:: জাকি ফারুকী ::
বিভ্রমঃ
তুমি ভুলে গেলে কি?
মনে হয় না!
আমাদের অনেক সুন্দর সময় কেটেছে,
সে কথা মনে হয়।
শুধু মনে হয়।
সব স্বপ্নের মতো।
ধারাবাহিক
এবং
অতীত।
অতীত কি কোন নাম?
না অনুভব!
নাকি পরম বেদনা!!
তুমি কোন মায়া
কোন বিভ্রম
কোন ভুলে যাওয়া উচ্চারন।
২০/২/২৩
নিউজার্সি।
–
হাওয়ায় উড়ছে সব জবাবঃ
তোমার প্রশ্নের শব্দ চয়নে
আমি বুঝে গেছি
আজ তুমি আমার কাছে
জানতে চাইবে,
আমি কখনো তোমার সাথে
পাহাড়ে একা,
বেড়াতে যেতে চেয়েছি কি না।
আমি ফরম ফিলাপের মতো সহজ উত্তর
দিয়ে বাইরে এলাম হল রুম থেকে।
তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করলে প্রশ্নটা,
বললাম ঝড়ের হাওয়ায় উড়ছে সব জবাব।
তুমি লন্ডভন্ড করে দিতে চাইলে
সব কিছু
এক নিমেষে।
অথচ দেখো,
প্রথম দিন থেকে ক্লাশে তোমার পাশে
ভাগ্যবানের মতো বসে থেকে,
তোমার পাণিগ্রহনের জন্য, নিজেকে প্রস্তুত করেছিলাম আমি।
সেই সব বিস্মৃত ইতিহাস,
আজ আর কারোই মনে নেই।
পৃথিবীতে কোন স্মৃতি
চিরস্থায়ী হয় না।
তোমার জন্য কখনো কোন জবাব আমার নেই,
তুমি তো জানোনা, ভালোবাসো কিনা আমাকে
তোমার চোখে তো আমার স্বপ্ন নেই,
জীবনের স্মৃতি বাতাসেই ভাসছেই।এই কাছে থাকা,
ভালোবেসে কাছে বসে থাকা,
এসব কিছু এখন কেমন মূল্যহীন খুব
সময় চলে গেলে কোন কিছুর দাম থাকে না।
২৫/২/২০২৩
নিউজার্সি।
–
চলে যাবার ঠিকানাঃ
(হামিদুল মৃধা স্মৃতিপাঠ)
সবারই একই রকম।
বার্লিনের ছোট্ট একটা পাহাড়ের ওপর
পাহাড়ের ঢালে মানুষেরা ছোট্ট এপিটাফ নিয়ে
কফিনে শুয়ে দীর্ঘ অন্তহীন ঘুমের সময় কাটিয়ে যায়
কি নিবিড় আকাশ আর তারাদের অনন্ত মিছিল।
ওখানে তহমিনা ভাবী আকাঙ্খা করেছে থাকবার।
আর তোমার আবাস কাকিনার সেই মৃধা বাড়ীর উঠানের এক কোনায়।
মন্টি কি এবারও একুশে তোমার সমাধিতে একটা ফুল রেখে আসবার অবসর পেয়েছিলো।ভুলে যেতে পারে।
ভুলে যাওয়া কি খুব স্বাভাবিক!
কেমন করে ভুলে যায় মানুষ,
অন্তহীন অবসরের মাঝে পবিত্র সব মানুষদের?
কুশলী মানুষেরা পথ দিয়ে হেঁটে যায়,
কবার কিছু নাই বাহে, মানুষটা মরি গেইছে,
কোটে তার তামদারী হইল?
হামরা খাইনো হয় হাত ডুবি,
গরুর মাংসের ঝোল আর মোটা চাইলের ভাত
আলুর ডাইল,
দোয়া করিনো হয়।
কাঁয়ো নাই।
দিন চলি যায়।
হামাক কাঁয় পোছে?
তুমি কই তাহমিনা ভাবী,
কবে হবে অবসর?
আবার পাথরের পাহাড় থেকে নেমে আসবে
ক্রুসবিদ্ধ যীশু,
অথবা হেঁটে যেতে যেতে ক্লান্ত হিমালয়ের তথাগত,
তুমি তাঁদের সাথে এসো,
ট্রেনের হুইসেল বেজে যাবে দুরে,
কাকিনার আকাশে।
সালাম ভাইজান, বকুলভাবী,
ভাবীজান,
এমন দিনে আর কি করা যায়!
২১/২/২৩
নিউজার্সি
–
সময়ের পাতাঃ
জীবনের অধরা চাকা,
দুমড়ে মুচরে খাচ্ছে সময়ের পাতা,
ভোর হয়.. পাখিরা ডাকেনা শীতে
সকাল… কুয়াশায় ম্রিয়মান
তেজ নেই রোদে… কখনো সূর্য ঢাকা
মেঘের আড়ালে।
তারপর দুপুর
বিকেল
রাত…
কি অসম্ভব প্রতিদিনের এই
অসার জীবন, কর্মহীন।
লিখবার পাতা গুলো কেমন ঝলসে গেছে স্মৃতির দহনে,
জীবনের কল্পলোক,
মানুষের মুখগুলো,
কেমন অচেনা সর্বত্র,
আবার নুতন করে পৃথিবী গড়ে তোলা
কি অসম্ভব কাজ মনে হয়।
তবু এগিয়ে যেতে চাই, একজন মানুষ
ধীরে হেঁটে যায়
সমুদ্রের পথে,
এ’তো আটলান্টিক মহাসাগরের অজেয় ঠিকানা,
ঢেউ আর ঢেউ।
তোমার পুরাতন ঠিকানাটা আর একবার লিখে দিও,
যদি চাই পথ চিনে ফিরে যেতে,
যদি মনে হয়, নুতন পৃথিবী আর গোছানো হবেনা,
তাহলে তোমার আঁচলে মুখ মুছে,
তিস্তার জলে স্নান সেরে, ভেসে উঠবো,
আমার পান্ডুর মুখখানি দেখে
ভর্ৎসনা করে বলে উঠো,
এমন দৈবের দিকে চোখ দিয়ে কেন মরে যেতে যেতে
ফিরে এলে, পাতক মানুষ!
১৭/২/২৩
নিউজার্সি।
–
সদ্য সমাপ্ত জীবনঃ
রেখে এলাম পৃথিবীর প্রান্তরে,
তোমরা যারা অনাদিকাল ধরে আসবে,
আসতেই থাকবে,
তাঁরা আমার সময়টার কথা মনে রেখো।
সময়টা অনেক সময়ের মতো
সত্তর বছরের মতো দীর্ঘ ছিলো।
মেষ পালকের মতো আমার জীবনের সুন্দর
প্রভাতের গল্প ছিলো।
গল্পছিলো অনেক ভাইবোনদের নিয়ে প্রবল স্রোতের মধ্যে তিমির রাত্রির অনেক গানের কথা,
সবি তো পেরিয়ে এসেছিলাম।
এখন পিছন ফিরে যখন তাকাই,
কেমন একটা গল্পের মতো জীবন ঝুলে থাকে
মিহিন
মাকরসার জালের মতো,
কোথাও একটু ছিঁড়ে গেছে,
আমার মা আমার বাবা,
আমার বোনদের গল্প… সব মনে আসে আমার
সদ্য সমাপ্ত জীবনটা রেখে আসবার পর অনেক মানুষেরা নিবিষ্ঠ মনে আমাকে নিয়ে ভাবছে,
তাঁদের সব ছক গুলো নুতন ডাক্তারের কাছে আবার বদলে ফেলতে হবে। এমনই নিয়ম।
এর চেয়ে আর বেশী কি ভাববে।
আমার গল্পটা এতোটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাক।
২৫/২/২০২৩
–
সব পাথর উল্টে দেখোঃ
তিস্তা নদীতে তখন কোন জল নেই,
হিমালয়ের বুক ধরে নেমে আসি নদীর বুকের ভেতর
ভয় কাজ করে,
যদি উজানের ঢল নেমে আসে,
জলের শব্দতো পাবো, সেই ভরসায় হাতের পাতায় পাথরের ধার ধরে খুঁজে যাই,
কোথাও কি তার নাম লেখা পাবো।
অবাক হয়ে খুঁজে যেতে থাকি,
খুবই অবাক,
কেইস দীপিভেন হাসে, বলে চলো উঠে যাই,
এটাই হবে, কোটী কোটী পাথরের মাঝ হতে,
চ্যাপ্টা শ্যাওঁলা ধরা পাথরটা ওর চোখের ধাঁধায় পড়ে যায়।
পরের ক’বছর আর মনে নেই,
কেমন ছিলো সে জলস্রোত দুর্নিবার তিস্তার বুকে!
সেবক এর কাছে তুলে আনা সে কঠিন পাথর
হল্যান্ডের হিলিহোম স্টেশনের এক বাড়ীর ছোট্ট বাগানে আবিস্কার করি।
এঁকে এখান পর্যন্ত আনতে পেরেছো!
রেড ওয়াইনের গ্লাশ থেকে ঠোঁটটা সরায়?
তুমি চিনতে পারলে দেখি,
তোমার স্মরনশক্তি বিষ্ময়কর।
দুজনেই হেসে উঠি।
তুমি হিমালয় থেকে তুলে আনা পাথর,
এখানে এনে ফেলে রেখেছো,
কেউ কি জানে এর পেছনের ইতিহাস?
কেইস দীপিভেন হেসে ওঠে।
বলেছিলাম, ইনিকা আর মারিকা কে,
ওরা আমার স্মৃতিপাঠ কে মৃত্যুর পর সন্মান দেবে,
আমার এপিটাফের এককোনায় পাথরটা সাজাবে
এর চেয়ে বেশী আর কিই বা বহন করতে পারি।
লাল মদ গুলো গ্লাস থেকে খুব দ্রুত কমে যেতে থাকে
আমাদের মনেহয় স্মৃতির তৃষ্ণা তখন,
দারুন ভাবে পেয়ে বসেছে।
“জলপাইগুড়ির তিস্তা নন্দিনীর করকমলে”
৩/৩/২৩
টিনটনফলস,
নিউজার্সি, আমেরিকা