বছর ঘুরে আবারও এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। আর এই রমজানের ঐতিহ্যবাহী ইফতারের জন্য বাহারি রকমের খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন লালমনিরহাটের ব্যবসায়ীরা।
লালমনিরহাট জেলা সদরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের ভিড়ে জমে উঠেছে শহরের মিশন মোড় চত্ত্বরে। নামি-দামি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টগুলো ইফতার বিক্রির জন্য অনেকটা উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি করেছে। বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন ইফতার তৈরির কারিগরেরাও।
লালমনিরহাট শহরের সীমান্ত ক্যান্টিন মোড়, স্বর্ণকার পট্টি, বাটা মোড়, বিডিআর গেট ও রোড, স্টেডিয়াম রোড, টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ রোড, পুলিশ লাইন্স রোডসহ বেশ কিছু পয়েন্ট এখন ব্যস্ত দোকানদাররা ইফতার বিক্রি নিয়ে। এবার প্রথম রমজান থেকেই জমে উঠেছে লালমনিরহাটের ইফতার বাজার।
লালমনিরহাট জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় রাস্তার পাশেই ভ্রাম্যমাণ ইফতারের দোকান বসানো হয়েছে।
প্রতিদিন দুপুর থেকেই এই স্থানগুলোতে দোকানিরা ইফতারের জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার কেনার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করতে থাকে।
ক্রেতাদের বিভিন্ন দোকান ঘুরে ঘুরে পছন্দের আইটেম কিনতে দেখা গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে তৈরি করা হয়েছে নানান সুপরিচিত ঐতিহ্যবাহী খাবার।
ইফতারের খাবার হিসেবে দেখা মিলেছে হালিমসহ মোটা মোটা জিলাপি, বুট, বুন্দিয়া, পায়েস, ধনিয়া পাতার চপ, গুরের চিকন জিলাপি, বাদাম, ভাজা চিরা, বিরিয়ানি, চিকেন, পরোটা, চিকেন লেগ, চিকেন তন্দুরি, চিকেন কারি, গরু কারি, আস্ত গ্রিল, ছোট মুরগি, বড় মুরগি, কাবাব, টিকা কাবাব, ডিম চপ, রোস্ট, লাচ্ছি, ছোলা, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ফালুদাসহ নানা আইটেম।
ভাই ভাই রেস্টুরেন্ট ও সাগাই বাড়ি রেস্টুরেন্ট
জিলাপিসহ বেশকিছু আইটেম বিক্রিতে শীর্ষে রয়েছে। লালমনিরহাট জেলা সদরের ইফতারির দোকানের সংখ্যা রয়েছে প্রায় দুই শতাধিকের বেশি। গত বছরের চেয়ে এ বছরের ইফতার আয়োজনে কিছুটা নতুনত্বের ছোঁয়া রয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
লালমনিরহাট সদরের ইফতার বিক্রেতা ভাই ভাই রেস্টুরেন্টের মালিক মোহাম্মদ সালাম মিয়া বলেন, ক্রেতা আসছেন, দেখছেন, দাম জিজ্ঞাসা করছে ইচ্ছে মতো, ইফতার সামগ্রী কিনছেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে কিছুটা ইফতার সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই চাহিদা অনুযায়ী কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।
মহাবুল হোসেন নামের এক ইফতার বিক্রেতা বলেন, এবার শুরুতেই রমজানে ভালো বিক্রি হচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ। মানুষ আগ্রহ নিয়ে বিভিন্ন আইটেমের ইফতার সামগ্রী নিচ্ছেন। দুপুরে ক্রেতা কম থাকলেও বিকেলে প্রচুর ক্রেতা এসেছে। অনেকেই জিলাপি না পেয়ে ফেরত চলে গেছে।
ইফতার সামগ্রী কিনতে আসা জয়নাল আবেদীন
বলেন, বাসায় ইফতার বানানো হয়েছে, কাবাব ও জিলাপি কিনতে এসেছি। বাচ্চারা এগুলো খেতে পছন্দ করে। প্রতি বছরই বাজারে ইফতার কিনতে আসি, সেই ধারাবাহিকতায় আজও আসলাম। আমার পরিবারে মা, ভাই-বোনসহ সবাইকে ইফতার করাতে হবে। কিন্তু এবার গত বছরের তুলনায় আংশিক দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ইফতার সামগ্রী কিনতে একটু হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অন্যদিকে রমজানের প্রথম দিন থেকেই লালমনিরহাটের বিভিন্ন স্থানে ইফতার সামগ্রীর দোকান ও প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দোকানে সতর্কতামূলক অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
অভিযানে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর দোকানগুলোর খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া ঠিক আছে কিনা, ভেজাল যুক্ত খাবার বিক্রি হচ্ছে কিনা, খাবার পরিবেশনের মান তদারকি করেন। তবে কোনো ধরনের অসংগতি না পাওয়ায় কোন দোকানদারকেই জরিমানা করা হয়নি। তবে এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান করা হয়েছে।
পুরো রমজান মাস জুড়ে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এই অভিযানে ভোক্তা অধিদপ্তর ছাড়াও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। রমজান ও ইফতার বাজারকে ঘিরে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি র্যাব-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর রয়েছে।