তাদের দখলে নেয়া খুব জরুরী মনে করতো।

 

রেলওয়ের বিভাগীয় অফিসে চাকরীজনিত কারনে এম এ হাফিজ স্বপরিবারে লালমনিরহাটের সাহেব পাড়ার একটি বাংলোতে থাকতেন। তাঁর স্ত্রী বেগম হালিমা হাফিজ ছিলেন গৃহিনী। তাঁদের ১কন্যা লালমনিরহাট গার্লস স্কুলে ও ৩পুত্র তৎকালীন মডেল হাইস্কুলে পড়তেন। এছাড়া তাঁদের ছোট ১পুত্র ছিলো। এর বাহিরেও উভয় দম্পতী হোমিও চিকিৎসক ছিলেন। অবসর সময়ে তাঁরা প্রাকটিস করতেন বিধায় এলাকায় খুব পপুলার ছিলেন। লালমনিরহাট বড় মসজিদের পাশে হ্যানিম্যান হোমিও হল নামে তাঁর একটা চেম্বার ছিলো। বেগম হালিমা হাফিজ বাসাতেই এলাকার রোগী দেখতেন এবং দু’জনই ভিজিট ছাড়াই চিকিৎসা দিতেন।

 

১৯৭১ সালের মার্চের সূচনা থেকেই লালমনিরহাট শহর আন্দোলন-মিটিং-মিছিলে মুখরিত হয়ে থাকতো। ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর তা যেনো আরও বেগ পেলো। এম এ হাফিজ পরের দিন (৮ মার্চ) থেকেই অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। চারিদিকে থমথমে অবস্থা, ফিসফাস কানাঘুসা। তাঁর সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা জিলাল সফি ও শহীদ বেলাল সুজা থাকতো সব মিছিল-মিটিংয়ের অগ্রভাগে।

 

৯ই মার্চ লালমনিরহাট স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনার উত্তেজিত বিহারী গুন্ডাপান্ডারা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। ফলে ভেতরে ভেতরে বাঙ্গালিরাও সুসংগঠিত হতে থাকে। ২৩ মার্চ সে সময় পাকিস্তান দিবস উদযাপিত হতো। বীর মুক্তিযোদ্ধা জিলাল সফি এবং শহীদ বেলাল সুজারা সাহেব পাড়ার যুবকরা সাহেব পাড়ায় পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে বাংলাদেশী পতাকা উড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে মোতাবেক লালমনিরহাট সাহেব পাড়ায় পাকিস্তান প্রতিহত দিবস হিসেবে পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে সবুজের মাঝে লাল বৃত্ত এবং তার মধ্যে হলুদ রংয়ের বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উড়ানো হয়। শহীদ বেলাল সুজা তাঁদের বাংলোর সামনে বিহারীদের একটি দোকানের সামনে রাখা কেরোসিন তেলের টিনের মধ্যে পাকিস্তানী পতাকা চুবিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে পতাকাটি পাশে একটি কাঠের টুলের উপর দাঁড়ানো দারার হাতে দিলে পাকিস্তানী পতাকাটি দাউ দাউ করে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর সবাই মিলে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। পুরো ঘটনাটির ছবি সেই জায়গার ঠিক সামনের বিল্ডিংয়ের দোতলা থেকে একজন বিহারী তুলে রাখে। পরবর্তীতে ৪ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী লালমনিরহাটে প্রবেশ করলে সেই বিহারী ছবি গুলি পাকিস্তানী হানাদারদের কাছে দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা জিলাল সফি ও শহীদ বেলাল সুজা-এঁর নামে নানা অভিযোগ করে এবং তাঁদেরকে হত্যা করার জোড়ালো দাবি জানায়। তারই ফলশ্রুতিতে শহীদ বেলাল সুজা ও শহীদ এম এ হাফিজকে নির্মমভাবে নির্যাতনের এক পর্যায়ে জীবন্ত মাটি চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়।

আজ সেই ভয়াল ১৮ এপ্রিল। শহীদ এম এ হাফিজ ও শহীদ বেলাল সুজা-এঁর ৫০তম শাহাদত বার্ষিকী। এ উপলক্ষে দিনব্যাপী কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে তাঁদের পরিবার।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone