লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামের একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। বর্তমানে তাঁর বয়স ৪২বছর। অল্প সময়ের ব্যবধানে হয়ে উঠেছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি একই উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের নওদাবাস গ্রামে মাল্টা, আম, কমলা ও বড়ই বাগানের পাশাপাশি লিচু চাষেও সফলতা অর্জন করেছেন। এখন নিজ এলাকার তরুণদের কাছে অনুপ্রেরণীয় একজন হয়ে উঠেছেন। অনেকেই এখন তাঁর কাছে পরামর্শ নিতে আসেন।
তিনি ৭বছরে নিজ বাগান থেকে প্রায় ৪০লক্ষ টাকারও বেশি উপার্জন করেছেন। তাঁর সম্পূর্ণ বাগানটি রয়েছে ৩একর ৫৬শতাংশ জমি জুড়ে। মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বড়বাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামের আলহাজ্ব আবু বক্কর সিদ্দিক-এঁর বড় ছেলে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ৫ভাই-বোনের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম বড় ছেলে। সংসারের আর্থিক অনটনের কারণে খেদাবাগ একরামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে ২০০৪ সালে আলিম পাশ করে চাকুরির পিছনে সময় ব্যয় না করে তিনি কৃষি উদ্যোক্তাদের নানান প্রজেক্ট সম্পর্কে অবগত হয়ে এবং বাবার পরামর্শে শুরু করেন বিভিন্ন ফলের চাষ। প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকলেও অভিজ্ঞ কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছে গিয়ে পরামর্শ ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করে তাঁর বাগানে কাজে লাগিয়েছেন। এরপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। চলতি মৌসুমে তিনি দ্বিগুণ লাভের স্বপ্ন দেখছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের
বাগানে মাল্টা, আম, কমলা ও লিচুর বিশাল বাগান রয়েছে এবং সেই বাগানে ফলের মুকুলও এসেছে। বাগানে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫জন শ্রমিক মজুরি খাটছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা উৎসাহিত তরুণ ও চাষিরা তার বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন এবং পরামর্শ নিচ্ছেন। তবে আম, কমলা, মালটা চাষে সার ও কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। তিনি বাজারে ভেজাল সার ও কীটনাশকের দৌরাত্ম্য ও সিন্ডিকেট দূর করার দাবি জানিয়েছেন।
জাহাঙ্গীর জানায়, চাকরি পেছনে না ছুটে বাবার পরামর্শে আমি উদ্যোক্তা হয়েছি। বাবার পরিকল্পনা মোতাবেক নিজের চেষ্টায় আজকে বিশাল ফলের বাগান গড়ে তুলেছি। সবার দোয়া ও ভালবাসায় প্রত্যেক মৌসুমে এ বাগান থেকে প্রায় ৭ থেকে ৮লক্ষ টাকারও বেশি উপার্জন করি। তাছাড়াও বাজারে মালটা, আম ও কমলা, লিচুসহ অন্যান্য ফলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিক্রি করা নিয়ে চিন্তা হয়নি আমার। আগামী মৌসুমে সব মিলিয়ে ১০লক্ষ টাকার মালটা, আম, কমলা, বড়ই, লিচুসহ অন্যান্য ফল বিক্রির আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, আগামীতে ৫-৬বিঘা জমিতে মাল্টা বাগান সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে তার যেটি বাস্তবায়ন করতে পারলে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি অত্র এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি অফিসার খন্দকার সোহায়েল আহমেদ জানায়, উদ্যোক্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের ফলের বাগান সম্পর্কে আমরা অবগত রয়েছি।
তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের মতো উদ্যোক্তাদের আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। প্রত্যেকটি এলাকায় যদি এরকম উদ্যোক্তা তৈরি হয় তাহলে বেকারত্ব যেমন দূর হবে সেই সাথে কৃষি ক্ষেত্রেও তা সফলতা বয়ে আনবে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ সাইখুল আরিফিন জানান, জাহাঙ্গীর আলম একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি তার বাবাকে সঙ্গে নিয়েই মূলত এই বাগান গড়ে তুলেছেন। তিনি সমগ্র জেলার তরুণ কৃষকদের জন্য উদাহরণ স্বরুপ। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, যে কেউ বাণিজ্যিকভাবে কৃষিকাজ করেও সফলতা অর্জন করতে পারে। এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্যও তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে যেটি ইতিবাচক কৃষির উদাহরণ বহন করে বলেও মনে করেন এ কৃষিবিদ।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2025 আলোর মনি. All rights reserved.