আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নে পাথর বোঝাই ট্রাকের সাথে যাত্রীবাহী চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় লোকো মাস্টার জহুরুল হক প্রাণে রক্ষা পেলেও আহত হয়েছে। এছাড়াও ট্রেনটি দূর্ঘটনায় কবলিত হওয়ার সময় ট্রেনের ভেতরে থাকা যাত্রীদের হুড়োহুড়িতে অন্তত ২০জন নারী-শিশু যাত্রীর বেশি আহত হয়েছে।
শনিবার সকালে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের স্টেশন থেকে আউটার সিগন্যানের প্রায় দেড়শ গজ বাইরে উফারমারা রেলওয়ে ক্রসিং (প্রথম বাঁশকল) পার হওয়ার পড়েই একটি পাথর বোঝাই ট্রাকের সাথে বুড়িমারী কমিউটার ট্রেনের মধ্যে এ দূর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও একাধিক ট্রেন যাত্রী জানান, পাথর বোঝাই ট্রাকটি রেললাইনের নিকট থেকে সড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এ সময় লালমনিরহাট গামী চলন্ত ট্রেনটি সজোরে ট্রাকটির পেছনের অংশে ধাক্কা দেয়। এতে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। সংঘর্ষে ট্রেনটির ক্ষয়ক্ষতি হলেও ট্রাকটির কোনো ক্ষতি হয়নি।
বুড়িমারী ও পাটগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাষ্টারের দায়িত্বে থাকা মোকসেদ আলী জানান, বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশন থেকে লালমনিরহাট বিভাগীয় সদর দফতরের দিয়ে শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় ছেড়ে আসা বুড়িমারী কমিউটার (৬৬ ডাউন) ট্রেনটি আউটার সিগন্যাল পার হওয়ার পড়েই রেললাইনের ধারে পাথর বোঝাই একটি ট্রাকের সাথে ট্রেনের সাথে ধাক্কা লাগার সাথে সাথে লোকোমোটিভের একটি সাইড দুমড়ে মুচড়ে যায়। এছাড়াও লোকোমোটিভের পরের বগিটির কিছু অংশ ও চতুর্থ নম্বর বগিটির একটি সাইড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চালক জহুরুল হক (৫২) বাম গাল ও বাম হাতের কয়েকটি স্থানে কাচের আঘাতে কেটে গেছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সকাল ১১টা ৪০মিনিটে ট্রেনটি লালমনিরহাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। তবে ট্রাকটির তেমন কিছু হয়নি।
লোকো মাস্টার জহুরুল হক বলেন, ‘আমি সতর্ক না হলে হয়তো আজ লোকোমোটিভের ভেতরেই চাপা পড়ে মারা যেতে পারতাম। কিন্তু মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত ও কৌশলের কারণে বেঁচে গিয়েছি। ট্রেনটিকেও সুরক্ষিত রাখতে পেরেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘রেলওয়ের জায়গার কোনো অভাব নেই। তাহলে রেললাইনের ধারটি কেন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশন থেকে উফারমারা পর্যন্ত রেললাইনের দুইধারে এমনভাবে লিজ হয়েছে। প্রায় দুই কিলোমিটার রেললাইনের উপর পাথর ব্যবসার মাঠ তৈরি হয়েছে। যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য ট্রাক পাথর লোড-আনলোড করা হয়। আজও ট্রাকটি পাথর লোডিং শেষে ট্রেন আগমন দেখে সড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ট্রাক চালক মোড় নিতে গিয়ে আচমকা প্রথমে লোকোমোটিভে আঘাত হানে এবং পরে ট্রাকটি দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ট্রেনের আরো দুইটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে আমরা সকলে বড় ধরনের একটি দূর্ঘটনা থেকে সবাই রক্ষা পেয়েছি।’
জানতে চাইলে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার তাপস কুমার দাস বলেন, ‘পাটগ্রাম ও বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশন মাষ্টার মোকসেদ আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বুড়িমারী কমিউটার ট্রেনের দুইটি বগিতে ড্যাশ লেগেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বগি দু’টি মেরামত করা যাবে। তবে কানাডিয়ান লোকোমোটিভটির সামনের ডান দিকের কিছু অংশ ও লোকো মাষ্টারের বসার ডানদিকের অংশটি দুমড়েমুচড়ে গেছে। ভাগ্যক্রমে লোকো মাষ্টার ও যাত্রী সাধারণসহ সকলে বড় ধরনের দূর্ঘটনা থেকে প্রাণে বাঁচলেও কাচের আঘাতে বাম গালে ও হাতে কেটে গেছে লোকো মাষ্টারের। তাকে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে খাতিয়ে দেখছি।’
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.