লালমনিরহাটে শত শত সবুজ গাছে যেন হলুদ রঙ্গের সোনালু ফুল ফুটেছে। এ ফুলের অপরুপ সৌন্দর্য, সৌরভ এখন শোভা পাচ্ছে ফুল প্রেমিদের। সেই সাথে পাখির কোলাহল ও ফুলের গন্ধে যেন মন জুড়িয়ে যায়। কালের বিবর্তনে সেই চিরচেনা সোনালু ফুল গাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
জানা যায়, অপরুপ শোভা দানকারী সোনালু ফুল বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ফুটে। এলাকা ভিত্তিক ফুলটির নাম ভিন্ন ভিন্ন। কোথাও সোনালু, কোথাও বান্দর লাঠি, কর্ণিকা, অলানু, সোঁদাল। আবার কোথাও স্বনালী ফুল গাছ বলে পরিচিত। লালমনিরহাটে এই ফুল সোনালু নামেই বেশি পরিচিত। তবে এ সোনালু ফুল গাছটির ইংরেজি নাম- Golden Shower Tree, বৈজ্ঞানিক নাম- Cassis Fistila। Caesalpiniaceae পরিবারের সদস্য। আদি নিবাস পূর্ব এশিয়া। তবে হাজার বছর আগেও এ গাছ আমাদের উপমহাদেশে ছিল। মহাকবি ব্যাস-এর ভগবত কিংবা কালিদাস-এর মেঘদূত-এ এই ফুলের গুণ-কীর্তন করা হয়েছে।
সৌন্দর্য্যরে পাশাপাশি গাছের মালিক আর্থিক ভাবে লাভবান হতো। এপ্রিল-মে ও জুন মাসে সোনালু গাছটি থেকে লম্বা ছড়া বের হয়। সে ছড়ায় সুন্দর হলুদ রংঙ্গের ফুল ফুটে। ফুল থেকে লম্বা শুটি হয়। সোনালু গাছের ফুল, লতা, পাতা, বীজ ও মূল ঔষধী কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও সোনালু ফুল গাছের শিকড় ও গাছের ছাল দিয়ে মানবদেহের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ ঔষধ তৈরীর কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। সে ঔষধে মানবদেহের অনেক উপকার হয়।
এছাড়াও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে কৃষক। এ ফুল গাছটি বিলুপ্তির পথে চলে যাওয়ার ফলে গাছ ও ঔষধ তৈরীতে সংকট দেখা দিয়েছে। অল্প সংখ্যক সোনালু ফুল গাছ চোখে পড়লেও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়েছে কয়েকগুন। এ গাছের এতগুন থাকার পরেও গাছটি সংরক্ষণ ও রক্ষায় কোন উদ্যোগ নেই। পথচারীরা বিভিন্ন এলাকায় সোনালু ফুল গাছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতে গাছতলায় ছুটে আসেন। পাখি ও ফুল দেখে মনটা ভাল থাকে।
লালমনিরহাটের কালেক্টরেট মাঠ স্টেশন রোডে ও খোর্দ্দ সাপটানা সড়ক এলাকায় সোনালু ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা গেছে।
লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও ২টি (লালমনিরহাট, পাটগ্রাম) পৌরসভা জুড়ে রয়েছে অসংখ্য সোনালু গাছ। সড়কসহ গ্রামাঞ্চলের মেঠো পথে, বাঁশ বাগানে স্বর্ণচূড়ার ন্যায় সোনালী অলংকারে সৌন্দর্য বিলিয়ে নিশ্চুপ ভাবে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি রাঙানো সোনালু ফুল।
তবে এক সময় সোনালু গাছ লালমনিরহাটের প্রকৃতিতে অনেক বেশি থাকলেও ধীরে ধীরে তা কমে আসছে। সোনালু গাছের কাঠ তেমন গুরুত্ব বহন না করায় এবং গাছটি খুব ধীরগতিতে বেড়ে উঠায় এই গাছ রোপণে আগ্রহ নেই কারও। প্রকৃতিকে সাজাতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
কবি ও সাহিত্যিক মাসুদ রানা রাশেদ বলেন, সোনালু ফুল গাছ গুরুত্বপূর্ণ। গাছটি মানুষের জন্য উপকারী ব্যক্তি পর্যায়ে সোনালু ফুল গাছ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন রয়েছে।
কৃষিবিদ নির্মল রায় বলেন, সোনালু ফুল গাছ কৃষকের নানা কাজে প্রয়োজন হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দাবিদার এই সোনালু ফুল গাছ।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শহীদুল ইসলাম খন্দকার বলেন, সোনালু গাছটির সৌন্দর্যে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ও মনটাকে নাড়া দেয়। ফলে কৃষক পরিবার হাসি-খুশিতে রয়েছে।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.