আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের গাইনী বিভাগে চিকিৎসারত রহিমা বেগম নামের এক রোগীর শরীরে “এ পজিটিভ” রক্তের পরিবর্তে “বি পজিটিভ’’ রক্ত দেওয়ায় রোগীর অবস্থা এখন সংকটাপন্ন।
জানা যায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরপর দুবার রোগীর শরীরে অন্য-গ্রুপের রক্ত প্রবেশ করার ফলে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে গেল সোমবার (১৫ মার্চ) লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে। এরপর বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়লে তোলপাড় অবস্থার সৃষ্টি হয় জেলা জুড়ে। এদিকে এমন একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটলেও গেল ৪দিনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এদিকে ক্ষোভের অংশ হিসেবে স্থানীয় মাহমুদুল হাসান মামুন স্মৃতি সংসদসহ আরো ৩টি সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে শনিবার (২০ মার্চ) সকালে সদর হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মানববন্ধনে রোগীর স্বজন ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা এ ঘটনায় প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ জাহিদুল ইসলামকে দায়ী করেন এবং এ ঘটনার সাথে জড়িত সকলের শাস্তির দাবি জানান।
উল্লেখ্য, লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুড়াকুটি গ্রামের রব্বানী ইসলামের স্ত্রী রহিমা বেগম (২৭) শারিরিক রক্তক্ষরণ জনিত কারনে গত রবিবার (১৪ মার্চ) লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের গাইনী বিভাগে ভর্তি হন। ওই দিনই তাকে রক্ত দিতে হবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
প্যাথলজি বিভাগে রহিমা বেগমের রক্ত পরীক্ষা করে জানানো হয় তার রক্তের গ্রুপ “বি পজিটিভ”। এরই মাঝে সাকলাইন সোহান নামের একজন বি পজিটিভ রক্তদাতা এক ব্যাগ রক্ত দান করেন। তারপর ওই রক্ত রোগীর শরীরে প্রবেশ করার পরেই রোগী অস্থিরতায় ভোগে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, যে ডোনারের রক্ত দেওয়া হয়েছে সেই রক্তের তাপমাত্রা ও রোগীর তাপমাত্রা এক না হওয়ায় এ সমস্যা। এরপরের দিন রোগীর আত্মীয় মোকলেছুর রহমান মুকুল নিজেও আরেক ব্যাগ “বি পজিটিভ” রক্ত দান করেন। এই রক্ত প্রয়োগ করার পরে আরও বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন রোগী রহিমা বেগম। তারপর প্যাথলজি বিভাগ থেকে জানানো হয় রক্তের গ্রুপ ভুল হওয়ার কারনেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রোগীর শারিরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকলে গত বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) রোগীকে রেফার করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোগীর স্বামী রব্বানী ইসলাম জানান, তার স্ত্রী রহিমা বেগমের অবস্থা বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে বলে চিকৎসক জানিয়েছেন।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ জাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, প্যাথলজি বিভাগের সহকারী মোজাফ্ফরের ভুলের কারনেই এ ঘটনা ঘটেছে।
এ কথার সূত্র ধরে প্যাথলজি বিভাগের সহকারী মোজাফ্ফরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ এ বিষয়টি ভালো জানেন।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক অসুস্থ্য থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মঞ্জুর মোর্শেদ দোলন সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় শনিবার (২০ মার্চ) সিনিয়র কনসাল্টেন্ট (সার্জারী) ডাঃ আব্দুল হাদীকে প্রধান করেন তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন আসার পরেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।