লালমনিরহাটের মস্তকবিহীন চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামী ডিবি পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার ও হত্যার রহস্য উদঘাটন প্রসঙ্গে লালমনিরহাট জেলা পুলিশের প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১০ মার্চ) দুপুর ১২টা ৩০মিনিটে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ এ প্রেস ব্রিফিংয়ে এমনটিই জানিয়েছেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোঃ তরিকুল ইসলাম।
এ সময় লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) এ. কে. এম ফজলুল হক, লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ নুরনবী, আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আকবর আলী, লালমনিরহাট ডিবির অফিসার ইনচার্জ সাদ আহম্মেদসহ অন্যান্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও লালমনিরহাটের কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোঃ তরিকুল ইসলাম পাঠকৃর্ত প্রেস রিলিজ সূত্রে জানা গেছে, জেলা গোয়েন্দা শাখা লালমনিরহাট এর একটি আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ০৯/০৩/২০২৫ খ্রি. তারিখ সময় দুপুর আনুমানিক ১৫.৫০ ঘটিকায় লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট থানাধীন পিংকির মোড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করিয়া মস্তকবিহীন চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার করা হয়। তার নাম মোঃ আশরাফুল (৫৮), পিতা- মৃত নওয়াব আলী, মাতা- মৃত ফাতেমা খাতুন, সাং- নামাটারী (কুটিবাড়ী), ওয়ার্ড নং- ০৩নং, থানা- আদিতমারী, জেলা- লালমনিরহাট।
লালমনিরহাট থানার মামলা নং- ০৯/১১৬, তাং- ০৫/০৩/২০২৫ খ্রিঃ, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড এর ঘটনার নিহত ভিকটিম হাসিনা বেগম (৪০), পিতা- মৃত কাশেম আলী, মাতা- আছিয়া বেগম, গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ আশরাফুল (৫৮) এর ২য় স্ত্রী। গ্রেফতাকৃত আসামী আশরাফুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ০৪/০৩/২০২৫ খ্রিঃ তারিখে রাত্রী অনুমান ০৯.০০ ঘটিকায় লালমনিরহাট থানাধীন ১নং মোগলহাট ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড এর ১নং ফুলগাছ মৌজাস্থ ফুলগাছ নূরানী ক্যাডেট মাদ্রাসা গামী কাঁচা রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে রাস্তা হতে অনুমান ২০০ গজ পশ্চিমে মোঃ শফিকুল ইসলাম এর ভুট্টার ক্ষেতে একাধিক ব্যক্তির সহায়তায় মস্তক বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তীতে আসামী নিজের ব্যবহৃত ব্যাটারী চালিত অটোতে করে বিচ্ছিন্ন মস্তক নিজ বাড়ীতে নিয়ে যান এবং প্রথম স্ত্রীকে দেখান পাশাপাশি গত ০৫/০৩/২০২৫ খ্রিঃ তারিখ অনুমান ভোর রাতে নিজ গৃহের পূর্ব পার্শ্বে ভারতীয় সীমানার কাছাকাছি বাঁশ ঝাড়ে মস্তকটি পুতে রাখেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে গ্রেফতারকৃত আসামী আশরাফুল এর প্রথম স্ত্রী ও দ্বিতীয় স্ত্রী মধ্যেকার পারিবারিক কলোহের জেরে উল্লেখিত ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে মর্মে ধারণা করা হচ্ছে। বিস্তারিত অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
উল্লেখিত মামলা সংক্রান্তে ধারাবাহিকভাবে ঘটনার সহিত জড়িত ও ব্যবহৃত মালামাল যেমন আসামীর ব্যবহৃত হাসুয়া, পরিহিত জামা কাপড়, পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ব্যাটারী চালিত ভ্যান, মন্তক পরিবহনে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ব্যাগ ও শরীর হতে বিভিন্ন মস্তক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তারিখে উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য যে, বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে লালমনিরহাটের ফুলগাছ গ্রামের ভুট্টা ক্ষেত থেকে হাসিনা বেগম (৪৫) এর মস্তকবিহীন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পর দিন বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকালে পুলিশ ওই গৃহবধূ পরিচয় সনাক্ত করে তার স্বামী বাড়িতে অভিযান চালিয়ে রক্তমাখা পোশাক ও ব্যাটারিচালিত ভ্যান উদ্ধার করে। এর পর শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে লালমনিরহাটের কুটিবাড়ী কাউয়ার চরে জনৈক উজ্জলের তামাক ক্ষেতের মাটির নিচ থেকে দ্বি-খন্ডিত মাথাটি উদ্ধার করা হয়। রোববার (৯ মার্চ) লালমনিরহাটের পিংকির মোড় এলাকায় ঘাতক স্বামী মোঃ আশরাফুল ইসলাম গ্রেপ্তার করা হয়। পরে অভিযুক্ত আশরাফুলকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
হাসিনা বেগমের গ্রেপ্তারকৃত স্বামী আশরাফুলকে আদালতে সোপর্দ। ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর। নিহত গৃহবধূ হাসিনার মরদেহ মেয়েকে হস্তান্তর করা হয়েছে মর্মে লালমনিরহাট পুলিশ, ডিবি পুলিশ, কোর্ট ইন্সপেক্টর সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে নিহত হাসিনা বেগমের লাশের ময়না তদন্ত শেষে বিকেলে তার মরদেহ কন্যা চায়না বেগমের নিকট হস্তান্তর করবেন বলেও পুলিশ সুপার মোঃ তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।