আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: কখন কোন সবজির চাষ করলে জমিতে বছরে সবচেয়ে বেশিবার চাষ করা যাবে, কীভাবে চাষ করলে সবজি ফসলে কম পরিমাণ সার-বা কিটনাশক লাগবে। ফসল হবে বিষমুক্ত। এখানকার সবজি চাষীরা পোকা-মাকড় ও পশু-পাখির অত্যাচার থেকে যে কোনো ধরনের ফসল রক্ষায় বিষ ব্যবহারের বিপক্ষে। বেগুন পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে জমি নেট দিয়ে ঘিরে রাখে। বেগুন, মরিচসহ সবজি ক্ষেতের পোকা-মাকড় দমনে নেট ব্যবহারের পক্ষে। এভাবে বেগুন, মরিচ চাষে একদিকে বিষ কম লাগে। অন্যদিকে পোকা-মাকড় ও পশু-পাখির অত্যাচার কম হয়। আবার বাজারে বেগুন ও মরিচসহ বিষমুক্ত সবজির চাহিদা বেশি। এ ছাড়া ধান চাষে প্যার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে এলাকার কৃষকরা।
এই সকল ফর্মূলা কাজে লাগিয়ে সবজি ও ধান চাষে বাজিমাত করে চলেছেন লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামের সবজি চাষিরা। তারা পুষ্টি নিরাপত্তা ও দারিদ্র দূরীকরণে সফলতাও দেখিয়ে দিয়েছেন। লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে ২কিলোমিটার দূরে গ্রামটির অবস্থান।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ফুলগাছ গ্রামের কৃষি জমিতে বিভিন্ন সবজি ও সবজির বীজ উৎপাদনে স্থাপিত সারি সারি নেট হাউজ চোখে পড়ে। মানসম্মত সবজি বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে এসব নেট হাউজে।
এলাকার কৃষকরা জানান, ওই নেট হাউজে আবাদ করা হয় বেগুণ, মরিচ বীজ। সঠিক মানের বীজ উৎপাদনের জন্য ওই হাউজের ব্যবস্থা। সাধারণ কৃষির চেয়ে খরচ বেশি বীজ উৎপাদনে, আয়ও কয়েকগুণ বেশি। এখানকার বহু কৃষক সবজি বীজ যেমন উৎপাদন করছেন তেমনি সবজি চাষ করে বাজারজাত করছেন। বাজারে উঠেছে তাদের উৎপাদিত দেশী বেগুন, করলা, ফুলকপি, পাতাকপি প্রভৃতি।
গ্রামের সবজি চাষিরা জানায়, সবজি চাষে তারা বিষমুক্ত সবজি বাজারজাত করণে বদ্ধপরিকর। তাই বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন তারা। তাদের মেনেই নিয়ে তাদের বাজার যেতে হয়না।
প্রতিদিন সকাল হলেই পাইকাররা এসে সেই সবজি ক্রয় করে নিয়ে যায়। বিষমুক্ত সবজি দাম একটু বেশী হলেও বাজারে এর চাহিদা প্রচুর বলে জানান তারা। সবজি উৎপাদনে ভাগ্যবদল হয়েছে তাদের হাসিমুখেই সকলে আনন্দ উচ্ছাসেই তা প্রকাশ করলেন।
অপরদিকে এই গ্রামে উৎপাদন করা হচ্ছে সবজি বীজ।
গ্রামের কৃষকরা জানান, বীজ ক্রয়ের নিশ্চয়তা দিয়েছেন লাল তীর কোম্পানী। সঠিক মানের বীজ উৎপাদনের জন্য কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে কোম্পানীর লোকজন। বিভিন্ন জাতের বীজের আগাম মূল্য নির্ধারণ করে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তারা।
বর্তমানে গ্রামে বীজ উৎপাদনে কৃষকের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এ জেলায় কৃষকদের মাধ্যমে বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল বেগুন, মরিচ ও টমেটো বীজ নেট হাউজ পদ্ধতিতে করতে হয়। করলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, চিচিংগা, ঢেরস প্যাকেটের মাধ্যমে করা হয়। এছাড়া লাউ ও পিয়াজের বীজ করা হয়।
ফুলগাছ ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিম বলেন, এলাকাটি আমরা প্রতিনিয়ত নজরে রেখেছি। কৃষকদের সবসময় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ব্যবসায়ীক কারণে কোম্পানীগুলো তাদের বীজের গুণগত মান ধরে রাখেন। বীজের কোম্পানীগুলোর তৎপরতায় কৃষকরা বীজ উৎপাদনে প্রশিক্ষিত হয়ে উঠছেন, ভবিষ্যতে সরকার কৃষকদের সহযোগিতা দিলে এ অঞ্চলে বীজ উৎপাদন একটি শিল্প হিসেবে গড়ে উঠবে।