লালমনিরহাটে কালের আবর্তে ঐতিহ্য হারাচ্ছে তিস্তা শুঁটকির বন্দর। এ বন্দরটি লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে তিস্তা নদীর তীর ঘেঁষা তিস্তা শুঁটকির বন্দর নামে পরিচিত। তবে নেই আগের মত হাঁকডাক ক্রেতাশূন্য মোকামে এক প্রকার অলস সময় পার করছেন পাইকাররা। বংশ পরম্পরায় ধরে যাঁরা এই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন তাদের অবস্থাও এখন শোচনীয়।
এ শুঁটকির বন্দরটি গড়ে উঠেছিল প্রায় ২শত ৫০বছর আগে ব্রিটিশ আমলে। সেই সময়ে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বড় বড় নৌকায় বিভিন্ন জাতের শুঁটকি নিয়ে ভিড়ত এ বন্দরে। আর পার্শ্ববর্তী দেশের আসাম, পশ্চিমবঙ্গসহ অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন শহরে চলে যেত এ শুঁটকি। সেই সময় ক্রেতা ও বিক্রেতাদের আনাগোনায় মুখরিত থাকত এ বন্দরটি। বন্দরটিকে ঘিরেও গড়ে উঠেছিল অন্যান্য ব্যবসা।
শুঁটকি ব্যবসায়ী রমজান আলী জানান, এই শুঁটকি বন্দরটি তিনি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছেন। তাঁর বাপ-দাদারা এখানেই ব্যবসা করতেন। তখন এখানে অনেক বড় বড় পাইকার আসত, বিভিন্ন জাতের শুঁটকি কেনাবেচা হতো। সেগুলো দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন স্থানে চলে যেত। বর্তমানে সৈয়দপুরের শুঁটকি বন্দর হওয়াতে আগের মতো কেনাবেচা এখনো হয় না। ব্যবসার অবস্থা ভালো না থাকায় অনেকেই পেশার পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় চলে গেছেন।
শুঁটকি ব্যবসায়ী শফিক মিয়া জানান, বর্তমানে এ বন্দরে নেই তেমন বেঁচা কেনা, তাই বাপ-দাদার ব্যবসা টিকিয়ে রাখাটাই এখন তাঁর কাছে কষ্টসাধ্য হয়েছে পড়েছে। ব্যবসার পুঁজিও নেই তেমনটা।
তিস্তা শুঁটকি বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দিলীপ রায় বলেন, সরকার যদি এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য স্বল্প সুদে বা সুদমুক্ত ঋণ দিতো তাহলে আমরা হয়তো পূর্বপুরুষের ব্যবসাটি টিকিয়ে রাখতে পারতাম।
সময়ের সাথে সাথে এ বন্দরটিও যেন হারিয়েছে তার যৌবন। নেই আগের মতো চাহিদা, অনেকে আবার পুঁজি খুইয়ে চলে গেছে অন্যত্র, করেছেন পেশার পরিবর্তন। যারা বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকজন এ ব্যবসা করছেন তারাও নেই ভালো। পুঁজির অভাবে তাদের ব্যবসা দিন দিন ছোট হয়েই চলেছে। সরকারের একটু সহযোগিতায় আবারও হয়তো ফেরানো যাবে প্রাচীন এই ব্যবসার প্রাণ। এমনটাই দাবি শুঁটকির ব্যবসার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের।
প্রসঙ্গত, তিস্তার শুঁটকি বন্দরটিতে বর্তমানে শুঁটকির ২টি আড়ত ও ১০টি গোডাউন রয়েছে।