হেলাল হোসেন কবির, কবি:
আমার নাম খুঁজে পাবেন না
পেলেও সেই নাম চিনতে পাবেন না,
আমার একক কোন নাম নেই,
দয়া করে আমাকে এই নামে ডাকুন-
আমি সাগর-রুনির রক্তাক্ত দেয়াল,
আমি তনু-নাজিয়াদের বেঁচে থাকার আকুতি,
আমি গুম হয়ে যাওয়া ঘরে না ফেরা সন্তান,
আমি বিশ্বজিৎ আর অভিজিতের শেষ চিৎকার,
আমি পরিবহনের ধর্ষিতার আর্ত্মনাথ
আমি ফেলানীর ঝুলে থাকা কাঁটাতার।
চিনতে কষ্ট হচ্ছে তাই না?
দেখুন! আমার কিছু করার নেই,
তার পরেও
দয়া করে আমাকে এই নামে ডাকুন-
এখন আমি সাংবাদিক নির্যাতনের কালো হাত;
এখন আমি ক্যাসিনো আর পাপিয়া সঙ্গী,
এখন আমি হলি আর্টিজানের লেগে থাকা রক্ত,
এখন আমি মানব পাচারকারী এমপির লোক,
এখন আমি কাঁটাতারের পাশে নিথর দেহ।
একটু ভালো করে দেখুন চিনতে পারবেন!
দয়া করে আমাকে এই নামে ডাকুন-
আমি ডেসটিনি আর হলমার্ক,
আমি সেই চুরি যাওয়া ব্যাংকের রিজার্ভ,
আমি পিলখানার ছুটে যাওয়া বুলেট,
আমি নির্বাচনের রাতের মধ্যরাত,
আমি সেই দশ ট্রাক অস্ত্রের অদৃশ্য শক্তি,
আমি বাংলা ভাই আর খুনি শিখদারের আমানত।
বুদ্ধিমান এই আমাকে চিনতে পেরেছেন?
আমি যাই হোক কিন্তু পরগাছা নই,
পরগাছা হলে টুপটাপ করে পড়তাম
পারমাণুবিক রক্ত হয়ে;
দয়া করে আমাকে এই নামে ডাকুন-
আমি ডুবন্ত লঞ্চের ভেসে আসা লাশ;
আমি বন্যার অসহায়দের বাজেট মার,
আমি মহামারি করোনার চাউল চোর,
আমি পোশাক কারখানার আগুন লাগানো সৈনিক,
আমি রানা প্লাজার চাপা পড়া নিরব কান্না,
আমি জীবন্ত রোহিঙ্গার হেটে আসা পা,
আমি হতদরিদ্র প্রশ্ন না পাওয়া সেই ছাত্র।
আমাকে চিনতে পেড়েছেন?
এই আমি, বঙ্গবসাগরের উপর নতুন চিত্রকার;
দয়া করে আমাকে এই নামে ডাকুন-
এখন আমি অকারণে রিমান্ডের চাবুক,
এখন আমি হরতাল অবরোধের জ্বলন্ত বোমা,
এখন আমি গণজাগরণ মঞ্চের আওয়াজ বন্ধের পরিকল্পনাকারী,
এখন আমি সাঁওতাল পাড়া রামু আর পাহাড়ের ব্যথিত স্মৃতি,
এখন আমি রাষ্ট্রপতির কাছে সাধারণ ক্ষমা পাওয়া কিলার।
আমি তো শহিদ মিনারের রক্তাক্ত ইট,
আমি তো লাল সবুজের কফিনের শেষ নিঃশ্বাস।
আমি হলাম স্বাধীন দেশের পরাধীন জনগণ,
আমি হলাম লজ্জিত্ব বিবেক,
আমি হলাম পিছনের ক্ষমতা।
তারিখঃ ০২/০৭/২০২০ইং
বৃহস্পতিবার