দেশের উত্তরে সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডায় খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বিপাকে। পৌষের ঘরে পা রাখেনি শীত। তার আগেই উত্তরের জনপদে দাপট দেখাচ্ছে এ ঋতু। অবশ্য হিমালয়ঘেঁষা এ জনপদে শীত একটু আগেভাগেই আবির্ভূত হয়। যেমনটা দেখা যাচ্ছে গত কয়েকদিন ধরে শীত পুরোপুরি জেঁকে বসেছে এ অঞ্চলে। তাপমাত্রা কমছে ক্রমশ। এতে খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বিপাকে। অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে সকালে ঘুম থেকে উঠে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩দশমিক ১ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হওয়ার তথ্যটি জানিয়েছেন রাজারহাট আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অফিস বলছে, কয়েকদিনের মধ্যে ঠান্ডার দাপট আরও বেড়ে যাবে।
এ জেলা হিমালয়ের অনেকটা কাছাকাছি হওয়ায় তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ঘন কুয়াশা এবং হিমশীতল বাতাসের প্রবাহ বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের তীব্রতা।
এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিন্নমূল মানুষ ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। আজ সকালে সদর উপজেলার বড়বাড়ীতে কথা হয় রিকশা চালক, আলম মিয়া (৪৫) এর সঙ্গে। তিনি বলেন, দিনে মধ্যে দুপুরে দিকে যখন গরম থাকে তখন যাত্রী পাওয়া যায়। রিকশাও ভালোভাবে চালানো যায়। কিন্তু সন্ধ্যার পর সকালে যাত্রী তেমন পাওয়া যায় না। শীতের কারণে রিকশা ঠিকভাবে চালানো যায় না। ফলে আয় উপার্জন কমে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, দিন দিন কুয়াশার সাথে ঠান্ডার মাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকেই উত্তরের ঠান্ডা বাতাসে শীত লাগতে শুরু করেছে। শীতের মোটা গরম কাপড় পরতে হয়েছে। রাতে টিনের চালে টিপটিপ করে শিশির পড়তে শোনা যায় বৃষ্টির মতো। সন্ধ্যা থেকেই এখন গায়ে কম্বল ও কাঁথা নিতে হচ্ছে। এ জেলায় অন্যান্য জেলার আগেই শীতের আগমন ঘটে। সকালে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির সামনে আগুন জ্বালিয়ে শিশু ও বৃদ্ধ মহিলারা শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
ঘন কুয়াশায় সকাল থেকেই কর্মব্যস্ততায় জড়িয়ে বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ। কৃষক, দিনমজুর ,ভ্যান চালকরা কাজে বেরিয়েছে। অনেকেই আবার এখনো ধান মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে।
আমতলা বাজারে অটো চালক মোঃ আলী (৪৮) বলেন, আগের থেকে অনেক বেশি ঠান্ডা পড়েছে। আমাদের মতো অটো রিকশা চালকদের জন্য শীত অনেক কষ্টের। দিনের বেলা সামান্য গরম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে ঠান্ডা লাগে প্রচুর পরিমাণে। শীতের মোটা কাপড় ব্যবহার করতেছি এখন। রাত বাড়তে থাকলে শীতও বাড়তে থাকে তাই রাতে কম্বল কিংবা মোটা কাঁথা নিতে হয়।
একই এলাকার দিনমজুর নুরুজ্জামাল আলী (৪৫) জানান, কয়েকদিন ধরেই কুয়াশা ও শীতের সাথে ঠান্ডার পরিমাণ বেশি। বিশেষ করে দুইদিন ধরে সকালে ও রাতে ঠান্ডা বেশি লাগে। এমন ঠান্ডা শুরু হলে কয়েকদিনের মধ্যে সকাল সকাল হয়তো কাজে যাওয়া সম্ভব হবে না।
পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের ভ্যান চালক সাইদুল মিয়া (৪০) জানায়, কষ্ট হলেও নিজের জীবিকার তাগিদে ভোরেই ভ্যান নিয়ে বের হতে হয়েছে। আজ আগের থেকে অনেকেই বেশি ঠান্ডা পড়েছে। এত বেশি ঠান্ডায় অনেকেই ভ্যানে চড়তে চায় না। তবুও বের হয়েছি। এদিকে রাতে ঠান্ডা ও দিনে হালকা পরিমাণে গরম হওয়ায় বেড়েছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধি। প্রায় ঘরে ঘরে সর্দি, কাশি ও জ্বর হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
লালমনিরহাটে ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বাড়তে শুরু করেছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা । নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে রোগীরা।
লালমনিরহাট সদরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ আব্দুল মোকাদ্দেম জানান, হাসপাতালে কয়েকদিন থেকে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বাড়তেছে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোগীদের সেবা দিতে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, প্রতি বছর এই এলাকায় শীতের দাপট অনেকটাই বেশি থাকে। তাই ঠান্ডার কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিন্নমূল মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।