মোয়াজ্জেম হোসেন, লালমনিরহাট:
‘শত গানে বঙ্গবন্ধু’ বই থেকে সাজেদ ফাতেমীর নাম ও গান বাতিল করা না হলে লালমনিরহাটকে অচল করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. মতিয়ার রহমান।
শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাট মিশন মোড়ে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সংসদ কমান্ডের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. মতিয়ার রহমান এই ঘোষণা দেন।
তিনি আরো বলেন, যদি অবিলম্বে শত গানে বঙ্গবন্ধু বই থেকে রাজাকার পরিবারের সদস্য সাজেদ ফাতেমীর নাম ও গান বাতিল করা না হয়। তাহলে লালমনিরহাট ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, সাংস্কৃতিক কর্মী, মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বশ্রেণি পেশার মানুষ রাজপথে নেমে সবকিছু অচল করে দেওয়া হবে। যতক্ষণ ওই রাজাকার পুত্রের নাম বাতিল করা হবে না ততক্ষণ আমরা রাজপথেই থাকবো। কোন কিছুই চলতে দেওয়া হবে না।’
মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ‘আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি কিন্তু ট্রেনিং জমা দেইনি। তাই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যদি সাজেদ ফাতেমীর নাম ও তার গান বাদ দেওয়া না হয় তাহলে আমরা লালমনিরহাটকে অচল করে দেবো। তখন যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এর জন্য সাজেদ ফাতেমীকেই তার দায় নিতে হবে।’
মানববন্ধনে সাজেদ ফাতেমীর পিতা সোলায়মান মিয়া স্বীকৃত রাজাকার ও সোলায়মান মিয়ার বিয়াই এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকার উল্লেখ করে বক্তারা বক্তব্য রাখেন। শত গানে বঙ্গবন্ধু বই থেকে রাজাকার পুত্র সাজেদ ফাতেমীর রচিত ‘মহামানব’ ও ‘তুমিই পিতা’ গান দুইটি এবং নাম প্রত্যাহার অবিলম্বে করা না হলে লালমনিরহাটকে অচল করার হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
‘আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান’ সংসদ কমান্ডের লালমনিরহাট জেলা শাখার আহবায়ক আইনজীবী ইকবাল হোসেন মামুনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন লালমনিরহাট সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর সিদ্দিক, বীরমুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার সভাপতি মোড়ল হুমায়ুন কবীর, সাংস্কৃতিক কর্মী পিকে বিক্রম, নাট্যশিল্পী সাইফুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোশারফ হোসেন মামুন।
আমরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের ব্যানারে মানববন্ধনে অংশ নেয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা, রংধনু নাট্যগোষ্ঠি ও সবুজ বাংলাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।
‘শত গানে বঙ্গবন্ধু’ গানের সংকলন বই নিয়ে এবং সাজেদ ফাতেমী সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব (উপ-সচিব) নওসাদ হোসেন মোবাইলে (০১৭১৩-০৪৭৫৭১) বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। শত গানে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বেশিকিছু জানি না। তবে আমাদের সকল বিষয়ে বক্তব্য প্রদানের অথরীটি হলেন ডিজি লিয়াকত আলী লাকী স্যার। আপনি স্যারের সাথেই কথা বলতে পারেন।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ডিজি লিয়াকত আলী লাকীর ব্যবহৃত মোবাইলে (০১৭১১-৫৩৭৬১৮) কল করা হলে তিনি রিভিস না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শত গানে বঙ্গবন্ধু সংকলন থেকে গান ও নাম বাদ দেওয়ার দাবিতে লালমনিরহাটের অনুষ্ঠিত মানববন্ধন সম্পর্কে সাজেদ ফাতেমী বলেন, ‘সারাদেশ থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বঙ্গবন্ধুর ওপর গীতিকারদের স্বরচিত গান আহবান করেছিল। এতে দেশের শত শত গীতিকার তাদের নিজের লেখা গান পাঠান। আমিও তাদের মধ্যে একজন। শিল্পকলা একাডেমিতে জমা দেওয়া গানের মধ্য থেকে ১০০টি গান নির্বাচন করে শত গানে বঙ্গবন্ধু নামে একটি বই প্রকাশ করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এতে ‘মহামানব ও তুমিই পিতা’ শিরোনামে আমার লেখা দুইটি গান স্থান পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু একজন বিশ্বনেতা, তাঁর প্রসংশা করে যেকোনো ব্যক্তি বা মতাদর্শের মানুষ গান, কবিতা বা নিবন্ধ লিখতেই পারে। যেখানে আমিও একজন বঙ্গবন্ধুর ভক্ত ও আওয়ামী মতাদর্শের মানুষ হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির গান আহবানে অংশ নেই। ওই বইয়ে আমার গান স্থান পাওয়ায় আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। যাঁরা আমার নাম ও গান দুইটি বাতিল করার দাবী জানাচ্ছে, তারা প্রকৃত অর্থে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী নয়।’
সাজেদ ফাতেমী তার পিতা মরহুম ডাঃ সোলায়মান মিয়া সম্পর্কে বলেন, ‘আমার পিতা কখনোই রাজাকার ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাকে রাজাকার বলার মধ্যদিয়ে দেশের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মানিত করা হচ্ছে। এছাড়া দন্ডপ্রাপ্ত রাজাকার এটিএম আজাহারুল ইসলাম আমার সাথে কোনো সম্পর্ক যুক্ত নয়।’
লালমনিরহাট জেলা জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আলাউল ইসলাম ফাতেমী পাভেল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘হাতের যেমন পাঁচটি আঙ্গুল সমান নয়। তেমনি আমার পরিবারের ৯ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সকলে একই মতাদর্শের হবেন না, এটাই স্বাভাবিক। তবে প্রত্যেকের যেমন চিন্তার স্বাধীনতা আছে তেমনি আমারও চিন্তার স্বাধীনতা মতে আওয়ামী আদর্শ ধারন করি।’