অতিথি কলাম-
:: শৌর্য দীপ্ত :: পেশাগত কাজে বর্তমানে চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা হলেও লেখালেখি আমার প্যাশন। একটা সময় নিয়মিত কলাম লিখতাম। এখন শুধু সময়ের অভাবে লেখা হয়ে ওঠে না। কিন্তু এই সময়টাতে আমার আঙ্গুল আর ল্যাপটপের কি বোড নিশপিশ করছে লেখার জন্য। বিষয় আমার প্রিয় লালমনিরহাট আর সদর আসনের আসন্ন নির্বাচন। চায়ের কাপে এরই মধ্যে ঝড় উঠে গেছে। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নির্বাচন বয়কট করেছে এই খবরটা এখন বেশ পুরোনো। লেখার শুরুতে এই আসনের এমপিদের পরিচিতি দেয়াটা উচিত। এম পি এবং আবুল হোসেন এই দুটো শব্দ যেন এই আসনে সমাথক শব্দ হয়ে গেছে। আবুল হোসেন ১৯৭০ সালে গণপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৩ সালে এই আসনে এমপি হন। জনাব আবুল হোসেন ১৯৮৬ সালেও এরশাদ সরেকারের আমলে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর সরকার বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে আওয়ামীলীগ সংসদ থেকে পদত্যাগ করার পর প্রধান দুই দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি ছাড়া নির্বাচনে ১৯৮৮ সালে জাতীয় পাটি থেকে নির্বাচিত হন রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ভোলা। এরপর তিনি এরশাদ পতনের পর ১৯৯১ সালেও জাতীয় পাটি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের সেই কুখ্যাত ১৫ ফ্রেবুয়ারি নির্বাচনে বিএনপি থেকে এমপি হন আসাদুল হাবিব দুলু। এই সংসদের মেয়াদকাল ছিলো ২/৩ দিন। একই বছর জুনে আবার নির্বাচন হলে প্রথমবারের মতো বর্তমান জাতীয় পাটি চেয়ারমান জিএম কাদের এমপি হন। ২০০১ সালে এপি ছিলেন বিএন পির আসাদুল হাবিব দুলু। এরপর ২০০৮ সালে জোটগত ভাবে জাতীয় পাটি থেকে আবার এমপি হন জিএম কাদের। ২০১৪ সালে আওয়ামীলীগ থেকে এমপি হন ইঞ্জিনিয়ার আবু সালেহ আহমেদ দুলাল। তারপর ২০১৮ সালে জোটগত ভাবে জাতীয় পাটি থেকে এমপি হন জিএম কাদের। এই হচ্ছে মোটামুটি আগের সব এমপিদের বিবরন। এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে। ১৯৮৬ সালে এরশাদ শাসন আমলে লালমনিরহাট সদর আসনে আবির্ভাব ঘটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের তরুন ছাত্র নেতা আসাদুল হাবিব দুলুর। উচ্চাভিলাসী এই ছাত্রনেতার তখন প্রাথমিক লক্ষ্য ছিলো এমপি হবার। কিন্তু সেই সময়ে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পাটিতে তার যোগ্য পজিশন না থাকায় তিনি ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে অল্প কিছুসংখ্যক ভোটে পরাজিত হন। পরবর্তীকালে আসাদুল হাবিব দুলু বিএনপিতে যাগদান করেন। এরপর থেকে লালমনিরহাট সদর বা লালমনিরহাট- ৩ আসনে বিএনপি নয় আসাদুল হাবিব একজন বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেন। লালমনিরহাটের বিএনপি যে তিনি ওয়ানশ্যান শো এটা এলাকার সবাই জানেন এবং বোঝেন। ছোট্ট একটা উদাহরন দিয়ে বিষয়টা পরিস্কার করি। একটা পৌরসভা ও ৯ টি ইউনিয়ন নিয়ে সাজানো এই আসনে তিনি তার একটা আলাদা ইমেজ দিয়ে সংগঠনকে সাজিয়েছেন। পাড়া গ্রাম মহল্লা ওয়াডে বর্তমানে যে সব সুসজ্জিত বিএনপির অফিস দেখা যায় সূত্রমতে জানা যায় যে সে সকল পাটি অফিসের জমি নাকি আসাদুল হাবিব দুলুর নামে রেজিষ্ট্রি করা। জানা কোন কোন এলাকার পাটির অফিসের জমি তার কোন পাটির নেতা তার নামে সাফ কবলা করে দিয়েছেন।
এবার আসছি বর্তমান আওয়ামীলীগ থেকে মনোনিত প্রার্থী এডভোকেট মতিয়ার রহমান। যিনি এবার নৌকার মাঝি হয়েছেন। এ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানের রাজনৈতিক জীবন বার্ণাঢ্য। ১৯৫৮ সালে ভাষার মাসে জন্ম নেয়া এই রাজনীতিবিদ ১৯৭১ সালে ৭ম শ্রেনিতে থাকা অবস্থায় বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৭৯ সালে সভাপতি ছিলেন। ১৯৮১ সালে জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক ও ১৯৮৪ সালে সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লালমনিরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। বহুবার তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে ঘড়ছাড়া করা হয়েছিলো। তিনি বহুদিন থেকে তিনি কলুর বলদের মতো খেটেখুটে কলুর বলদের মতো অন্যদের জন্য ভোট করেই যাচ্ছেন। এবার তার সুযোগ এসেছে নিজের জন্য ভোট চাওয়ার। একটা সময় জোটের কারনে বারবার আওয়ামীলীগ থেকে মনোনায়ন বঞ্চিত প্রয়াত আওয়ামী লীগের নেতা আবু সাঈদ দুলালের মতোই তার জন্য সাধারন ভোটারদের মথ্যে এক ধরনের সিমপ্যাথি তৈরী হয়েছে। অনেকেই এটাও বলছেন যে একবারের জন্য হলেও এই নেতার নামের পাশে এম পি শব্দটা বসুক।
এবার একটা মোটামুটি ভোটারের বিশ্লেষনে আসি। গত কয়েক বছরের ভোটের বিশ্লেষনে দেখা যায় যায় যে বড়বাড়ী, কুলাঘাট, মহেন্দ্রনগর এবং পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নে বিএনপি তথা আসাদুল হাবিব দুলাল আধিপত্য বেশি। গোকুন্ডা, হারাটি,রাজপুর,আর খুনিয়াগাছ ইউনিয়নে নৌকা বা জোটের আধিপত্য বেশি। মোগলহাট ইউনিয়ন আর লালমনিরহাট পৌরসভার প্রায় ফিফটি ফিফটি ভোট দুইদিকের। এভাবেই বিগত নির্বাচনে ভোটের পার্থক্য দেখা দিয়েছে।
এবার আসি এবারের মানে ২০২৪ সালের বিএনপি বিহীন নির্বাচনের এই আসনের হাল হকিকত নিয়ে। এখন হঠাৎ করেই চায়ের দোকান গুলোতে একটা কথা ঘুড়ে বেরাচ্ছে আর তা হলো মনোনায়ন পেয়েও কি মতি মাঝি সমঝোতার রাজনীতিতে বলি হতে যাচ্ছেন কি না!
তাদের সবার প্রশ্নের এক কথার উত্তর হচ্ছে অবশ্যই না এবং একশোবার না। এটা বোঝার জন্য আপনাকে খুব বেশি জ্ঞানী হতে হবে না। বিষয়টা আরো পরিস্কার করে বলি। বর্তমান সিচুয়েশন অনুযায়ি ক্ষমতাসীন দলের জন্য একটা গ্রহনযোগ্য বিরোধীদল প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে একক ভাবে নির্বাচন করে জাতীয়পাটির পক্ষে ৩০/৪০টি আসন পাওয়া যে কতটা কষ্টের হবে সেটা আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি। একটি গ্রহনযোগ্য বিরোধীদলের জন্য জাতীয় পাটির যে কয়জন প্রভাবশালী তারকাখচিত মন্ত্রী দরকার তাদের কেউ একজন নিশ্চয়ই লালমনিরহাট সদর আসনের দাঁড়ানো লালমনিরহাটের প্রার্থী না।
এবার আমি এই লেখার ইনট্রোটা নিয়ে। কেন মতি মাঝি সাবধানে নৌকা চালাবে? প্রায় প্রতিটি বড় দলেই অভ্যন্তরীন কোন্দল থাকবে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। না থাকাটাই স্বাভাবিক। কথিত আছে যে লালমনিরহাটের আওয়ামলীগও নাকি পুব পশ্চিমে বিভক্ত। যা দেখা যায় না ছোঁয়া যায় না কিন্তু অনুভব করা যায়। দলীয় নিষেধাজ্ঞার ভয়ে এটা কেউ প্রকাশ্যে না থাকলেও এক্টিভিটি নাকি ভোটের সময় লক্ষ্য করা যায়। এটা থেকে মতি মাঝিকে সাবধান থাকতে হবে।
আরেকটা হচ্ছে আসাদুল হাবিব দুলু। এটাও কথিত আছে যে লালমনিরহাটের যে কোন নির্বাচনে আসাদুল হাবিব দুলু পিছনে থেকে কলকাঠি নাড়িয়ে থাকে। লালমনিরহাটের এটা সবাই বিশ্বাস করে যে রাজনীতিতে এই দুজন হচ্ছে দুজনের কঠিন প্রতিপক্ষ। তাই একজন প্রতিপক্ষ নিশ্চয়ই তার কঠিনতম প্রতিপেক্ষর বিজয় কামনা করবেন না। এলাকার বেশিরভাগ লোকজন এটাও ভাবে যে সারাদেশের রাজনীতি যাই হোক না কেন আসাদুল হাবিব দুলু গোপনে গোপনে তার লোকজনদেরকে কেন্দ্রে পাঠাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য।
যুদ্ধক্ষেত্রে আরো একটা কথা প্রচলিত আছে যে কখনোই প্রতিপক্ষকে ছোট করে দেখতে নাই। তাই আবারো বলি, মতি মাঝি, সাবধানে দাঁড় বাইয়ো। [শৌর্য দীপ্ত, লেখক, নাট্যকার ও নির্মাতা।]
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.