লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) যাচ্ছে ইটভাটায়। এতে উর্বরতা শক্তি হারিয়ে উৎপাদন কমছে কৃষি জমির। আবার উর্বরতা শক্তি ফিরে আসতে ৫বছর থেকে ১০বছর সময় লাগে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলায় ৫২টির অধিক ইটভাটা রয়েছে।
ইটভাটার হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ইটভাটার লাইসেন্স নাই। ইটভাটার রীট পিটিশন রয়েছে। ইটভাটার চলতি অর্থবছরে অগ্নি সংযোগের অনুমতির আবেদন পাওয়া যায়নি। ইটভাটা বর্তমানে বন্ধ আছে। ইটভাটা নির্মাণাধীন। ইটভাটা হালনাগাদ আছে। ইটভাটার চলতি অর্থবছরে অগ্নি সংযোগের অনুমতির আবেদন পাওয়া গেছে মর্মে উল্লেখ রয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবমতে, এসব ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য বছরে আনুমানিক ১হাজার বিঘা উর্বর কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করা হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সচেতনতামূলক প্রচারণার অভাবে উপরিভাগের মাটি বিক্রি বা স্থানান্তরের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জমি ও ইটভাটার মালিকেরা জানেন না। এ অবস্থায় প্রভাবশালী ইটভাটার মালিকেরা উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার করেও থেকে যাচ্ছেন শাস্তি বা জরিমানার বাইরে।
লালমনিরহাট জেলায় ৫২টি ইটভাটা রয়েছে। তন্মধ্যে লালমনিরহাট সদর উপজেলার ইটভাটাগুলো হলো- মেসার্স আর এম ব্রিকস্, মেসার্স স্যার ব্রিকস, মেসার্স টু স্টার ব্রিকস্, মেসার্স হাজী ব্রিকস্, মেসার্স এসকেওয়াই ব্রিকস্, মেসার্স জেটি ব্রিকস, মেসার্স এপি ব্রিকস্, মেসার্স এ এস ব্রিকস্।
আদিতমারী উপজেলার ইটভাটাগুলো হলো- মেসার্স সান ব্রিকস্, মেসার্স ওয়ান স্টার ব্রিকস্, মেসার্স থ্রি স্টার ব্রিকস্, মেসার্স বি টি ব্রিকস্, মেসার্স এ আই আর ব্রিকস, মেসার্স এল এম বি ব্রিকস্, মেসার্স তাপতী ব্রিকস্, মেসার্স এনএন ব্রিকস, মেসার্স জে.আর. ব্রিকস্, মেসার্স এ এল ব্রিকস্, মেসার্স এ এফ এইচ ব্রিকস্।
কালীগঞ্জ উপজেলার ইটভাটাগুলো হলো- মেসার্স এস ই পি বি ব্রিকস্, মেসার্স এ.এল.বি. ব্রিকস্, মেসার্স বি বি এম সি ব্রিকস্, মেসার্স বরাত ব্রিকস্ ম্যানুফ্যাকচারার, মেসার্স এম জে এ ব্রিকস্, মেসার্স এন ইউ এম ব্রিকস্, মেসার্স এস এ ব্রিকস, মেসার্স বি.পি.সি. ব্রিকস।
হাতীবান্ধা উপজেলার ইটভাটাগুলো হলো- মেসার্স বেঙ্গল ব্রিকস, মেসার্স এস ডি পি, মেসার্স এস ডি এফ, মেসার্স তাগের ব্রিকস্ (এমটিবি), মেসার্স জেএস ব্রিকস, মেসার্স এন এম বি ব্রিকস্, মেসার্স এম এম বি ব্রিকস, মেসার্স এ এম ব্রিকস, মেসার্স উত্তরা ব্রিকস, মেসার্স জেএন্ডবি ব্রিকস্, মেসার্স জে আর এস ব্রিকস, মেসার্স এস টি ব্রিকস্, মেসার্স এম আর সি ব্রিকস্, মেসার্স এম এস এম ব্রিকস, মেসার্স এ এস কে ব্রিকস্, মেসার্স এম আর সি-২।
পাটগ্রাম উপজেলার ইটভাটাগুলো হলো- মেসার্স ইউ বি এম ব্রিকস, মেসার্স জে এন্ড এন ব্রিকস্, মেসার্স আসিফ ট্রেডার্স-পিজিএম, মেসার্স জে এস ইউ ব্রিকস্।
সরেজমিনের ঘুরে দেখা যায়, ফসলি জমি থেকে শ্রমিকেরা ট্রাক্টরে করে মাটি ভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। ভ্যানে করেও জমি থেকে মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলা সদর উপজেলার মোগলহাটে ২টি অবৈধ ইট ভাটার চিমনী গুড়িয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে। টপ সয়েল বা ফসলি উর্বর জমির উপরিভাগের মাটি কেটে পরিবহনের দায়ে ৪টি ট্রাক্টর আটক করে লালমনিরহাট সদর থানায় জমা দেয়া হয়েছে।
শ্রমিকরা জানান, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এই মাটি কেটে নেওয়ার কাজ চলবে।
কৃষি ও পরিবেশবিদরা বলেন, টপ সয়েলে যে জৈব উপাদান থাকে, তা কৃষি উৎপাদনের জন্য সহায়ক। এই জৈব উপাদান ইটভাটায় চলে গিয়ে অপচয় হয়, যা পূরণ করতে ৫বছর থেকে ১০বছর সময় লেগে যায়।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলেছে, জৈব উপাদান সংবলিত মাটি কেটে নিলে বা কোনোভাবে নষ্ট হলে, তা কৃষি ও পরিবেশের জন্য প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি করে। জেলার ৫২টি ইটভাটার বিপরীতে জেলার কমপক্ষে ১হাজার বিঘা কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি ভাটায় চলে যাচ্ছে। এটা ঠেকাতে আমরা কাজ করছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন বলছে, জেলায় ৫২টি ইটভাটা রয়েছে। বিধি অনুযায়ী টপ সয়েল ইটভাটায় ব্যবহারের সুযোগ নেই। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
রংপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, ইটভাটার জন্য টপ সয়েল ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অনুমোদিত ইটভাটাগুলো তাদের প্রয়োজনে অনুমতি সাপেক্ষে হাজা-মজা পুকুর, খাল-বিল-ডোবার মাটি ব্যবহার করতে পারবে। টপ সয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে বা নেওয়া হচ্ছে-এমন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করতে পারে।