আমার গ্রাম, আমার শহর:
:: মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ :: শৈশব থেকেই আমার গ্রাম ফুলগাছ দেখে আসছি। ফুলগাছ গ্রামের মানুষের আয় বলতেই কৃষিকাজ। আমাদের গ্রামে ছিল গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু। মাছে ভাতে বাঙালি। মনে ছিল আনন্দ আর উল্লাস, বুকে ছিল বলও! গ্রামের প্রত্যেকেই খেলাধুলায়ও মেতেছি। সেই সোনালী অতীত অনেকটাই ক্ষীণ বলা চলে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতিহারে বলা হয়েছিল- নির্বাচিত হলে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ হবে। কিন্তু তা লাল ফিতায় বন্দী।
আমি ফুলগাছ গ্রামে বেড়ে উঠেছি। বর্তমানে শহরের আধুনিক সুবিধা যে রকম, সে রকম সুযোগ সুবিধা যেমন- ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, ইন্টারনেট, যাতায়াত ব্যবস্থা, উন্নত চিকিৎসা, স্কুল, কলেজের শিক্ষা-দীক্ষা উন্নত করা হলে তাতে মানুষজন শহরের কথা মাথায় আনবে না। আবার আমরা যারা গাঁও গ্রামে বসবাস, সুযোগ সুবিধা পেয়েছি, তাও ফুলগাছ গ্রাম এলাকায় পৌঁছেনি। লালমনিরহাটের একটি গ্রামের নাম ফুলগাছ। এই গ্রামটিতে দুটি ওয়ার্ড তার মধ্যে আটারোটি মসজিদ, ছয়টি মন্দির, দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি মাদ্রাসা ও দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি রেলপথ, অনেকগুলো মেঠোপথ (কাচা) ও পাকা রাস্তা রয়েছে।
এখানকার অধিকাংশ পরিবারের লোকজন হতদরিদ্র কষ্টে দিন কাটে। পেশায় চাকুরীজীবি, দিনমজুর ও সাধারণ কৃষক। ‘যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা’। বলা বাহুল্য ফুলগাছ গ্রামে সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌচ্ছায়নি। রাতে সাব্রীখানা ও রত্নাই নদী থেকে ফুলগাছ নামক গ্রামটিকে দেখতে জ্যোৎস্না রাতের তারার মতো মনে হয়।
এখানে নেই কোনো হাট, রেস্তোরাঁ, ভালো কোনো চিকিৎসা সেবা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
গাঁও গ্রামে কখনো গেলে দেখা মেলে আঁকা বাঁকা মেঠোপথ। যদিও কথা ছিল মেঠোপথ হবে পাকা রাস্তায় রূপান্তর আর সংযোগ হবে উপজেলা সদরে।
গাঁও গ্রামের শিক্ষার্থীদের উন্নত পরিবেশে পড়ালেখার সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে। উন্নত, আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি নিশ্চিত করা হবে। সুস্থ দেহ, সুস্থ মন ধরে রাখতে বিনোদন এবং খেলাধুলার সু-ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি পরিবারে একটি সন্তানকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তিও বাদ পড়বে না। আমরাও চাই ইতিবাচক উন্নতি। তার মধ্যে গ্রামকে শহরে ন্যায় রূপান্তরিত করা হোক। আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা আমাদের গ্রামে।
ফুলগাছে দুটি নদী (রত্নাই ও সাব্রীখানা)। গাঁও গ্রামের পরিবেশ, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাকারী জীববৈচিত্র্য, ইটের তৈরি ইমারত যেন শহর গড়তে গিয়ে ধ্বংস না হয়। গাঁও গ্রামে পৌঁছে যাবে নানা সুবিধা। গ্রামের মানুষও শহরের তুলনায় যেন বঞ্চিত না হয়।
আমার গ্রাম ফুলগাছ দূষণমুক্ত পরিবেশ ঐতিহ্যে সমন্বয়ে ফিরে পাক প্রকৃতি। আমরা যেন সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষ হই।
লেখক: সাংবাদিক ও সম্পাদক, লালমনিরহাট।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.