লালমনিরহাটে একই উঠানে মসজিদ ও মন্দির। এক পাশে ধূপকাঠি ও অন্য পাশে আতরের সুঘ্রাণ। এক পাশে উলুধ্বনি, অন্য পাশে চলছে জিকির। এভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যুগ যুগ ধরে চলছে পৃথক ২টি ধর্মীয় উপাসনালয়। একটি পুরান বাজার জামে মসজিদ, অপরটি কালীবাড়ী মন্দির।
লালমনিরহাট জেলা শহরের কালীবাড়ী এলাকায় একই খতিয়ানের একই দাগের জমির একই আঙ্গিনায় রয়েছে পুরান বাজার জামে মসজিদ ও কালীবাড়ি সার্বজনীন মন্দির। প্রতিদিন মসজিদে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করছেন আর মন্দিরে চলছে ভক্তদের পূজার্চনা। লালমনিরহাট জেলায় ধর্মীয় সম্প্রীতির একটি জ্বলন্ত উদাহরণ এটি।
কোনও প্রকার ঝগড়া, বাকবিতণ্ডা, অভিযোগ বা অনুযোগ ছাড়াই যুগের পর যুগ একই আঙ্গিনায় মসজিদ ও মন্দিরে বিরাজ করছে ধর্মীয় সম্প্রীতি। পৃথিবী জুড়ে চলমান সহিংসতা আর সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সংবাদের মধ্যে এমন দৃশ্য নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন ব্যাপার। একই আঙ্গিনায় মসজিদ ও মন্দির স্থাপন করেছে ধর্মীয় সম্প্রীতির বিরল দৃষ্টান্ত।
মন্দিরটিতে রয়েছে শ্রী শ্রী কালী মূর্তি, দেবাদিদেব মহাদেব, শ্রী শ্রী বাবা লোকনাথ। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় স্বাভাবিক নিয়মে চলছে পূজার্চনা। এখানে রয়েছে শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দির। প্রতিবছর জাঁকজমক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় শারদীয় দুর্গা পূজা। একই আঙ্গিনার পুরান বাজার জামে মসজিদটি লালমনিরহাট জেলার ঐতিহ্যবাহী একটি মসজিদ। এখানে নামাজ আদায় করতে দূর দূরান্ত থেকেও মুসল্লিরা আসেন। ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে ওই মসজিদে সব সময় মুসল্লিদের ভীড় থাকে।
স্থানীয়রা বলছেন, কালীবাড়ী মন্দিরটি প্রায় ২০০বছর পুরনো। তৎকালীন মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীরা ওই মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পূজার্চনা করতেন। তারা দেশ ছেড়ে চলে গেলেও মন্দিরটি থেকে যায় অক্ষত। পরবর্তীতে অবকাঠামোগত কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর এই আঙ্গিনায় গড়ে উঠে একটি জামে মসজিদ। নাম দেওয়া হয় পুরান বাজার জামে মসজিদ। পরে, মুসল্লিদের সহযোগিতায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে মসজিদের অবকাঠামোতে। এক সময় এলাকাটি হয়ে উঠে নয়নাভিরাম।
পুরান বাজার জামে মসজিদের সভাপতি আমিনুর হায়াত আহমেদ বকুল বলেন, একই আঙ্গিনায় মসজিদ ও মন্দির ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত। আর এই সম্প্রীতির চিত্র স্বচক্ষে দেখার জন্য প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। অনেক সময় স্থানীয়দের কাছ থেকে দর্শনার্থীরা ঐতিহ্যবাহী ওই মসজিদ ও মন্দির সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান।
পুরান বাজার জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব খোরশেদ আহমেদ দুলাল বলেন, যুগের পর যুগ একই আঙ্গিনায় একই সঙ্গে মুসলিম ও হিন্দুরা নিজ নিজ ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে আসছেন। কিন্তু, কোনও দিনই কোনো ধরনের সমস্যা বা রেষারেষি হয়নি। আমরা উভয় ধর্মের মানুষ এখানে হাসি মুখে থাকি, ধর্ম পালন করি।
পুরান বাজার জামে মসজিদের পেশ ঈমাম মাওঃ মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, মসজিদে আজান ও নামাজের সময় কোনও দিন কোনও সমস্যায় পড়তে হয় না। এ সময়টাতে মন্দিরে পূজার্চনা হলেও কোনো ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজানো থেকে বিরত থাকেন তারা।
কালীবাড়ী মন্দিরের সভাপতি ও প্রধান পুরোহিত শংকর চক্রবর্তী জানান, মন্দিরে নিয়মিত পূজার্চনা হয়। আজান ও নামাজের সময় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়। ধর্মীয় সম্প্রীতির বিঘ্ন ঘটে এমন অবস্থার মধ্যে আমাকে কোনদিনই পড়তে হয়নি। বরং স্থানীয় মুসল্লিদের সহযোগিতা পেয়ে আসছি।