আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: বর্ষা মৌসুম শেষে লালমনিরহাট জেলার নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়, পুকুর, ডোবায় ধরা পড়ছে না দেশী প্রজাতির সুস্বাধু মাছ। বিগত ২৫ হতে ৩০বছরে দেশীয় ২শত ৬০টি প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায়। প্রাকৃতিক উৎসের মাছ কমে গেলেও হাইব্রিড মাছের উৎপাদন বেড়ে গেছে। ফলে দেশীয় আরো শতাধিক প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব এখন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, বিদেশী মাত্র ২৪টি প্রজাতির হাইব্রিড মাছ চাষের ব্যাপকতায় দেশীয় ২শত ৫০টি প্রজাতির মাছ অস্তিত্বের হুমকিতে পড়েছে। কৃষি জমিতে ব্যাপক হারে কীটনাশক ও মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়ের পানি দূষিত হচ্ছে। ফলে খাল-বিল, জলাশয়ের স্বচ্ছ পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। আর বিষাক্ত পানির কারণে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
আরও জানা যায়, দেশীয় হাইব্রিড জাতের সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, মিরর কার্প, কমন কার্প, বিগহেড, থাই সরপুঁটি, থাই কৈ, থাই পাঙ্গাস, ব্যাক কার্প, পাঁচ প্রজাতির তেরাপিয়াসহ ২৪টি প্রজাতির মাছ চাষ হচ্ছে। হাইব্রিড জাতের মাছ চাষের আগে পুকুর ডোবার পানিতে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোয় মাছ, শামুক ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।
মৎস্যজীবীরা জানান, অধিক মুনাফার আশায় হাইব্রিড মাছের চাষ করতে গিয়ে জলাশয়গুলো থেকে দেশীয় মাছের বিলুপ্তি ঘটানো হয়েছে। এক সময়ের অতি পরিচিত দেশী প্রজাতির মাছ বিশেষ করে কৈ, মাগুর, চাপিলা, শিং, পাবদা, টাকি, রুই, কাতল, মৃগেল, চিতল, রিটা, গুজি আইড়, পাঙ্গাস, বোয়াল, খৈলসার মতো সুস্বাদু দেশীয় মাছগুলো এখন আর তেমন দেখা যায় না। ফলি, বামাশ, টাটকিনি, তিতপুঁটি, আইড়, গুলশা, কাজলি, গাং মাগুর, চেলা, বাতাসি, রানি, পুতুল, টেংরা, পাবদা, পুঁটি, সরপুঁটি, মলা, কালোবাউশ, শোল, মহাশোল, গোঙসা, রায়াক, রয়না, বাতাসি, বাজারি, বেলেসহ ৬৫টি প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। কোনো কোনো মাছ সম্পূর্ণ বিলুপ্তির পথে। কোনো কোনো মাছ বংশসহ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পুকুর রয়েছে ২০হাজার ৭শত ৯২টি আয়তন ২হজার ৩শত ৫৮.৩হেক্টর। নদী রয়েছে ৮টি আয়তন ১হাজার ৬শত ৯৬হেক্টর। বিলের সংখ্যা ৫৫টি আয়তন ১হাজার ৬শত ১৩হেক্টর। প্লাবনভূমির সংখ্যা ৯৮টি আয়তন ৩হাজার ৯শত ৭১হেক্টর। খালের সংখ্যা ২৬টি আয়তন ২শত ৮৬হেক্টর। ধানক্ষেতে মাছ চাষ সংখ্যা ৩হাজার ৬শত ১০টি আয়তন ৭শত ৩০হেক্টর। অন্যান্য ৪শত ২৪হেক্টর আয়তন ৩শত ৯হেক্টর। নার্সারীর সংখ্যা ৬শত ৪৮টি আয়তন ২শত ৩৫.৮২হেক্টর। সরকারী মৎস্য হাচারীর সংখ্যা ১টি। বেসরকারী মৎস্য হ্যাচারীর সংখ্যা ৬টি। মানুষের সৃষ্ট পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতিতে তার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ায় জলাশয়ে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, লালমনিরহাটের তিস্তা, বুড়ি তিস্তা, ধরলা, রত্নাই, স্বর্ণামতি, সানিয়াজান, সাকোয়া, মালদহ, ত্রিমোহনী, মরাসতি, গিরিধারী, গিদারী, ধোলাই, শিংগীমারী, ছিনাকাটা, ধলাই, ভেটেশ্বর এ এক সময় মাছের ভান্ডার ছিল। এছাড়া লালমনিরহাট জেলার বেশ কিছু নদ-নদী এখন প্রায় বিলীন। এ রকম কয়েকটি নদ-নদী হলো- চাতলা, দেউল। লালমনিরহাট জেলার অনেকগুলো নদ-নদীতে বোরো মৌসুমে এখন ধানের চাষ হয়। লালমনিরহাটের সতী, চাতলা, মালদহ, সাঁকোয়া, ভেটেশ্বর, স্বর্ণামতি, রত্নাই নদীতে ধান ফলানো হয়। তিস্তায় ধান-ভূট্টাসহ বিভিন্ন শস্য উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু এসব নদী-নালা, খাল-বিল খনন ও সংস্কার না করায় দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে কমে গেছে মাছের বংশবৃদ্ধি ও উৎপাদন। বিগত ২০০০ সালে ৫৪টি প্রজাতির মাছকে বিপন্ন ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (আইইউসিএন)।
লালমনিরহাটের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। সরকারি উদ্যোগে এ অঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, জলাশয় পুনঃখননের মাধ্যমে পানির ধারণক্ষমতা বাড়ানোর দাবি লালমনিরহাটের মৎস্যচাষীসহ আপামোর জনসাধারণের।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.