আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: চারদিকে যতদূর দুচোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। সবুজের সমারোহে ভরে উঠেছে লালমনিরহাট জেলার ৪০টি গ্রাম। এ জেলার ৪০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে মঙ্গা জয়ের বিপ্লব ঘটিয়েছেন। হাসি ফুটেছে প্রতিটি কৃষক-কৃষাণীদের ঘরে ঘরে। এসব গ্রামের চাষিরা সবজি চাষে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছেন।
প্রতিদিন ওইসব গ্রাম থেকে হাজার হাজার মন সবজি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। অল্প সময়ে বেশি লাভের কারনে সবজি চাষ করেই স্বাবলম্বী হয়েছেন ৪০টি গ্রামের হাজার হাজার কৃষক পরিবার। গ্রীষ্মকালীন সবজির পাশাপাশি আগামাম শীতের সবজির ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত এখন গ্রামের কৃষক মানুষ।
জানা যায়, বছরজুড়েই এখানে রকমারি সবজির চাষ হয়। এখন তারা শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতিমধ্যে বিক্রিও শুরু হয়েছে শীতকালীন সবজির।
আরও জানা যায়, ১২ মাসই তারা চাষ করেন নানা রকমারি সবজি। নিজের চাহিদা শেষে প্রতিদিন তা বাজারে বিক্রিও করা যায়। তা দিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলে তাদের। যা ধান চাষ করে সম্ভব নয়। সবজি চাষ করে শুধু লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলাই নয়, লালমনিরহাট সদর উপজেলার সবজি-খ্যাত গ্রামগুলোর হাজার হাজার কৃষক পরিবারের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। আর এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মন রকমারি সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। প্রায় ২০বছর আগে থেকে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের বড় কমলাবাড়ী, কুমড়িরহাটসহ কয়েকটি গ্রামে সবজি চাষ শুরু হয়। আস্তে আস্তে তা বাড়তে থাকে।
সবজি চাষি কয়েকজন জানান, তারা বাপ-দাদার আমল থেকেই সবজি চাষ করে আসছেন। এ কমলাবাড়ী ইউনিয়নসহ জেলার হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জ এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রামের কৃষকের প্রধান ফসল নানা জাতের সবজি। সবজি খ্যাত গ্রাম এর মধ্যে রয়েছে- শিয়ালখাওয়া, চাঁপারহাট, ভোটমারী, দৈখাওয়া, সিঙ্গিমারী, কুমড়িরহাট, চন্দনপাট, বড়কমলাবাড়ী, হাজীগঞ্জ, চণ্ডীমারি, কর্ণপুর, দুড়াকুটি, ফুলগাছ, কোদালখাতা, ভাটিবাড়ী, কাকেয়া টেপা, বনগ্রাম, শিবেরকুটি অন্যতম।
সবজি চাষিরা আরও জানান, আগাম জাতের শীতকালীন সবজি জমিতে আবাদ করে খরচ বাদে ২৫-৩০হাজার টাকা আয় করেছেন। বছরজুড়েই বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ হয়ে থাকে। খরচ একেবারে কম না হলেও সবজি চাষ করে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে এ জেলার জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন সবজি লাগানো হয়েছে। ইতিমধ্যে সবজি দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি এখনো লাগানো অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে শিম, মুলা, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন অন্যতম।
আরও জানা যায়, লালমনিরহাট জেলায় নানা জাতের সবজি চাষ হয়ে থাকে। ওইসব গ্রামে কৃষি বিভাগ নিয়মিত পরিদর্শনে যান ও ফসলের রোগবালাই সম্পর্কে পরামর্শ দেন। এসব সবজি রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। জেলার আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের কুমড়িরহাট ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ীহাটের মাঠে ও গোশালা বাজারে প্রতিদিন সকালে বিশাল পাইকারি বাজার বসে।
বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, ভরা মৌসুমে এখান থেকে প্রতিদিন ৩০-৪০ ট্রাক সবজি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়।
সবজি চাষিরা জানান, গ্রামের বেশির ভাগ রাস্তাই কাঁচা। বর্ষাকালে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তা ছাড়া নিচু এলাকা হওয়ায় প্রায় প্রতি বছর অধিকাংশ গ্রামই বন্যায় আক্রান্ত হয়। এতে ফসলের ক্ষতি সাধিত হয়।