আলোর মনি রিপোর্ট>> লালমনিরহাটে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা সদস্য, সাবেক সাংসদ প্রয়াত জননেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন-এঁর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মৃতিচারণ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় লালমনিরহাটের সাপটানা বাজারস্থ পাট গুদাম প্রাঙ্গণে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন পরিষদের আয়োজনে এ স্মৃতিচারণ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
স্মৃতিচারণে বেগম কামরুন নেছা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ (অবঃ) আমিরুল হায়াত আহমেদ মুকুল-এঁর সভাপতিত্বে লালমনিরহাট জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ লুলু-এঁর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন পরিষদের সভাপতি ও প্রয়াতের পুত্র প্রফেসর হামিদুল হক মন্টু, রাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক, মোগলহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন, লালমনিরহাট রেল শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হাসান চৌধুরী, উন্নয়ন কর্মী সুপেন্দ্র নাথ দত্ত, রোটারিয়ান ফেরদৌসী বেগম বিউটি, প্রয়াতের নাতী ডাঃ আশিক মোস্তাকিন প্রশুন, লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন, লালমনিরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাড. নজরুল ইসলাম রাজু, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল হক পাটোয়ারী ভোলা, নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান দিলু প্রমুখ। সার্বিক তত্বাবধানে লালমনিরহাটের মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহকারী এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ফোরামের আহবায়ক সূফী মোহাম্মদ, সহযোগিতায় দীপক মন্ডল, মাসুদ রানা রাশেদ, হেলাল হোসেন কবির। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ লালমনিরহাটের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সাধারণ মানুষজন উপস্থিত ছিলেন।
পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন-এঁর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন লালমনিরহাট নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক মাওঃ রফিকুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, আবুুল হোসেন ৪ এপ্রিল ১৯৩৫ সালে লালমনিরহাটের নামাটারি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কছিম উদ্দিন এবং মাতা আছমা খাতুন। ১৯৫৩ সালে তিনি লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (মডেল হাই স্কুল) থেকে প্রবেশিকা, জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং লালমনিরহাট কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।
আবুল হোসেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। লালমনিরহাট জেলার ভৌগোলিক সীমানা থেকে সংগঠকের মহান দায়িত্ব পালন করেছিলেন- লালমনিরহাট থানার আবুল হোসেন। ১৫ই মার্চ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে আবুল হোসেনকে আহবায়ক করে গড়ে তোলা হয় সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের লালমনিরহাট থানা শাখা। প্রথম অবস্থায় এ পরিষদের অন্যান্য সদস্যগণ ছিলেন কমরেড চিত্তরঞ্জন দেব, আবদুল কুদ্দুছ, কমরেড শামসুল হক, কাজী মোসলেম উদ্দিন, ছাত্রনেতা শহীদুল্লাহ প্রমুখ। স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের কন্ট্রোলরুম স্থাপিত হয় গোশালা রোড সংলগ্ন বর্তমান পাটোয়ারী ভবনে। কেন্দ্রীয় পরিষদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য তৎকালীন এম.পি.এ আবুল হোসেনের ব্যবহৃত টেলিফোন সেটটি (নং-১০) এখানে স্থানান্তরিত হয়। ২৩শে মার্চ প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে বিকেল ৩টায় খোর্দ্দ সাপটানার তৎকালীন জিন্নাহ মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশাল এ জনসভায় বক্তব্য রাখেন তৎকালীন এম.পি.এ আবুল হোসেন, কমরেড চিত্তরঞ্জন দেব, আবদুল কুদ্দুছ প্রমুখ। এ জনসভায় সর্বসম্মতিক্রমে জিন্নাহ মাঠের নাম পরিবর্তন করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাঠ নামকরণ করা হয়।
দেশ স্বাধীনের পর তিনি ১৯৭৩ সালে রংপুর-১৪ আসনের সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর, ১৯৮৬ সালে তিনি লালমনিরহাট-৩ আসনের সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তিনি লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং পর পর তিনবার চেম্বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি দু’বার এফবিসিসিআই এর পরিচালনা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সর্বোচ্চ পদ ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন।
আবুল হোসেন ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৮১বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.