আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় সুবিধা বঞ্চিত নারীদের মাঝে ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর (এনআইডি) ব্যবহারসহ একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নামে ঋণ বরাদ্দ, ঋণ প্রদানের নামে উৎকোচ গ্রহণসহ নানা অভিযোগ উঠেছে হাতীবান্ধা উপজেলা সমবায় অফিসের বিরুদ্ধে।
এসব অনিয়মের পুরো কলকাঠি নিয়ন্ত্রণ করেন মোক্তাকিন ইসলাম নামে ওই অফিসের এক অফিস সহায়ক। সুবিধাভোগীরা উন্নত জাতের গাভী ক্রয় শর্তে ঋণ গ্রহণ করলেও বেশিরভাগ সুবিধাভোগী গাভী ক্রয় করেনি। ফলে ওই প্রকল্পের লক্ষ্য ভেস্তে যেতে বসেছে।
অভিযোগ রয়েছে, ওই অফিস সহায়ক মোক্তাকিন ইসলাম স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় পুরো অফিস তার নিয়ন্ত্রণে। তার কথা না শুনলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন মোক্তাকিন ইসলাম।
জানা গেছে, ওই উপজেলা সমবায় অধিদপ্তরের আওতায় উন্নত জাতের গাভী পালনের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষে সিঙ্গিমারী ও ভেলাগুড়ি ইউনিয়নে ৪র্থ পর্যায়ে ৫০জন নারীর মাঝে জনপ্রতি ১লক্ষ ২০হাজার টাকা করে মোট ৬০লক্ষ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। সিঙ্গিমারী ইউনিয়নে সুবিধাভোগী ২৫জনের মধ্যে ২০জনের নাম দিয়েছে ওই অফিসের অফিস সহায়ক মোক্তাকিন ইসলাম। সেই তালিকায় স্থান পেয়েছে তার দুই মামী আমেনা বেগম ও অহুরন নেছা, মামাত ভাইয়ের স্ত্রী আয়শা বেগম, মামাত বোন আমিনা বেগমসহ তার অনেক আত্মীয়স্বজন। অনেকের নামে ঋণ উত্তোলন করে সেই ঋণের টাকা নিয়েছেন অফিস সহায়ক মোক্তাকিন ইসলাম এমন অভিযোগও রয়েছে।
মোক্তকিন ইসলাম তার মামাত বোন ঋণ সুবিধাভোগী আমিনা বেগমের ঋণ বিরতণ ফাইলে ১১সংখ্যার ৩২৫৪০০০০৩৯৫ এ জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ব্যবহার করা হলেও ওই পরিচয় পত্র নম্বরের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি স্থানীয় নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করে।
এ ছাড়া ঋণ দেয়ার নামে ওই প্রকল্পের সুবিধাভোগী মুন্নি খাতুনের কাছে ১৮হাজার, মাজেদা বেগমের কাছে ১৩হাজার, মহিতন নেছার কাছে ১৩হাজার ৩শত ও আজিমা বেগমের কাছ থেকে ৬হাজার ৬শত টাকা অফিসের খরচ বলে গ্রহণ করেন ওই অফিস সহায়ক মোক্তাকিন ইসলাম। ঋণ সুবিধাভোগী নারীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
অভিযোগ রয়েছে, মোক্তাকিন ইসলাম হাতীবান্ধা উপজেলা সমবায় অফিসের অফিস সহায়ক হলেও পুরো অফিসের সকল কার্যক্রম তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। ওই অফিসে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী তার কথা মত না চললে মোক্তাকিন ইসলাম স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে বিভিন্নভাবে ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হয়রানী করেন। অফিস সহায়ক হলে তার কার্যক্রম যেন কর্মকর্তার মত।
সুবিধাভোগীরা উন্নত জাতের গাভী ক্রয় শর্তে ঋণ গ্রহণ করলেও বেশিরভাগ সুবিধাভোগী গাভী ক্রয় করে নাই। তারা অফিস সহায়ক মোক্তাকিন ইসলামের মাধ্যমে ভুয়া গাভী ক্রয়ের রসিদ ম্যানেজ করে তা জমা দিয়ে ঋণ উত্তোলন করেছেন।
তবে টাকা নিয়ে ঋণ প্রদানের অভিযোগ ও অফিস নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ অস্বীকার করে অফিস সহায়ক মোক্তাকিন ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে ঋণ দেয়া নিয়ম আছে। অফিস যাকে ভালো মনে করবে তাকে ঋণ দিবে।
হাতীবান্ধা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বিধু ভূষণ রায় সাংবাদিকদের বলেন, আমি এ অফিসে যোগদানের আগেই ঋণ কার্যক্রম অনুমোদন হয়েছে। আমি যোগদান করে ঋণের চেক বিতরণ করেছি মাত্র। তালিকায় অনিয়ম হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। অফিস সহায়ক মোক্তাকিন প্রসঙ্গে বলেন, শুনেছি সে স্থানীয় হওয়ায় বিভিন্ন সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা ভাবে হয়রানী করেন।
লালমনিরহাট জেলা সমবায় কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ঋণ বিতরণে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও যদি অনিয়ম হয়েছে কেউ এমন অভিযোগ করেন তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।