লালমনিরহাট জেলা শহরের কালীবাড়ী তথা পুরান বাজার এলাকায় একই আঙ্গিনায় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রয়েছে মসজিদ ও মন্দির। মুসলমানের মসজিদে চলে নামাজ আদায় ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে পূজা-অর্চনা। একপাশে সুঘ্রাণ ছড়ায় আতর-আগরবাতি, অন্যপাশে ধূপকাঠি। কোনো বিবাদ, মতবিরোধ ছাড়াই যুগ যুগ ধরে সেখানে ধর্মীয় সহাবস্থান বিরাজ করছে।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) হিন্দু সম্প্রদায়ের দিনব্যাপী চলে শীত কালীন ভোগ ও লীলা কীর্তন অনুষ্ঠান আর অন্য পাশে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের মসজিদে নামাজ আদায়।
এ দিনে মসজিদ-মন্দিরের উঠানে স্থাপন করা হয় বিশাল প্যান্ডেল। কেন্দ্রীয় কালীবাড়ী মন্দির লালমনিরহাটের আয়োজনে শীত কালীন ভোগ ও লীলা কীর্তন অনুষ্ঠানে প্রায় ২হাজার হিন্দু ধর্মালম্বী লোকজন অংশগ্রহণ করেন। সকালে শীত কালীন কালী মায়ের পূজা-অর্চনার মাধ্যমে শুরু হয় দিনের কার্যক্রম। দুপুরে মুসলমান সম্প্রদায়ের জুম্মার নামাজ আদায়ের জন্য ২ঘণ্টা বিরতি শেষে শুরু হয় শীত কালীন ভোগ। আর এশার নামাজ শেষে অনুষ্ঠিত হয় লীলা কীর্তন। নাটোর থেকে আসা সূর্বনা সরকার কীর্তন পরিবেশ করেন। দূর-দূরান্ত থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আগমনে সরগরম হয়ে ওঠে মসজিদ-মন্দির প্রাঙ্গণ।
স্থানীয়রা জানান, কালীবাড়ী তথা পুরান বাজার এলাকায় ১৮৩৬ সালে নেছারাম নামে এক মারওয়ারী কর্তৃক কালী মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। নামাজ আদায়ের জন্য ১৯১৫ সালের দিকে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মন্দিরের পাশেই মসজিদ নির্মাণ করেন। তখন থেকেই চলছে ধূপকাঠি ও আতর-আগরবাতির সুগন্ধির মিলন-মেলা।
জুম্মার নামাজ আদায় শেষে পুরান বাজার জামে মসজিদের ফটকে দাঁড়িয়ে ছিলেন এলাকার মুসল্লি জাহাঙ্গীর আলম বাবু। তিনি বলেন, আমরা নির্বিঘ্নে নামাজ পড়লাম। ওরা ধর্মীয় আচারাদি পালন করল। কোনো সমস্যা হয়নি। বোঝাপড়া থাকলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ভোগ ও লীলা কীর্তন উপলক্ষে এলাকার অনেক মুসলমানকে দাওয়াত দিয়েছেন হিন্দুধর্মের লোকজন।
কেন্দ্রীয় কালীবাড়ী মন্দিরের স্বপন সাহা, কানু কর্মকার, তাপস রঞ্জন বণিকসহ কয়েকজন জানান, একই প্রাঙ্গণে মসজিদ-মন্দির নিয়ে তারা গর্ব করেন। গতকালের আয়োজন ছিল অনেক বড়। প্রচুর লোকের সমাগম হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন হয়েছে পুরো অনুষ্ঠান।
কেন্দ্রীয় কালীবাড়ী মন্দিরের সভাপতি ও পুরোহিত শংকর চক্রবর্তী বলেন, আমরা দুই সম্প্রদায়ের লোকজন খুব ভালো আছি। নামাজের সময় উলুধ্বনি ও বাদ্যযন্ত্র বন্ধ থাকে। অন্য সময় স্বাভাবিক নিয়মে ধর্মীয় কাজ করে থাকি। ভোগ অনুষ্ঠানে মসজিদের ইমাম ও এলাকার মুসল্লিদের নিমন্ত্রণ করা হয়।
পুরান বাজার জামে মসজিদের দ্বিতীয় ইমাম ক্বারি মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, এটাই হচ্ছে ইসলামের সৌন্দর্য। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এতো বড় আয়োজনে কোনো সমস্যা হয়নি। যুগ যুগ ধরে বহমান রয়েছে ধর্মীয় এই সম্প্রীতি। আমরা এটিকে ধারণ ও লালন করতে চাই।
পুরান বাজার জামে মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল বাতেন রতন জানান, যেকোনো অনুষ্ঠান উদযাপনে দু’পক্ষ বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।