লালমনিরহাটে অপহরণকৃত শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার, চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার ও হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে।
বুধবার (১২ মার্চ) লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোঃ তরিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমনটিই জানিয়েছেন।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোঃ তরিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট সদর থানার অপহরণকৃত শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার, চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার ও হত্যার রহস্য উদঘাটন প্রসঙ্গে। জেলা গোয়েন্দা শাখা ও লালমনিরহাট সদর থানার এর একটি যৌথ আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত- ১০/০৩/২০২৫ খ্রিঃ তারিখ সময় রাত্রী আনুমানিক- ১১.৪৫ ঘটিকার সময় লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর থানাধীন ৮নং গোকুন্ডা ইউপি রতিপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করিয়া চাঞ্চল্যকর অপহরণকৃত শিশু হত্যা মামলার আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে লালমনিরহাট থানায় মামলা রুজু হলে উক্ত আসামীদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ সোহান ইসলাম (২১), পিতা- মোঃ শহিদুল হক (৪৫), মাতা-মোছাঃ শাহানা বেগম, ২। মোঃ শহিদুল হক (৪৫), পিতা-মোঃ নুর ইসলাম, মাতা-অজেয়া বেগম, ৩। সোহানের মা, উভয়সাং-রতিপুর, ফকিরটারী, ওয়ার্ড নং- ০৪, গোকুন্ডা ইউপি, থানা- লালমনিরহাট সদর, জেলা- লালমনিরহাট।
লালমনিরহাট সদর থানার মামলা নং-৩১, তাং- ১১/০৩/২০২৫ খ্রিঃ, ধারা-৩৬৫/৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড এর ঘটনার নিহত ভিকটিম। শাকিল (০৯), পিতা-শফিকুল, মাতা-মোছাঃ জয়নব বেগম, সাং-রতিপুর, বড়মসজিদ ফকিরটারী, ওয়ার্ড নং-০৪, গোকুন্ডা ইউপি, থানা- লালমনিরহাট সদর, জেলা-লালমনিরহাট এর মৃতদেহ উদ্ধার ও আসামী সোহান এবং শহিদুলসহ ০৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাকৃত আসামী সোহান ইসলামকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে ঢাকা নারায়ণগঞ্জে রত্না (২৩) মোবাইল-০১৭৯৮৮-৪৫২৪৬, পিতা- মোঃ মতি মাস্টার, সাং-ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা নামের এক মেয়ের সাথে ৩/৪ বছর ধরে প্রেম করে। রত্নার সাথে ঈদের পর বিবাহ হওয়ার কথা। রত্নাকে বিবাহ করার জন্য তার টাকার প্রয়োজন। সে চিন্তা করে, কিভাবে টাকা ম্যানেজ করবে। তারপর আসামীর মাথায় চিন্তা আসে যে ভিকটিম শাকিল এর মা সুদের ব্যবসা করে। ভিকটিমের মার অনেক টাকা সুদের উপরে দেওয়া আছে। ভিকটিম শাকিলকে লুকিয়ে রাখলে তার মায়ের নিকট থেকে মুক্তিপন আদায় করা যাবে। সেই মোতাবেক গত ১০/০৩/২০২৫ খ্রিঃ তারিখে দুপুর অনুমান- ০১.৪৫ ঘটিকার সময় লালমনিরহাট থানাধীন গোকুন্ডা ইউনিয়নের ওয়ার্ড নং-৪, রতিপুর, ফকিরটারী আসামী সোহান ভিকটিমকে ৩০ (ত্রিশ) টাকা দিয়ে মাটি অপসরনের কাজের কথা বলে কৌশলে নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে আসে। আসামীর বাবা শহিদুল এর শয়ন ঘরে ভিকটিম শাকিলকে নিয়ে যায়। প্রথমে পাটের রশি দিয়ে ভিকটিম শাকিল এর হাত-পা বাধলে ভিকটিম পালানোর চেষ্টা করে। পরে সবুজ রংয়ের রশি দিয়ে ভিকটিমের গলায় পেচিয়ে ধরে, বুকের উপরে উঠে বসে। এক পর্যায়ে ভিকটিম চিৎকার করলে আসামী সোহান ভিকটিমের মুখ ও আসামী শহিদুল ভিকটিমের পা চেপে ধরে। ভিকটিম (শাকিল) এর মৃত্যু নিশ্চিৎ হলে আসামীদ্বয় পরিকল্পনা করে ভিকটিমকে নিজ বাসার পশ্চিম দিকে টয়লেটের সেপটি ট্যাংকের প্রায় ৫-৬ ফিট নিচে মাটি চাপা দেয়। গত- ১১/০৩/২৫ তারিখ, সময়-১৭.১৫ ঘটিকায় আসামী সোহানের দেখানো মতে আমাদের যৌথ অভিযাত্রীক টিম আসামী সোহানের বাসায় অভিযান পরিচালনা করে আসামীগণের বাসার পশ্চিম দিকে কাঁচা টয়লেটের সেপটি ট্যাংকের প্রায় ৫-৬ ফিট মাটি নিচে হতে হাত-পা বাধা ও গলায় লুঙ্গী পেচানো অবস্থায় ভিকটিম এর মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। মূলত আসামী সোহানের কথিত প্রমিকাকে বিবাহের জন্য টাকা এবং তার পিতা আসামী শহিদুল এর ঋনের দায় মুক্তির টাকার প্রয়োজনে ভিকটিম শাকিলকে অপহরণের পর হত্যা করে, পরবর্তীতে মুক্তিপন দাবী করে। আসামী সোহান গত- ১০/০৩/২৫ রাত্রী ১৯.০৫ ঘটিকার দিকে ভিকটিম শাকিলের মা (জয়নব) কে ০১৩২০৯৮৫১৪৬ নম্বর হইতে মোবাইলে কল দিয়ে ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করে। উক্ত মুক্তিপনের টাকা দিয়ে নারায়নগঞ্জের কথিত প্রমিকা রত্নার সাথে দেখা করবে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে আরোও জানা যায় গ্রেফতারকৃত আসামী সোহানের কথিত প্রেমিকাকে বিবাহের জন্য টাকা ও আসামী শহিদুলের ঋনের দায় মুক্তির টাকার প্রয়োজনে উল্লেখিত ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে মর্মে ধারণা করা হচ্ছে। বিস্তারিত অনুসন্ধান কার্যক্রম ও আনইগত প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। এ ঘটনা সংক্রান্তে ভিকটিম শাকিলের মৃতদেহ ও হত্যার কাজে লুকানোর আসামী শহিদুল এর ব্যবহৃত লুঙ্গী উদ্ধার করা হয়।