:: অতিথি কলাম-
:: সাদিকুর রহমান :: বলছি ২০০১-২০০৬ সালের কথা। আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের ১০টি অতিদরিদ্র্য জেলার মধ্যে লালমনিরহাট অন্যতম একটি। তবে, ২০০১ সালে বিএনপি’র উত্তরাঞ্চলের আপামর জনসাধারণের প্রিয় নেতা আলোকিত লালমনিরহাটের রুপকার সাবেক সফল উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু ভাইয়ের হাতে উন্নয়নের অগ্রযাত্রার শুভ সূচনায় জেলাটি অতীতের তুলনায় উন্নয়নের নানাবিধ সূচকে বেশ এগিয়ে গেলেও বিগত ১৫বছরে প্রত্যাশিত উন্নয়ন হয়নি। এমনকি এখনও অন্যান্য জেলার তুলনায় মধ্যম সারির জেলার কাছাকাছিও আসতে পারেনি।
আবহমান কাল থেকে তিস্তা নদী উত্তরাঞ্চলের বিশেষ করে লালমনিরহাটের মানুষের জীবন জীবিকার অনেক ক্ষেত্রেই প্রভাব বিস্তার করেই চলেছে। আজ থেকে ৩০/৩৫বছর আগে এই তিস্তা নদী রংপুর জেলার কোল ঘেঁষে হারাগাছ এর পাশ থেকে বয়ে গেলেও ক্রমান্বয়ে ভাঙতে ভাঙতে লালমনিরহট-কুড়িগ্রাম জেলার অর্থাৎ পাটগ্রামের বুড়িমারি হতে চিলমারীর হরিপুর পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিমে সীমানার প্রায় ১০০কিলোমিটারেরও বেশি এলাকার জুড়েই তিস্তা প্রবাহমান। বন্যার সময় এই তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবনে নেমে আসে এক ভয়ঙ্কর পরিস্তিতি। তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে বসতবাড়ি ভেসে যায় এবং পানি কমার সাথে সাথে প্রায় ২০টি পয়েন্টে ভাঙ্গণ প্রবল আকার ধারণ করে।
তার মধ্যে অন্যতম লালমনিরহাট সদরের চর গোকুন্ডা, মধুরাম, ছিড়া মধুরাম, রাজপুর, খুনিয়াগাছ, কালমাটি। আদিতমারী উপজেলার চন্ডিমারী, গোর্বধন, বালাপাড়া, মহিষখোচা, মহিষাশহর, কাশিয়াবাড়ির হাট এলাকা ব্যাপক হুমকির মুখে পড়ে।
প্রতি বছর বিলীন হয়ে যায় হাজার হাজার বসতবাড়ি, লক্ষাধিক একর আবাদি জমি এবং কৃষকের ঘামে ফলানো স্বপ্নের সোনালী ফসল ও সম্ভাব্য সবকিছুই। প্রতিবছর দারিদ্র্যতা কমার পরিবর্তে দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যার তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছিলো। এমতাবস্থায়, তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে, বসতবাড়ির নিরাপত্তার কথা ভেবে, কৃষকের সোনালী ফসলের কথা ভেবে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর লালমনিরহাট সদরের আপামর জনতার একচ্ছত্র ব্যালটের রায়ে লালমনিরহাটের সকলের প্রাণপ্রিয় জননেতা অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু ভাই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নকল্পে জাতীয় সংসদে উত্থাপনের মাধ্যমে কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন নিয়ে তিস্তা নদীর বাম তীরে ৫টি কয়েকটি বাঁধ (স্পার) নির্মাণ করে।
যার ফলে বাঁধের ভাটিতে থাকা বসতবাড়ি আবাদি জমি রক্ষা পেতে শুরু করে। শুরু হয় তিস্তাপাড়ের মানুষের নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্নের শুভযাত্রা। এর পর থেকে লালমনিরহাট সদর ও আদিতমারী উপজেলার তিস্তা চরে মানুষের নতুন স্বপ্ন পায়। এই স্পার বাঁধের ফলে রক্ষা পায় লালমনিরহাট শহর, নয়তো এতোদিনে নদী তিস্তা-ধরলা একাকার হয়ে একটি নদীতে পরিণত হয়ে যাবার সম্ভাবনা ছিল।হয়তো বিলীন হয়ে যেতো আমাদের রাজপুর, খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের উজান। এই ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতোনা হারাটি ও গোকুন্ডার একাংশ। এমনকি আজকের কুর্শামারী বাজার, তিস্তা বাজারসহ অসংখ্য এলাকা।
বর্ষাকালীণ তিস্তার ভাঙ্গনের ফলে মানবেতর জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবন যাপন করার কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে তিস্তা বাম তীরের ভাঙ্গণ প্রবণ পয়েন্টসমূহে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে লালমনিরহটের মানুষের কাছে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন এই অঞ্চলের মাটি ও মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।
বিএনপি সরকার তৎকালীন সময়ে তিস্তার খননের ব্যাপারে এবং খরা মৌসুমে উজানের দেশ ভারতের তিস্তার পানি বন্টন সংক্রান্ত সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন তিনি। এমনকি তিনি সরকার প্রধানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের দ্বারা ভারতকে চাপ প্রয়োগের ফলে তিস্তার পানি বন্টন সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। তাই মনে করি সেই পরিকল্পনা এবং কর্মকৌশল এখনও বিএনপির মাঝে আছে।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো ভারত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার ফলে পরীক্ষিত বন্ধু হয়ে গেছে। রাতের অন্ধকারে ভোটের স্বীকৃতিদানকারী হিসেবে সমর্থন করে গেছে ভারত। যার ফলে আওয়ামী লীগ গত ১৫বছর ধরে ক্ষমতায় থেকেও কোনোভাবেই ভারতকে বোঝাতে পারেনি। তাই বর্ষা এবং খরা মৌসুমে তিস্তার পানির ব্যাপারে অন্যায় কার্যকলাপে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ৫টি জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন যাপন অসহনীয় পর্যায়ে পড়েছে।
দেখা গেলো তিস্তা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে চীন তিস্তা মহাপরিকল্পনায় ৮৫০০কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাবে আওয়ামী লীগ উত্তরাঞ্চলের মানুষের স্বার্থের চেয়ে তাঁরা ভারতের সাথে সম্পর্কের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার ফলে চীন সন্দেহও করে আওয়ামী লীগকে। হবেই না বা কেন!
গত বছরের ২ আগস্ট রংপুরের জনসভায় সবাই অধীর আগ্রহে কান পেতে ছিলো। হয়তো সরকার প্রধান তিস্তা মহাপরিকল্পনার ব্যাপারে একটা কিছু ঘোষণা দিবেন কিন্তু সবাইকে হতাশ করলেন। তিনি কিছুই বললেন না। মজার ব্যাপার হলো ভারত অনেক আগেই বুঝেছে যে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ভারত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আর চীনের বিনিয়োগে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে নেবে বাংলাদেশ। তাই উত্তরাঞ্চলের এই অবহেলিত অঞ্চল ব্যাপক উন্নতি থমকে গেছে।
একমাত্র জাতীয়তাবাদী শক্তি'ই বিএনপি পাড়বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে। এক্ষেত্রে লালমনিরহাটের মানুষের উন্নয়ন যার ধ্যানে জ্ঞানে বিরাজমান প্রিয় নেতা সাবেক সফল উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু'র বিকল্প নেই। তিস্তাপাড়ের মানুষের দুঃখ দুর হবে ইনশা আল্লাহ। তিস্তাপাড়ের সর্বস্তরের মানুষের মুখে হাসি ফুটুক এটাই হোক আমাদের প্রত্যাশা।
[লেখক: সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল, লালমনিরহাট সদর উপজেলা শাখা, লালমনিরহাট।]
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.