আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে জুয়েল (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে কোরআন শরীফ অবমাননার গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ প্রকাশ্যে পোড়ানোর ঘটনায় পাটগ্রাম উপজেলার তদানীন্তন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ এবং দায়িত্ব পালনে তার অদক্ষতা ছিল কিনা তা তদন্তের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর। গত ২১ মার্চ জেলা প্রশাসক আবু জাফর ওই গণবিজ্ঞপ্তি পত্রে স্বাক্ষর করেছেন। এর তদন্তটি হবে আগামী ২৫ মার্চ।
এর আগে গত ৩০ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টিএমএ মমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের উচ্চ মহলে পাঠানো হয়। তবে ওই তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি।
এছাড়াও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনটিও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ০৫.৪৭.৫২০০.০০১.০১.০০৫.২১.৬১ নম্বর স্মারকে ২১ মার্চ জেলা প্রশাসক আবু জাফর স্বাক্ষরিত ওই গণবিজ্ঞপ্তি পত্রে উল্লেখ করা হয়- জনাব কামরুন নাহার (পরিচিতি নম্বর-১৭৪৬৭), প্রাক্তন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পাটগ্রাম-এর বিরুদ্ধে আগামী ২৫ মার্চ সকাল ১১টায় বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ হলরুমে নিম্নস্বাক্ষরকারী কর্তৃক পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগে আবু ইউনুস মোঃ শহিদুন্নবী জুয়েল নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা ও প্রকাশ্যে লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা ও গাফিলতি এবং অদক্ষতার তদন্ত অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম প্রত্যক্ষদর্শী সংশ্লিষ্ট সকলকে উপস্থিত থেকে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করা হলো। গণবিজ্ঞপ্তিটি পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ব্যাপক প্রচার করার জন্য ও বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে একটি কক্ষ প্রস্তুত করার জন্য ওই চিঠিটির একটি কপি অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আবু জাফর সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি নির্দেশনা এসেছে। এটি একটি প্রশাসনিক তদন্ত। এ বিষয়ে আমার কোনও মন্তব্য নেই।
তিনি আরও বলেন, পূর্বের গণবিজ্ঞপ্তির চিঠিটি সংশোধন করা হয়েছে। ঘটনার দিন উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের নামে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৫ মার্চ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তদন্ত করা হবে।
তবে কতজনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাম কৃষ্ণ বর্মণ সদ্য যোগদান করার কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, জেলা প্রশাসকের চিঠি পেয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে।
মামলার তদন্ত বিষয়ে ডিবি পুলিশের ওসি ওমর ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, চাঞ্চল্যকর জুয়েল হত্যা মামলাসহ পৃথক ৩টি মামলারই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত চলমান রয়েছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য যে, ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের বুড়িমারীতে পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার গুজব ছড়িয়ে আবু ইউনুস মোঃ শহীদুন্নবী জুয়েল নামে রংপুরের এক ব্যক্তিকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ছাই করার ঘটনায় পাটগ্রাম থানায় পৃথক ৩টি মামলা রুজু করা হয়। এ তিনটি মামলায় সর্বমোট স্থানীয় ১শত ১৪জনকে এজাহার নামীয় আসামিসহ অজ্ঞাত শত শত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। এখন পর্যন্ত মোট ৪৭জনকে মামলার গ্রেফতার করা হয়েছে।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.