আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: বদলে যাচ্ছে লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও ২টি (লালমনিরহাট, পাটগ্রাম) পৌরসভার কৃষি ব্যবস্থাপনা। জমে থাকা বর্ষার পানি নদী, নালা, খাল, বিল, মাঠ থেকে নেমে যাওয়ার সাথে সাথে কোন রকমে মাটিতে মই দিয়ে বোরো আবাদের প্রাথমিক কাজ তথা বীজতলা তৈরির যে প্রক্রিয়াটি চলমান ছিল তা ধীরে ধীরে পুরনো নিয়মের ঘরে চলে যাচ্ছে। বোরো আবাদের বীজতলা তৈরির বিষয়গুলো আগে চিন্তা করতেন না চাষীরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিবিড় তত্ত্বাবধানে চাষিরা জানতে পেরেছেন জলবায়ুর পরিবর্তন জনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করে অধিকহারে বোরো আবাদের ফলন বৃদ্ধির একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। যে পদ্ধতি গ্রহণ করলে একদিকে যেমন ৫০ভাগ বীজ সাশ্রয় হতে পারে অন্যদিকে উৎপাদন ব্যয় ঠিক রেখে বোরো ধানের ফলন ২৫ থেকে ৩০ভাগ বাড়ানো সম্ভব। একই শ্রমে একই ব্যয়ে অধিক হারে বোরো আবাদের জন্য আদর্শ বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। চলতি বোরো মৌসুমে লালমনিরহাট জেলার ৯০ভাগ চাষি বোরো আবাদের প্রাথমিক কাজ তথা বীজতলা তৈরিতে আদর্শ বীজতলা পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।
জানা যায়, বোরো আবাদের আদর্শ বীজতলা তৈরির পদ্ধতি খুবই সহজ। বীজতলা তৈরির জন্য দোআঁশ ও এঁটেল মাটি উপযুক্ত। বীজতলার জন্য উপযুক্ত মাটি উর্বর বা ঝরঝরে হতে হয়। জমি যদি অনুর্বর হয় তাহলে প্রতি বর্গ কিলোমিটার জমিতে ২কেজি হারে পচা গোবর দিতে হবে। এরপর জমিতে ৫-৬সেন্টিমিটার পানি দিয়ে ২ থেকে ৩টি চাষ ও মই দিয়ে ৭ থেকে ১০দিন রেখে দিতে হবে। গোবর পচে গিয়ে নরম হয়ে এলে আবার চাষ ও মই দিয়ে বীজ বপনের উপযোগী করে নিতে হবে। কয়েক ঘন্টা পর বীজ বুনতে হবে। এবার জমির পরিমাণ অনুযায়ী ১মিটার প্রস্থ এবং কমপক্ষে ৫মিটার দৈর্ঘ্য করে বেড তৈরি করে নিতে হবে। বাঁশ বা কাঠের চ্যাপ্টা লাঠি দিয়ে বেডের মাটি সমান করে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে দু’বেডের মাঝ খানে ২৫-৩০সেন্টিমিটার জায়গা যেন ফাঁকা থাকে। এই ফাঁকা অংশটুকুকে নালা বলা হয়। এই নালাকে ব্যবহার করে বীজতলা তৈরি, সার/ ঔষধ প্রয়োগ ও সেচ প্রদান করতে হয়। নালাসহ বীজতলার বেড পলিথিন দিয়ে ২ইঞ্চি পুরো করে ঝুরঝুরা মাটি পলিথিনের কিনারে দিয়ে চাপ দিতে হবে। যাতে করে বাতাসে পলিথিন উল্টে না যায়। এ অবস্থায় ৭ থেকে ৮দিন সবগুলো বীজ এক সাথে গিয়ে উঠতে থাকবে। চারাগুলো সোজা হয়ে সহজে বেড়ে ওঠার জন্য পলিথিনের কিনারে মাটি সরিয়ে উচু করে দিয়ে চাপ দিয়ে রাখতে হবে। এভাবে একটানা ২০ থেকে ২৫দিন রাখলে চারা বেড়ে উঠে রোপণ উপযোগী হবে। সূর্যের আলো পৌঁছে এমন পাতলা স্বচ্ছ পলিথিন ব্যবহার করতে হবে। এভাবে বীজতলা তৈরির অনেক সুবিধা রয়েছে।
আরও জানা যায়, আদর্শ বীজতলায় চাষিকে সতর্ক থাকতে হয়। অতিরিক্ত শীতে কোনক্রমেই পলিথিন সরানো যাবে না। রসের অভাব দেখে সময় মতো সেচ দিতে হবে। পলিথিনের নিচে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে কয়েক ঘন্টা পলিথিন সরিয়ে রাখতে হবে। বৃষ্টির পানি বা কুয়াশা পলিথিনের উপর জমলে তা ফেলে দিতে হবে। সর্বোপরি নিয়মিত নিবিড় পরিচর্যার পাশাপাশি সঠিক জাতের বীজ, বীজ শোধন, সুষ্ট সার, পানি, আগাছা, রোগ ও পোকা থেকে বীজতলা রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।