ডাঃ আবুল মহসিন প্রামাণিক ১৯১৮ সালে লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার লালমনিরহাট পৌরসভায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোজাহার আলী পঞ্চায়েত। তাঁর পিতা তৎকালীন লালমনিরহাট ইউনিয়নের দীর্ঘদিন পঞ্চায়েত ছিলেন।
ডাঃ আবুল মহসিন প্রামাণিক ছিলেন লালমনিরহাট জেলার অন্যতম সমাজ সেবক ও বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি। তৎকালীন লালমনিরহাট থানাকে মহকুমা ও মহকুমাকে জেলায় রূপান্তরে তিনি রেখেছিলেন প্রতক্ষ্য ভূমিকা। পরবর্তী সময়ে নবগঠিত জেলার উন্নয়নে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখেন।
পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন সফল চিকিৎসক। সেই সময়ে তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানে এল.এম.এফ ডিগ্রী অর্জন করে চিকিৎসক হিসেবে চাকুরীতে যোগ দেন এবং অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বৃহত্তর রংপুর জেলার বিভিন্ন থানায় চাকুরী করেন। মহান পেশাগত জীবনে বিভিন্ন জায়গায় তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন।
মানবতা কল্যাণকামী এই পুরুষ শুধু চিকিৎসা সেবার মধ্যে তাঁর সৃজনশীল প্রতিভা আবদ্ধ রাখেননি, সেই সঙ্গে সমাজসেবা ও শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। পশ্চাদপদ এই জেলার শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক। জেলার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লালমনিরহাট সরকারি কলেজ, মজিদা খাতুন সরকারি মহিলা কলেজ, হাতীবান্ধা থানায় অবস্থিত কাজী জসিমুদ্দিন ডিগ্রী কলেজ স্থাপনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। স্কুল পর্যায়ে তিনি কবি শেখ ফজলল করিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব সাপটানা উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেক মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।
হয়তো প্রথিতযশা এই পুরুষের মণিকোঠায় একটি স্বপ্ন লুকায়িত ছিল। নিজ মমতায় নিজের জমি দান করে তিনি গড়ে তুললেন লালমনিরহাট আদর্শ ডিগ্রী কলেজ। শিক্ষায় প্রদীপ শিখায় উদ্ভাসিত সাফল্য মন্ডিত প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত তাঁর অক্লান্ত শ্রম, অনেক হারানোর বেদনা, সেই সঙ্গে পরম পাওয়া পবিত্র আত্মোপলব্ধি।
জীবনের শেষ সময়ে এসে তিনি স্থাপন করেন বাবা প্রতিষ্ঠিত সাপটানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে একটি হাট, যা আজ ‘নয়ারহাট’ নামে বিখ্যাত।
চিকিৎসা, শিক্ষা ও সমাজ সেবায় নিবেদিত প্রাণ এই মানুষটি ব্যক্তিগত জীবনে সার্থক একজন পিতা। তাঁর দুই ছেলের বড় জন লালমনিরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশাররফ হোসেন রানা ও ছোট জন লালমনিরহাট আদর্শ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ (অবঃ) মাহবুবুল আলম মিঠু।
লালমনিরহাট জেলার উন্নয়নে নিবেদিত প্রাণ সবার পরিচিত ‘মহসিন ডাক্তার’ ২০০৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। লালমনিরহাট আদর্শ ডিগ্রী কলেজ থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে মসজিদ সংলগ্ন পারিবারিক গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। তাঁর মেধা-মনন জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানিক কর্মের মাঝে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।