লালমনিরহাটে বিএনপি নেতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বাড়ি ও খামার ভাংচুর লুটপাটের ঘটনায় দীর্ঘ ১বছর ২ মাস পরে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় ৩ জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উক্ত ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল মজিদ মন্ডল বাদী হয়ে শনিবার (২ নভেম্বর) একজন সাংবাদিকসহ ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৬০ থেকে ৭০ জনের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট সদর থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় ঘটনার সময় উল্লেখ করা হয়েছে গত ২০২৩ সালের ৬, ৮ ও ১২ সেপ্টেম্বর ৩ দফায় অভিযুক্তরা বাদীর বাড়ি, খামার ও মাছের প্রজেক্টে হামলা ও লুটপাট করে।
এ মামলায় গ্রেফতারকৃত৩ জন হলেন- লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আলমগীর বাদশা, আওয়ামী লীগ সমর্থক ওই ইউনিয়নের চিনিপাড়া গ্রামের রতন মিয়া ও মোস্তফি এলাকার শ্রমিক লীগ কর্মী মমিদুল ইসলাম।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন পরিষদে সরকারি ভাবে বরাদ্দ আসা ভিজিএফ, টিআর, কাবিখা প্রকল্পের ৪০ শতাংশ ভাগ দাবি করে ইউনিয়ন পরিষদে লোকজন পাঠাতেন লালমনিরহাট জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ও মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিদুল ইসলাম বিপ্লব।
সরকারি বরাদ্দের অংশের ভাগ না পেয়ে বিপ্লবসহ আওয়ামী লীগের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের পরিকল্পনা করেন। বিপ্লবের হুকুমে অভিযুক্তরা গত ২০২৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আব্দুল মজিদ মন্ডলের বাড়ির গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ারম্যানের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা বেগমকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাড়িতে লুটপাট করে ২ টি পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে যায়। এতে নগদ ১৫ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ২৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকার মালপত্র নিয়ে যায় অভিযুক্তরা।
পরে লুটপাট হওয়া মালামাল ফেরত দেওয়ার দাবিতে পুনরায় চাঁদা দাবি করেন। এতে রাজি না হলে এর দুই দিন পর ৮ সেপ্টেম্বর রাতে পুনরায় চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মণ্ডলের মাহি পোল্ট্রি ফার্মে হামলা চালিয়ে ৫ হাজার মুরগিসহ প্রায় ৫০ লাখ ৩০ হাজার টাকার পণ্য লুট করে। এতেও থেমে থাকেনি লুটপাট। এর চার দিন পর ১২ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশের দুই একর জমির মাছের প্রজেক্টের জাল ফেলে প্রায় ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার মাছ লুটপাট করেন অভিযুক্তরা।
তিন দফায় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদের বাড়ি, খামার ও মাছের প্রজেক্ট থেকে প্রায় ৮৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার পণ্য লুটপাট করে অভিযুক্তরা। এসব ঘটনার বিচার দাবি করে ঘটনার প্রায় ১বছর ২ মাস পরে শনিবার (২ নভেম্বর) আওয়ামী লীগ নেতা তাহমিদুল ইসলাম বিপ্লবকে প্রধান করে ৫৭ জনের নামসহ অজ্ঞাত ৬০ থেকে ৭০ জনের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট সদর থানায় মামলা দায়ের করেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ। এ মামলায় ৪৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে প্রেসক্লাব লালমনিরহাটের সদস্য ও দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি পত্রিকার লালমনিরহাট প্রতিনিধি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল “লালমনি টাইমস” এর নির্বাহী সম্পাদক রাসেল হককে। এছাড়া সব অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
এ মামলায় লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে শনিবার (২ নভেম্বর) রাতে এজাহার নামীয় ২ জন এবং অজ্ঞাতনামা ১ জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।
এ মামলায় অভিযুক্ত সাংবাদিক রাসেল হক বলেন, যে ঘটনায় আমাকে আসামি করা হয়েছে সে ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। আমাকে হয়রানি করতে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। তিনি এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।
প্রেসক্লাব লালমনিরহাটের সাবেক সভাপতি মোফাখখারুল ইসলাম মজনু বলেন, সাংবাদিককে হয়রানি করলে এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। যার তার নামে ইচ্ছে মতো মামলা দেওয়া হয়রানি ছাড়া কিছুই নয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
লালমনিরহাট সদর থানা অফিসার ইনচার্জ আব্দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদের বাড়ি, খামার ও মাছের প্রজেক্টে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ মামলায় এজাহার নামীয় ২ জনসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।