আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: লালমনিরহাটে কৃষিপণ্য পরিবহনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নৌ পথ। নৌ পথে পণ্য পরিবহনে খরচ কম ও দ্রুত পৌচ্ছানো যায়। ঝুঁট ঝামেলাও কম। পথে পথে চাঁদা দিতে হয় না। ফলে পরিবহন খরচ সাশ্রয়ী হয়। শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমেই এই নৌ পথটি পণ্য পরিবহনে চালু থাকে। শুস্ক মৌসুমে ধরলা নদীতে নাব্যতা থাকে না। তখন নৌ পথটি পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকে। মূলত ৪-৫ মাস নদী পথে পণ্য পরিবহন হয়। অবিভক্ত বাংলায় এই নদী পথ ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। কালের বির্বতনে হারিয়ে গিয়ে ছিল। আবারও সময়ের প্রয়োজনে নৌ পথটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের চর ফলিমারী, গোরকমন্ডল ও কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার ২০-২৫টি গ্রামের উৎপাদিত কৃষি পণ্য এই নৌ পথে দিয়ে লালমনিরহাট হতে জামালপুর, ঢাকার বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর ওপার পর্যন্ত পণ্য পরিবহন হয়। পরে পণ্য সড়ক পথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ অন্যত্র চলে যায়। এতে কৃষি পণ্যের পরিবহন ব্যয় কম হয়। ব্যবসায়ীগণ পরিবহন খরচ সাশ্রয় করতে বর্ষা মৌসুমে নৌ পথ কে বেচে নিয়েছে। দিন দিন নৌ পথ পণ্য পরিবহনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
চর ফলিমারী হতে ১টি নৌকায় ধান, চাল, ভুট্টা, কলা, সবজি, গরু ও নানা কৃষিজ পণ্য প্রায় ২১মেট্টিক টন পর্যন্ত খুব সহজে পরিবহন করা যায়। নৌ পথে ২১মেট্টিক টন পণ্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর ওপারে পৌচ্ছে দিতে নৌকা ভাড়া দিতে হয় সর্বোচ্চ ১৪হাজার টাকা।
নৌকার মাঝি আব্দুল বাতেন জানান, শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকায় পণ্য ফলিমারী চর হতে যমুনা নদীর বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর ওপারে পৌচ্ছে দিতে ৮-১০ঘন্টা সময় লাগে। কোন ঝুঁট ঝামেলা চাড়াই পণ্য খুব সহজে পৌচ্ছে দেয়া যায়। নদী পথে কোন খানে কোন চাঁদা দিতে হয় না। শুধু মাত্র ফলিমারী চরে নৌ ঘাটের ঘাটালকে ১হাজার টাকা দিতে হয়। কারণ তিনি সরকারি ভাবে মোগলহাটের ঘাঁটটি ডেকে নিয়েছেন। তাই তাকে ঘাট ব্যবহার না করেও অর্থ দিতে হয়। কারণ ঘাটের পাশে নৌকা ভিড়িয়ে পণ্য নৌকায় লোড করা হয়।
নৌকার মাঝি আরও জানান, ১৫ মেট্টিক টন পণ্য ট্রাকে পরিবহন করে ঢাকায় নিতে ২৬হাজার টাকা লাগে। সময় লাগে বেশি। পথে পথে দিতে হয় নানা ধরণের চাঁদা। এতে পণ্য পরিবহনে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়ে যায়।
বয়ঃবৃদ্ধ আবুল কাশেম জানান, মোগলহাট নৌ পথটি শত বছরের পুরনো নদী পথ। অবিভক্ত বাংলায় এই নদী পথটি জনপ্রিয় ছিল। বন্দর ছিল রমরমা। পরে দেশ ভাগ হলে বন্দরটি পরিত্যাক্ত হয়ে যায়। তারপরেও বর্ষা মৌসুমে এখানকার ব্যবসায়ী ও কৃষক পরিবারগুলো কৃষি পণ্য পরিবহনে নৌ পথটি ব্যবহার করে আসছে। বর্ষা মৌসুমের ৪-৫ মাস নৌ পথটি চালু থাকে। তখন বড়বড় নৌকা, টলার এখানে আসে। তারা চরে নৌকা ও টলার ভিড়িয়ে কৃষি পণ্য বোঝাই করে ঢাকায় নিয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে চরের মানুষ এই নৌ পথকে ঘিরে নানা ধরণের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। কেউ শ্রমিকের কাজ করে, কেউ মৌসুমী ব্যবসা করে। দূর-দূরান্ত হতে ব্যবসায়ী ও নৌ পথের নৌকা চালকরা এসে চরে অবস্থান নেয়। ফলে চরের বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্য রেড়ে যায়।
এদিকে ফলিমারী চরটি ভারত সীমান্ত ঘেঁষা চর। এখানে ধরলা নদী ভারত হতে বাংলাদেশে ঢুকেছে। নৌ পথে পণ্য পরিবহন হয়। কিন্তু দূর্গম চর হওয়ায় আইন শৃংখলা বাহিনীর তেমন নজরদারী নেই। ফলে কৃষি পণ্যের সাথে অবৈধ পণ্য পরিবহন হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাই পণ্য পরিবহন এখানে নজরদারীতে রাখা প্রয়োজন বলে সচেতন মহল মনে করে।
লালমনিরহাট উন্নয়ন আন্দোলন পরিষদের সদস্য মাসুদ রানা রাশেদ জানান, ধরলা নদীর তীরে অবস্থিত মোগলহাট নদী বন্দরটিকে আন্তর্জাতিক নদী বন্দর ও স্থলবন্দর রুপান্তরের দাবি উঠেছে। এখানে ডান তীরে বাংলাদেশ বামতীরে ভারতের কুচবিহার। স্থলবন্দর ও নদীবন্দর চালু হলে খুব সহজে পণ্য পরিবহন করা যাবে। বিশেষ করে নেপাল হতে পণ্য পরিবহন খরচ এখানে কম হবে। বর্তমানে এই নৌ পথটি বর্ষা মৌসুমে চালু থাকলেও রাষ্ট্রের কোন স্বীকৃতি নেই। বন্দর কার্যক্রম চালু রাখতে এখানে কোন অবকাঠামো গড়ে উঠেনি। নৌকাগুলো সুবিধামত স্থানে ভিড়িয়ে কৃষি পণ্য পরিবহন করে। বর্ষা মৌসুমে ধরলা নদীর বালুও টলারের মাধ্যমে পরিবর্হন করে জামালপুর, টাঙ্গাইল ও ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি সিরাজুল হক জানান, মোগলহাট স্থল বন্দর ও নৌ বন্দর স্থাপনে এখানকার ব্যবসায়ীগণ দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসেছে। এই বন্দর চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রাণ ফিরে পাবে উত্তরের এই জেলা।
তিনি আরও জানান, অবিভক্ত বাংলায় লালমনিরহাট জেলার ভৌগলিক অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। এক সময় গোটা ভারতের সাথে রেল যোগাযোগ ছিল লালমনিরহাটের। এখনো সেসব অবোকাঠামো রয়েছে। বৃষ্টিশরা এই ভৌগলিক অবস্থানের কারণে লালমনিরহাটে সেই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বিমানঘাঁটি নির্মাণ করে ছিল। এই বন্দর চালু হলে আবারও বাংলাদেশ, ভারত, ভূটান ও নেপালের সাথে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। ব্যবসা বাণিজ্যে সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে লালমনিরহাট। এতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর নদীপথে পণ্য পরিবহনে সম্ভ্যাবতা যাচাইয়ে ভূটান রাষ্ট্রদূত (ভারপ্রাপ্ত) সিডিএ.এ.আই কিজাংওয়াংচুক মোগলহাট স্থলবন্দর পরিদর্শন করেন।
তিনি সে সময় বলেন, সীমান্তবর্তী ধরলা নদী হয়ে বাংলাদেশের মোগলহাট ও চিলমারী নদীবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন নদীবন্দর ব্যবহার করে দুদেশের পণ্য পরিবহনে সম্ভ্যাবতা নিয়ে কাজ করছে ভূটান।