লালমনিরহাটে “জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মেগা প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে জনতার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের মূল লক্ষ গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা। দেশে যে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচন দিলে তা আর হবেনা। আমরা লড়াই করতে চাই লড়াই করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বাংলাদেশের আগামী দিনের কান্ডারী দেশনায়ক তারেক রহমান গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য মানুষকে সংগঠিত করে যাচ্ছে। আমরা নির্বাচন দিয়ে আমাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে চাই যারা আমাদের কথা সংসদে বলবে পার্লামেন্টে বলবে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা রেলসেতু সংলগ্ন মঞ্চে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন আয়োজিত তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মেগা প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে জনতার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আপনি নিরপেক্ষ। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিরপেক্ষ থাকলে হবে না, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আপনার পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা আমাদের পায়ের উপর দাঁড়াতে চাই আমাদের ন্যায্য হিসাব আমরা বুঝে নিতে চাই। বন্ধুত্ব থাকবে তিস্তার ন্যায্য হিস্যার ক্ষেত্রে কোনো বন্ধুত্ব নেই। এ আন্দোলন মানুষের বেঁচে থাকার আন্দোলন। লড়াই ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না আমরা লড়াই করে তিস্তা ন্যায্য হিস্যা বাস্তবায়ন করতে চাই।
এ সময় তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বক্তব্যে বলেন, আমাদের এ আন্দোলন কোনো দল বা মতের নয়। এটি গোটা রংপুর অঞ্চলের মানুষের গণদাবি। যার মাধ্যমে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়সহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। আমরা চাই, তিস্তা মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে অবহেলিত এ অঞ্চলে স্যাটেলাইট ভিলেজ, অর্থনৈতিক অঞ্চল, পর্যটন কেন্দ্র, গড়ে উঠুক কৃষি ও শিল্প বিপ্লব। রংপুর অঞ্চলের মানুষ দাবি আদায়ে আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। যৌক্তিক দাবি পূরন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলতে থাকবে। প্রথম দফায় যে ৪৮ ঘণ্টা টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু-এঁর সভাপতিত্বে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা রেল সেতু সংলগ্ন প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। বক্তব্য রাখেন বিপ্রবী ওয়ারর্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ জাতীয় পার্ট-জেপি সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির চেয়ারম্যান পার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সংগীত শিল্পী বেবী নাজনীন প্রমুখ। এ সময় লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি লায়লা হাবিব, সহ-সভাপতি এ্যাড. রফিকুল ইসলাম রফিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম মমিনুল হক, এ্যাড. নজরুল ইসলাম সরকার, এবিএম ফারুক সিদ্দিকী, মোঃ জাহিদ হোসেন মজনু, মোঃ ইকবাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আফজাল হোসেন, মোঃ সাহেদুল হক পাটোয়ারী, মোঃ মজমুল হোসেন প্রামানিক, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবুল বাশার সুমন, লালমনিরহাট পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুস সালাম, লালমনিরহাট সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শীবেন্দ্র নাথ রায় শিবুসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও জাগো বাহে-তিস্তা বাঁচাই তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে একই সময়ে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মেগা প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে অন্যান্য জনতার সমাবেশের মধ্যে নীলফামারী জেলার ডিমলা তিস্তা ব্যারেজের পশ্চিম পার্শ্বে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজের পূর্ব পার্শ্বে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মহিপুর সড়ক সেতু পূর্ব পার্শ্বে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অবঃ হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রম। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা রেল সেতু সংলগ্ন প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর সড়ক সেতু সংলগ্ন আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অবঃ হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রম। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা রেল সেতু সংলগ্ন আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-জেপি সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ারকা্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সরিষাবাড়ী ঘড়িয়াল ডাঙ্গা আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পাকার মাথা থেতরাই ইউনিয়নে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা হরিপুর সেতু সংলগ্ন আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বরকত উল্লাহ বুলু, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা মহিপুর সড়ক সেতু পশ্চিম পাশে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
“জাগো বাহে-তিস্তা বাঁচাই” স্লোগানে অবস্থান কর্মসূচি পালনে দলে দলে নদী পাড়ে দেশের ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা নদীর ১১টি পয়েন্টে এক যোগে টানা ৪৮ ঘন্টার ওই অবস্থান কর্মসূচিতে ৫ জেলার কয়েক লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছেন।
দেখা যায়, তিস্তা রেলসেতু ও তিস্তা সড়ক সেতুর মধ্যস্থানে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে নারী-পুরুষ দলে দলে এসে অবস্থান নিচ্ছেন। প্যান্ডের ভেতরে মানুষ বিছানা পেতে অবস্থান নিয়েছে। সেখানে লক্ষাধিক মানুষের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশাল বিশাল প্যান্ডেল ও শতাধিক তাবু টানানো হয়েছে। দুপুর গড়িয়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয় তিস্তা নদী পাড়।
অবস্থান কর্মসূচি সফল করতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী পাড়ের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি স্থানে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। শেষদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি এসব মঞ্চে দিনভর থাকবে তিস্তা পাড়ের মানুষের সুখ-দুঃখের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, ভাওয়াইয়া গানের আসর, ঘুড়ি উৎসবসহ নানান গ্রামীণ খেলাধুলা। রয়েছে স্থানীয়দের নিজেদের চাল-ডাল সহায়তায় খিচুরিসহ প্রয়োজনীয় খাবার ব্যবস্থা। এভাবে টানা ৪৮ ঘণ্টা তিস্তা নদীর তীরেই অবস্থান করবেন রংপুরের ৫টি জেলার কয়েক লাখ মানুষ। ওই অবস্থান কর্মসূচি সফল করতে দীর্ঘ দিন ধরে করা হয়েছে প্রচারাভিযান।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা রেল সেতু সংলগ্ন মঞ্চে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মেগা প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে অন্যান্য জনতার সমাবেশের শুরুতে সকাল ১১টায় জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর দুপুর ২টায় স্থানীয় সঙ্গীত শিল্পীদের পরিবেশনায় জাতীয় সঙ্গীত। দুপুর ২টা ৫মিনিটে থিম সং পরিবেশন। দুপুর ২টা ১০মিনিটে দাবীনামা উপস্থাপনসহ বক্তব্য রাখেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। দুপুর ২টা ৩০মিনিটে নদী ভাঙ্গন এলাকার ভুক্তভোগী বক্তব্য রাখেন। বিকেল ৩টা হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুড়ি উড়ানো উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৩টা ৩০মিনিট হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাডুডু/চকোরচাল/ চেঙ্গুপেন্টি/বাটুল ছোঁড়া/ দাঁড়িয়াবান্ধা খেলা সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টায় আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সন্ধ্যা ৬টা ৩০মিনিটে বর্ণমালা থিয়েটার পরিবেশিত নাটক ‘আর্তনাদ’ মঞ্চস্থ হয়। সন্ধ্যা ৭টা ১৫মিনিটে জলতরঙ্গ পরিবেশিত ভাওয়াইয়া গান পরিবেশন হয়। রাত ৮টা ৩০মিনিটে নকশীকাঁথা পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। রাত ১০টায় উপেন্দ্রনাথ ও তার দল পরিবেশিত পালাগান অনুষ্ঠিত হয়। রাত ১২টায় রবীন্দ্রনাথ ও তার দল পরিবেশিত জারিগান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের কর্মসূচীর পরিসমাপ্তি ঘটবে।
যথারীতি দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় গণপদযাত্রা (তিস্তা ব্রীজ থেকে কাউনিয়া) সময় ২ঘন্টা। দুপুর ১২টায় তিস্তা নদীর পানিতে নেমে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন সময় ১ঘন্টা। দুপুর ২টায় সিরাজুম মুনিরা পাখি পরিবেশিত সঙ্গীতানুষ্ঠান সময় ১ঘন্টা। বিকেল ৩টায় পল্লবী সরকার মালতী পরিবেশিত সঙ্গীতানুষ্ঠান সময় ১ঘন্টা। বিকেল ৪টায় সুলতানা জামান জ্যোৎস্না পরিবেশিত সঙ্গীতানুষ্ঠান সময় ১ঘন্টা। বিকেল ৫টায় রবীন্দ্রনাথ ও তার দল পরিবেশিত পালা গান সময় ২ঘন্টা। সন্ধ্যা ৭টায় প্রধান অতিথি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মহোদয়ের বক্তব্য ও ডকুমেন্টরী ভিডিও প্রদর্শন সময় ১ঘন্টা। রাত ৮টায় নকশীকাঁথা পরিবেশিত সঙ্গীতানুষ্ঠান সময় ১ঘন্টা। রাত ৯টায় বেবী নাজনীন পরিবেশিত সঙ্গীতানুষ্ঠান সময় ১ঘন্টা। রাত ১০টায় সিনেমা ‘সাঁতাও’ প্রদর্শন সময় ২ঘন্টা। রাত ১২টায় দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচীর পরিসমাপ্তি।
উল্লেখ্য যে, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ কর্মসূচিতে অংশ নেয় সর্বস্তরের জনসাধারণ।