মোয়াজ্জেম হোসেন, লালমনিরহাট: খাবারের অভাবে থাকা লালমনিরহাটের নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারানো ও বানভাসী লোকজন বন্যার কোমর পানি ভেঙে সরকারি ত্রাণ সামগ্রী নিলেন। জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিনসহ জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মচারীরা বৃহস্পতিবার মহিষখোচা ইউনিয়নের চরগোবর্ধন ও অন্যান্য এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় নদী ভাঙনের শিকার ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অভাবী লোকজনকে নিজের কোমর পানি ভেঙে সরকারি ত্রাণ সামগ্রী নিতে দেখা যায়।
এদিকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গোড্ডিমারী ইউনিয়নে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টার পরেও বিপদসীমার ১২সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানিপ্রবাহিত হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এ আকস্মিক বন্যায় কবলিতদের সুরক্ষায় জেলা প্রশাসন ১১৫মেট্টিক টন জিআর চাল ও ৮১০প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। বন্যা কবলিতদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করার তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় লোকজনকে কোমর পানি ভেঙে সরকারি ত্রাণ সামগ্রী নিতে দেখা যায়।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উজানের পাহাড়ী ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তায় আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকাল তিনটায় বিপদসীমার ৩৫সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানিপ্রবাহ ছিল কিন্তু দিনগত সন্ধ্যায় হঠাৎই তিস্তার পানিপ্রবাহ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় পানিপ্রবাহ বেড়ে রাত ১২টায় বিপদসীমার ৫২দশমিক ৮৭সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। বৃহস্পিতবার সকাল ৬টার পর থেকে পানিপ্রবাহ কমতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় ১৫সেন্টিমিটার পানিপ্রবাহ কমে বিপদসীমার ৫২দশমিক ৭২সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী এএসএম আমিনুর রশীদ।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় পাউবো’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পানি পরিমাপক) এএসএম আমিনুর রশীদ বলেন, ‘ভারতের সিকিম, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং সহ আশপাশে ভারী বর্ষণ ও উজানে ঢলের কারণে এ পরিস্থিতি হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার পর ভারতের গজল ডোবা ব্যারাজের উজানের সার্বিক পরিস্থিতি জানা যাবে। এর উপর নির্ভর করছে পানিপ্রবাহ কী অবস্থায় থাকবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর অঞ্চলে গত এক সপ্তাহ থেকে ভারী বৃষ্টিপাদে নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তিস্তা নদী তীরবর্তী অঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ কারণে জনজীবনে কিছুটা দূর্ভোগ বেড়েছে।
গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিপাতে শাকসবজি ক্ষেত ও বীজতলার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, কৃষির ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের জন্য মাঠ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তথ্য আসার পর বিস্তারিত জানানো হবে।
হাতীবান্ধা উপজেলার গোড্ডিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, ‘হঠাৎ তিস্তায় বন্যা দেখা দেওয়ায় অনেক মানুষের বাড়ী পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।’
এদিকে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, পঞ্চম দফার বনায় মহিষখোচা ইউনিয়নের চরগোবর্ধন সহ অন্যান্য এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃত বানভাসী ও নদী ভাঙনের শিকার পরিবার গুলোর মাঝে বরাদ্দ পাওয়া ২৫মেট্টিকটন জিআর চাল ও ৩শত প্যাকেট শুকনা খাবার বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলা প্রশাসক স্যার, জনপ্রতিনিধিসহ আমরা নৌকায় করে এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছি। এ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, তিস্তার পানিবৃদ্ধি পেয়ে আকর্ষিক বন্যার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পানিবন্দী পরিবারের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় পঞ্চম ফেজের বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১১৫মেট্টিকটন জিআর চাল ও ৮১০প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চরগোবর্ধন এলাকার পানিবন্দী পরিবার গুলোর মাঝে ৩শত প্যাকেট শুকনা খাবার ও ২৫মেট্টিকটন জিআর (ত্রাণ) চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.