আলোর মনি রিপোর্ট: বিলের স্মারক নম্বর দিতে প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়া লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরের সেই অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম জেবিকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেছেন কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজের চিঠি পৌঁছালে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে বদলি করা হয়েছে।
তাকে গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে বুধবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে ঘুষ নেওয়ার তদন্ত প্রতিবেদনসহ বদলির সুপারিশ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে পাঠান আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা। অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম জেবি স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগের আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে দীর্ঘ প্রায় ১০বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন। তিনি এ উপজেলারই বাসিন্দা।
অভিযোগে জানা গেছে, গ্রামীণ হাট-বাজার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২কোটি টাকা ব্যয়ে আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি হাটের ৪তলার মধ্যে ওপরের ২তলা নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করে প্রকৌশল দপ্তর। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি হিসেবে কাজটি তদারকি করছেন আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম। প্রায় ২কোটি টাকা ব্যয়ে সেই নির্মাণ কাজটির প্রায় ৫০শতাংশ শেষ হলে তৃতীয় দফায় বিলের আবেদন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেই বিলের কাগজপত্র নিয়ে আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে যান আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলমের ভাতিজা আদিতমারী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ হযরত আলী। এ সময় বিলের আবেদনে স্মারক নম্বর দেওয়ার জন্য ফাইলটি অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম জেবির কাছে পাঠানো হয়। তিনি তখন টাকা ছাড়া স্মারক নম্বর দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। অবশেষে বাধ্য হয়ে প্রথমে ২শত টাকা দিয়ে স্মারক নম্বর বসানোর অনুরোধ করেন। ঘুষ কম হওয়ায় টাকা ছুড়ে ফেলে দেন অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম জেবি। শেষ পর্যন্ত ৫শত টাকা ঘুষ নিয়ে তবেই বিলে স্মারক নম্বর বসিয়ে ফাইলটি অগ্রগামী করেন অফিস সহকারী।
ঠিকাদারের প্রতিনিধি কৃষিবিদ হযরত আলী সাংবাদিকদের বলেন, স্মারক নম্বর বসাতে গেলে অফিস সহকারী জেবি মিষ্টি খাওয়ার আবদার করেন। তাই তাকে প্রথমে ২শত টাকা দিয়েছিলাম। কম হওয়ায় সেই টাকা আমার পায়ে ছুড়ে মারেন এবং আমাকে ভর্ৎসনা করেন।
তিনি বলেন, অফিসারদের লাখ লাখ টাকা ঘুষ দেন, আর আমাদের বেলায় ৫শত/হাজার টাকা বের হয় না। যান স্মারক নম্বর অফিসারের কাছ থেকে নেন। এ কথা বলে তিনি ফাইলটি ফেরত দেন। অবশেষে ৫শত টাকা ঘুষ নিয়ে তবেই স্মারক নম্বর বসিয়ে ফাইলটি অগ্রগামী করেন অফিস সহকারী নুরজাহান জেবি। এদের কাছে ঠিকাদাররা জিম্মি বলেও মন্তব্য করেন হযরত আলী। এমন একটি অভিযোগের ভিত্তিতে ঘুষ গ্রহণের ছবিসহ গত ৪ এপ্রিল প্রকৌশলীর দপ্তরে ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যা মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তার শাস্তির দাবি তোলেন অনেকেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম জেবিকে শোকজ করেন আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় বুধবার (৭ এপ্রিল) তাকে শাস্তিমূলক বদলির সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম জেবিকে আদিতমারী উপজেলা থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় সংযুক্ত করে রংপুর বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে পত্র পাঠানো হয়। এ নির্দেশনায় আগামী রোববার (১১ এপ্রিল) তাকে নতুন কর্মস্থল গাইবান্ধা সদর উপজেলায় যোগদান করতে বলা হয়েছে।
আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা সাংবাদিকদের বলেন, ঘুষ নেওয়ার ছবিসহ যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম জেবিকে শোকজ করা হয়। কিন্তু শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাকে শাস্তিমূলক বদলির সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে পাঠানো হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পর্যালোচনা করে নুরজাহান বেগম জেবিকে বদলি করে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় সংযুক্ত করেছেন। বৃহস্পতিবার বদলির পত্র পাওয়া মাত্র তাকে এ স্টেশন থেকে বিদায় জানানো হয়েছে।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.