ইঞ্জিন ও কোচ ঘুরানোর জন্য বৃটিশ আমলে এ দেশে প্রথম লালমনিরহাটে নির্মিত হয় টার্ন টেবিল। কালের বিবর্তনে ওই টার্ন টেবিল নষ্ট হয়ে পরিত্যাক্ত হওয়ার পেড়িয়ে গেছে দুই যুগ। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে উল্টোদিকেই ট্রেন চালাতে হয়েছে চালকদের। এছাড়া চাকার ক্ষয় এবং চালককে ইঞ্জিনের পিছনে বসে ট্রেন চালাতে হচ্ছে।
তবে দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি লালমনিরহাট রেলওয়ে যন্ত্র প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে নতুন করে আবারও টার্ন টেবিলটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষামাত্র।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে লালমনিরহাটের টার্ন টেবিলটি পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর নতুন করে টার্ন টেবিল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) কার্যালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদনের চিঠি দেওয়া হয়। পরে বিভাগীয় রেলওয়ে দপ্তরের প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) মোঃ তাসরুজ্জামান বাবু এর নকশা ও প্রযুক্তিতে এটি তৈরি হয়। নির্মাণ কাজ শুরু হয় চলতি বছরের জানুয়ারিতে। কাজ শেষ হয় গত মার্চ মাসে। এতে ব্যয় হয়েছে ২৫লাখ টাকা।
জানা গেছে, বৃটিশরা ওই টার্ন টেবিলের নকশা ও নির্মাণ কৌশল সরিয়ে ফেলায় বাংলাদেশে আর কোন টার্ন টেবিল নির্মিত হয়নি। টার্ন টেবিল না থাকায় ইঞ্জিন না ঘুরিয়ে উল্টো ভাবে ট্রেন চালানো হচ্ছে। ফলে চালক ইঞ্জিনের পিছনের দিকে বসায় আঁকাবাকা রেললাইনে চালকদের দেখতে অসুবিধা হয় এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। তাছাড়াও একদিকে চলাচলের কারণে ঘর্ষনে ক্ষয় হচ্ছে চাকাগুলো। এতে বাড়ছে ট্রেন লাইন থেকে পড়ে যাওয়ার দুর্ঘটনা। তাই এ সমস্যা সমাধানে দেশের এই প্রথম লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগ নিজ প্রযুক্তিতে স্বল্প খরচে রেলের অব্যবহৃত যন্ত্রাংশ দিয়ে নির্মাণ করেছে টার্ন টেবিল। এখন শুধু রেললাইন সংযোগের অপেক্ষা। এটি চালু হলে দেশের মধ্যে হবে এটিই প্রথম নির্মিত টার্ন টেবিল।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় স্টেশন থেকে প্রতিদিন ১১টি ট্রেন ঢাকা, টাঙ্গাইল, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরসহ ২৮টি রেল স্টেশনে চলাচল করছে। এটি চালু হলে ইঞ্জিন সোজাভাবে চলবে। এতে চালকদের সুবিধার পাশাপাশি চাকার ক্ষয়রোধ হবে।
ট্রেন চালক জহুরুল ইসলাম জানান, ইঞ্জিন ঘোরানোর ব্যবস্থা না থাকায় ওল্টোভাবেই ট্রেন চালাতে হয়। এতে অনেক সময় বাঁকা রেললাইনে সিগনাল চোখে পড়েনা। আর ইঞ্জিন ঘুরিয়ে সামনের দিকে চালক থাকলে গাড়ী চালাতে সুবিধা হয়। এ টার্ন টেবিল নির্মাণের ফলে এ সমস্যার সমাধান হলো।
এ টার্ন টেবিল তৈরির উদ্যোক্তা লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ এন্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামান বাবু বলেন, দেশে এই প্রথম দেশীয় যন্ত্রাংশ দিয়ে টার্ন টেবিলটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ইঞ্জিন ও কোচ সহজেই ঘোরানো যাবে। স্বল্প ব্যয়ে আর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ টার্ন টেবিলটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে যেমন চাকার ক্ষয়রোধ হবে তেমন চালককে আর পেছনে বসে ট্রেন চালাতে হবেনা। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে যাবে। রেলভ্রমন হবে আরও গতিশীল ও নিরাপদ।