শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
লালমনিরহাটে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত পাটগ্রামে শহীদ জিয়া স্মৃতি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র আমাদের হাতের নাগালে নাই-লালমনিরহাটে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় লালমনিরহাটে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ও ঔষধ সেবা অর্ধেক মূল্যে হত দরিদ্রদের ছানি অপারেশন অরবিট চক্ষু হাসপাতালে লালমনিরহাটে শীতের হরেক রকমের পিঠার দোকানের পসরা নিয়ে বসছেন বিক্রেতারা বিএনপির কর্মী সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত বাবা-মাকে একটা বাড়ি করে দেওয়ার স্বপ্ন যেন চিরতরে হারিয়ে গেলো লালমনিরহাটের শহীদ শাহিনুর আলমের বিএনপির কর্মী সভা অনুষ্ঠিত যতদিন নির্বাচন হবে না, ততদিন স্বাভাবিক অবস্থায় দেশে ফিরে আসবেনা-অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু আলু চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন লালমনিরহাটের কৃষকেরা

আমাদের দুঃখের আর এক নাম তিস্তা!

:: হেলাল হোসেন কবির :: এখনও যে মঙ্গা ঘিরে আছে, দেশের সরকার তা মানতে নারাজ। দেশের উত্তরের মানুষের সাথে চিরসঙ্গী এই বাক্যটি। বর্তমান কর্মহীন হয়ে বেকার জীবন নিয়ে বুকের ভিতর মুছর দেয় লক্ষ লক্ষ তরতাজা প্রাণকে। বিশেষ করে উত্তর অঞ্চলের মানুষের বুকে হানা দেয় এই মঙ্গা নামক ব্যাধি।

 

ভারতের কারণে এই মঙ্গা তিস্তার পানি হয়ে হানা দেয় নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা এলাকায়। বর্ষাকালে ভারত তিস্তা নদীতে পানি ছেড়ে দিলেও শুকনা মৌসুমে ধূ ধূ মরুভূমি হয়ে দুঃখ ঝড়ে তিস্তার বুকে। প্রতি বছর বর্ষা এলেই ক্ষত বাড়ে মানুষের মনে। উত্তরের কয়েক জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ দুর্বিষহ জীবন কাটান। তিস্তার কারণে দুর্বিষহ জীবনগুলো তাদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেনা। কোন কোন পরিবার সারা জীবনও স্বাভাবিক হয়ে ফিরতে পারেনি।

 

তিস্তা রূপ নির্ভর করে পাশের দেশ ভারতের উপর। ভারতের ভিতর গজলডোবা বাঁধ তিস্তার মানুষের অভিশাপের নিশ্বাস। যখন পানির দরকার হয় তখন পানি না দেওয়া ফলে বালুর চর পড়ে থাকে, সেই চরে কোন ধরনের ফসল ফলানো যায় না, যার ফলে কৃষকের হাজার হাজার হেক্টর জমি পড়ে থাকে। আর যখন পানির দরকার হয়না তখন হঠাৎ করে পানি ছেড়ে দেয়, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছর তারা ব্যাপক পানি ছেড়ে দিয়ে তিস্তা পাড়ের মানুষ ঘর-বাড়ি, গবাদি পশু, ফসল নষ্ট করে দেয়। তারপর পানির চাপ কমতে শুরু হলে নদী ভাঙ্গনের কবলে অনেকে নিঃশ্ব হয়ে যায়।

 

সব মিলিয়ে তিস্তা পাড়ের মানুষের কাছে সর্বনাশের জন্য দায়ী ভারতের আগ্রাসনি মনোভাব। তিস্তায় যখন পানিতে সব তলিয়ে যায়, তখন পরিবার নিয়ে বসবাস করতে হয় রাস্তায় বা কোন পরিত্যক্ত জায়গায়। পানি নামার পর ভাগ্য ভালো হলে কেউ কেউ নিজ ভিটায় ঠাই পায়, প্রতিবছর হাজারো ঘর-বাড়ি তিস্তার গর্ভে চলে যায়, আর এই মানুষগুলো আজীবন গৃহহীন হয়ে পড়ে। এই পরিবার গুলোর খবর কেউ রাখে না। তাদের তেমন সরকারি সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়না। দক্ষিণের জেলাগুলোতে বন্যায় প্লাবিত হলে দেশের সরকার বা বিভিন্ন সংগঠন/ সংস্থা যেভাবে পাশে দাঁড়ায় তিস্তা পাড়ের মানুষের জন্য তারা তেমন কথা বলেনা, নামে মাত্র সহানুভূতি দেখায়। নদীতে সব হারানোর ফলে তারা আর কোন ভাবে তাদের ভিটেমাটি করতে পারে না। এই মানুষগুলোর সরকারি ভাবে কোন প্রকার হিসাব রাখা হয়না। যার ফলে ধুঁকে ধুঁকে জীবন চলতে হয় তাদের। সেই পরিবারগুলোর দুঃখের কোন সীমা থাকেনা।

 

জীবনের সামান্য মঙ্গা দূর চালায় চেষ্টা চালায়। তিস্তার বুকে লড়াই করে পরিবারের মুখে হাসি ফিরাতে গিয়ে, চর আর হঠাৎ পানি বাড়ার কারণে বেশিভাগ সময় সকল কিছু হারায়। এর মাঝে যা ফসল ফলে তার আবার সঠিক দাম পায়না কৃষকেরা। এখানে নেই কোন কর্মসংস্থানের সুযোগ, তিস্তার উপর ভর করায় দমিয়ে যায় স্বপ্ন। তারপর বাকিটা সময় ধার-দেনা করে কোন রকম চলা জীবনের সাথে মিশে গেছে তিস্তা পাড়ের মানুষের। এই অঞ্চলে কোন কলকারখানা না থাকার কারণে বেকার জীবনের দুঃখ দূর করার কোন সুযোগ নেই। কেউ কেউ কর্মের খোঁজে অজানা ভাবে পারি জমায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। সেখানে গিয়ে হাতের কাছে যা কাজ পায় তা করে কোন রকম বেঁচে থাকার আশা দেখে। এখন দেশের পরিস্থিতির এই বর্তমান সময়টা ভালো যাচ্ছে না মোটেও। তার উপর উচ্চ বিলাশী দ্রব্যমূল্যের বাজারের কারণে ঘরে শূন্য বাজারে চলতে হচ্ছে কোন মতে।

 

তিস্তার এই বেহাল অবস্থার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বছর বাজেটেও শূন্যতা ঘোষণা পায়। তাই এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যে মঙ্গা যেন অমঙ্গল হয়ে থেকে যায়। অপরদিকে সাধারণ মানুষের ক্ষতির জন্য রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিবেশি দেশ ভারতের কাছে কখনও ক্ষতিপূরণের দাবি করা হয়নি। ভারতের ছেড়ে দেওয়া পানির কারণে প্রতি বছর কি পরিমাণ ক্ষতি হয় তারও কোন স্পষ্ট জরিপ করা হয়না। অনেকে বলছেন লোক দেখানো তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা বলে মুলা ঝুলে রেখেছে সরকার। একদিকে রাজনীতির ফায়দা লুটার কারণে মঙ্গা নামক শব্দটিকে মৌখিক বিদায় দিতে চাইলেও বাস্তবে মঙ্গার যন্ত্রণার বহু ঘটনা স্বাক্ষী তিস্তা পাড়ের আকাশ বাতাস। সরকার দূরদৃষ্টির অভাবে রংপুর অঞ্চলের মানুষের দুঃখ কখনও দুর হয়না। সরকার কাগজ-কলমের মঙ্গাকে বিদায় জানালেও এখানে মঙ্গার সাথে যুদ্ধ করে চলতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সত্যি যে, আমাদের দুঃখের আর এক নাম তিস্তা।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক, লালমনিরহাট।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone