কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে লালমনিরহাট জেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা, ধরলা, রত্নাই ও সানিয়াজানসহ প্রায় সকল নদ-নদীর পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পেয়ে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।
লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৫টি ইউনিয়নই বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। লালমনিরহাট জেলার চারদিকে শুধু পানি আর পানি। কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৫সেন্টিমিটার উপরে তিস্তা, শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৩সেন্টিমিটার নিচে ধরলার পানি। বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হওয়ায় কিছু কিছু ফসলী ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে যাচ্ছে পুকুরের মাছ। সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কিছু কিছু পরিবারের মানুষ পানিবন্দী হয়ে অমানবিক জীবন যাপন করছেন। এসব মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি হয়েছে। অনেক জায়গায় সড়ক পথ ভেঙ্গে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বানভাসি মানুষগুলো নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে।
মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ধরলা ও রত্নাই নদীর পানি বেড়ে এ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে।
কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইদ্রিস আলী বলেন, ধরলা ও রত্নাই নদীর পানিতে এ ইউনিয়নের বন্যার অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
এদিকে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পানি বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে লালমনিরহাট জেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার (২১ জুন) বিকাল ৩টা থেকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১দশমিক ৬৮মিটার। যা (বিপদসীমা ৫২দশমিক ১৫সেন্টিমিটার) যা বিপদসীমার ৪৭সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শুক্রবার (২১ জুন) ভোর থেকে কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপরে থাকলেও বিকাল ৩টার পর থেকেই আবারও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষ এবার বন্যার কবলে পড়েছেন।
পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা নদীর তীরবর্তী ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দাবি, লালমনিরহাট জেলার তিস্তা নদীর কতিপয় নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তবে বৃষ্টির কারণে উজানের ঢেউয়ের ফলে পানির প্রবাহ বেড়েছে। ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানির প্রবাহ কম বলে দাবি করেছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ বেড়েছে। বর্তমানে তিস্তা ব্যারাজের সবগুলো জলকপাট খোলা রয়েছে। তবে ভারতে পানির প্রবাহ কমে গেলে তিস্তার পানি আরও কমবে বলে জানান তিনি।
এদিকে ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে পানি সমতল ৩০.৬৬মিটার (বিপদসীমা ৩১.০৯মিটার) যা বিপদসীমার ৪৩সেন্টিমিটার নিচে।
এছাড়াও রত্নাই, স্বর্ণামতি, সানিয়াজান, সাকোয়া, চাতলা, মালদহ, ত্রিমোহীনি, মরাসতি, গিরিধারী, গিদারী, ধোলাই, শিংগীমারী, ছিনাকাটা, ধলাই ও ভেটেশ্বর নদীতে বন্যার পানিও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, লালমনিরহাটে বৃষ্টিপাত ১মিলিমিটার।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.