আলোর মনি রিপোর্ট: লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ শামসুল হক সরকারি গাড়ী ও চালককে সঙ্গে নিয়ে গত ৫দিন যাবৎ ঢাকায় নিজ বাসায় অবস্থান করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপরদিকে ওই হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আফসানা আফরোজের দাবী ডাঃ মোহাম্মদ শামসুল হক গত ১০ এপ্রিল ৩দিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি ছুটিতে থাকলেও সরকারি বিধি বহির্ভূতভাবে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি জীপ গাড়ীটি এবং ওই গাড়ীর চালককে তিনি সঙ্গে নিয়ে যান।
সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে সরকারি জীপ গাড়ী ব্যক্তিগত কাজে নিয়ে যাওয়ার খবরে লালমনিরহাট স্বাস্থ্য বিভাগে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সবশেষ গত ১০ এপ্রিল পাটগ্রামের একটি তেলের পাম্প থেকে ১০দশমিক ১৯লিটার তেল নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।
পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য ক্যাডারের ২শত ১৩জন কর্মকর্তাকে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর ৬ষ্ঠ গ্রেডে সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি প্রদান করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘পার-২ অধিশাখা’র উপসচিব শারমিন আক্তার জাহান স্বাক্ষরিত ৪৫.১৪৩.০৮০.০৭.০০.০০১.২০২০-১৪১ নম্বর স্মারকে গত ১ মার্চ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনের ১৬২ নম্বর ক্রমিকে থাকা ডাঃ মোহাম্মদ শামসুল হকও (পরিচিতি নম্বর ১৩২৯৭৬) সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি পান এবং অপর এক প্রজ্ঞাপনে রাজধানী ঢাকার জাতীয় নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতাল থেকে অবমুক্ত হয়ে একই মাসের গত ৮ মার্চ পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।
পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সামিরা হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, গত ১০ এপ্রিল মাননীয় সাংসদ সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেনের স্যারের সঙ্গে সমন্বয় সভা শেষ করেই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ শামসুল হক স্যার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন।
পাটগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাড়ীর চালক রুবেল হোসেনের নিকট ঢাকায় যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, স্যার আমাকে যেখানে যেতে বলবেন আমি তো সেখানেই যেতে বাধ্য। স্যার আমাকে নিয়ে এসেছেন। ঢাকায় যাওয়া ঠিক হয়েছে কি হয়নি-এ বিষয়ে স্যার বলতে পারবেন। আপনি স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।
পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আফসানা আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, গত ১০ এপ্রিল তিন দিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শামসুল হক স্যার। তিনি করোনার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে ফেরার কথা রয়েছে।
সরকারি গাড়ী বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি এই বিষয়ে গণমাধ্যমে কিছু বলতে পারছি না। আপনারা ওনার সঙ্গেই যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।
পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ শামসুল হকের নিকট সরকারি অনুমতি না নিয়ে সরকারি গাড়ী ঢাকায় নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বক্তব্য চেয়ে তার ব্যক্তিগত ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে (০১৬১৪-৮৬০৬৪০) কল করে ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মুলেন্দু রায় সাংবাদিকদের বলেন, পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গত ১০ এপ্রিল ৩দিনের ছুটিতে ঢাকায় নিজ বাসায় গেছেন। লালমনিরহাট জেলার বাইরে সরকারি গাড়ী নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাকে কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি। যদি তিনি বিধি বহির্ভূত এ ধরনের অপরাধ করেন তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।